অবশেষে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে অর্থ ছাড় করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রকল্পটির আওতায় তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল ছাড়াও পূর্ব প্রান্তে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭০ কোটি ৫৯ ডলার বা ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা চীনের। প্রথম কিস্তিতে দুই কোটি ডলার ছাড় করেছে চীন। এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোঃ কবির আহমেদ বলেন, ঋণের অর্থ ছাড় হওয়ায় দ্রুত প্রকল্প কাজ এগিয়ে নেওয়া যাবে। আশা করা যায়, ২০২০ সালের মধ্যেই এটি নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় কাফকো-পতেঙ্গা পয়েন্টে টানেলটি নির্মাণ করা হবে। এটি নদীর পশ্চিম পাশে সি বিচের নেভাল গেট পয়েন্ট থেকে নদীর ১৫০ ফুট নিচ দিয়ে অপর পাশে গিয়ে উঠবে। দক্ষিণ পাড় থেকে সংযোগ সড়ক দিয়ে টানেলটি বাঁশখালী সড়কে গিয়ে মিলবে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিসিসিসি) সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৫ সালের জুনে। গত বছর অক্টোবরে চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তিও সই করা হয়। তবে এরপরও আটকে ছিল ঋণের অর্থ ছাড়। গত বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী টানেলের অর্থ ছাড় করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। জানা গেছে, প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭০ কোটি ৫৯ ডলার বা ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা চীনের। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয় কর্ণফুলী টানেল। পরের মাসেই এর নির্মাণকাজ উদ্বোধনের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে তা পিছিয়ে ২০১৬ সালের মার্চে কাজ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে অর্থায়ন না পাওয়ায় এত দিন প্রকল্পের কাজ ঝুলে ছিল। একই সাথে জমি অধিগ্রহণের কাজও চলছিল ধীরগতিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে চীনের সিসিসিসি ও হংকংয়ের ওভিই অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস। আর টানেল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে চীন সফরকালে দেশটির সরকারকে অনুরোধ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চীন সরকার টানেল নির্মাণে সম্মত হয়। এজন্য চীনের সিসিসিসির সঙ্গে গত বছর জুনে ৭০ কোটি ৫৯ লাখ ডলার বা পাঁচ হাজার ৫০৫ কোটি টাকার নির্মাণ চুক্তি সই হয়।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের ৮৫ শতাংশ চায়না এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। এজন্য ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হয় চীন সরকারের কাছে। পরে নির্মাণ ব্যয়ের শতভাগই দিতে সম্মত হয় এক্সিম ব্যাংক। এক্ষেত্রে ২০১৫ সালের মার্চে সংশোধিত প্রস্তাব দেওয়া হয়। গত অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকালে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। চীনের ঋণে দুই শতাংশ সুদ হার ছাড়াও দশমিক ২০ শতাংশ কমিটমেন্ট চার্জ ও দশমিক ২০ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট চার্জ দিতে হবে। ঋণ ছাড় করতে যত দেরি হবে কমিটমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট চার্জ তত বাড়তে থাকবে। আর পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে পুরো ঋণ। এ ঋণের গ্রান্ট এলিমেন্ট ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। সূত্র জানায়, নির্মাণ ব্যয়ের বাইরে টানেলের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা লাগবে বলে মনে করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আর টানেল নির্মাণকালীন চার বছরে সুদ বাবদ ৪২৯ কোটি টাকা লাগবে। গাড়ি কেনা, পরামর্শক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় তো আছেই। এছাড়া প্রকল্পটির জন্য ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার কেনা, চট্টগ্রামে প্রকল্প অফিস নির্মাণ ইত্যাদি কাজ করবে সিসিসিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন