শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপির কর্মপরিকল্পনা ঠিক হচ্ছে চলতি সপ্তাহে

প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : আগামীর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসছে। আজ নীতি-নির্ধাকরদের নিয়ে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। এটি হবে নতুন বছরে প্রথম বৈঠক। দলীয় সূত্রমতে, এই বৈঠক থেকে চলতি বছরের রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে- দলের কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ, চেয়ারপার্সন নির্বাচন, মাহাসচিবকে ভারমুক্ত করা, ২০ দলীয় জোটের পরিধি বৃদ্ধি, ইউপি নির্বাচন ও আগামীর আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে দলের অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। ফলে সংগঠন সামনে এগুনো যায়নি। নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকটাই হতাশা নেমে এসেছে। তবে শিগগিরই সে হতাশা কেটে যাবে। নতুন বছরে আমাদের লক্ষ্য, গতি এবং কর্মপরিকল্পনা কি হবে সে ব্যাপারে নীতি-নির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হবে, সিদ্ধান্ত আসবে। পুনর্গঠনের সাথে সম্পৃক্ত মোহাম্মদ শাহজাহানের কথাও একই।     
ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল : বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুসারেও প্রতি তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু চেষ্টা করেও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিধান মানা সম্ভব হয়নি। ফলে দলটির চতুর্থ কাউন্সিলের ১৬ বছর পর ৫ম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ। এখন ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের চাপ বাড়ছে। সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঝুলন্ত সিদ্ধান্তকে চূড়ান্তরূপ দিতে হবে শিগগিরই। রাজনৈতিক বাস্তবতা ও কর্মীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে দলের হাইকমান্ড শর্ট টাইমের মধ্যে কাউন্সিল করার পক্ষে। এ কাজটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলতি শাসক দলের কাউন্সিলের আগে-পরেই বিএনপিও কাউন্সিল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে প্রায় অর্ধেক জেলার কমিটি গঠিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি কমিটি হবে বলে তারা আশাবাদী। সব দিক বিবেচনায় রেখে কবে কাউন্সিল করা যায় সে সিদ্ধান্ত আসবে স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক থেকে। আলোচনা রয়েছে, হতে পারে তা মার্চেই। কাউন্সিলেই দলের মহাসচিব নির্ধারণ করা হবে। ভারমুক্ত হবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে কাউন্সিলেল দিনক্ষণ নির্ধারিত হলেই হবে চেয়ারপার্সন নির্বাচন। ২০০৮ সালের কাউন্সিলের আগে চেয়ারপার্সন নির্বাচনে ওই পদে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। দলীয় চেয়ারপার্সনকে সাংগঠনিক সর্বময় সিদ্ধান্তকর্তা হিসেবে কাউন্সিলের প্রস্তাব করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।  
জাতীয় স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন : বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৯। এর মধ্যে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ড. আর এ গণি এবং আদালতের রায়ে মৃত্যুদ-ে দ-িত হয়েছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। বয়সেরভারে নূজ্ব এবং গুরুতর অসুস্থতায় অনেকটাই এই কমিটি থেকে সরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এম শামসুল ইসলাম, বেগম সারোয়ারি রহমান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তাদের মতামত আমলে নিলে ১৯ সদস্যের কমিটি দাঁড়াবে ১১-তে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে দলের ৮/৯ জনকে। এ তালিকায় রয়েছেন- মির্জা ফখরুল ইসলাম, সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নাম। বর্তমান নির্বাহী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব থেকে অন্তত একজন এই কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন বলে নির্ভারযোগ্য সূত্রে দাবি।
২০ দলীয় জোটের কলেবর বৃদ্ধি : ১৯৯৯ সালে জোটের রাজনীতি শুরু করে বিএনপি। ওই সময় চার দলীয় জোট গঠিত হয়। যুগের চাহিদা এবং বাস্তবতায় চার দলীয় জোট এখন ২০ দলে গড়িয়েছে। এর আগে ১৮ দলীয় জোট ছিল। জোটের কলেবর বাড়লেও ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে শরিক দলের নেতৃত্বে। ইতোমধ্যে দুই দফায় শরিকদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে। টানাপোড়েন পরিবেশ কাটানোর উদ্যোগ অব্যাহত আছে।
সূত্রমতে, রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের কলেবর আরেকদফায় বৃদ্ধি হচ্ছে। এ দফায় জোটে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ক্ষমতাসীন মহাজোটের এক শরিক, বাম ঘরানার কয়েকটি রাজনৈতিক দল। আছে ডানপন্থী সংগঠনও। আলোচনা হচ্ছে তবে তাদের নেয়া-না নেয়ার হিসাব-নিকাশ করছে বিএনপি। এই আলোচনাও হতে পারে আগামীর বৈঠকে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : মার্চের শেষেরদিকে দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে এই কমিটি। সদ্য অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় প্রার্থীদের বেশিরভাগই বিজয়ী হতে পারেননি। তবে নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ সেটা প্রমাণে সক্ষম হয়েছে বিএনপি। তার সুফল পেতেও শুরু করেছে। গত বুধবার রাতে বিম্বে প্রভাবশালী এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ২৪ দেশের কূটনীতিকের কাছে ওই নির্বাচনে সরকার দলীয়দের জবর-দখল, তা-ব, জনপ্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতসহ কারচুপির দালিলিক তথ্যচিত্র দিয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোও যে একদলীয় হবে সে দাবির পক্ষের নানামুখী যুক্তি তোলে ধরছেন দাতাদের কাছে। এসব কাজের ফলাফল বিএনপির অনকূলে যাচ্ছে বলে মনে করে নেতৃবৃন্দ।  
জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিলো। এর আগে লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে গত ২৫ নভেম্বর স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। তবে এসব বৈঠক থেকে পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন