ইনকিলাব ডেস্ক : ওবামা-পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জের বড় একটি অংশই আবর্তিত হবে অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে। সবচেয়ে বড় কথা, পররাষ্ট্রনীতিতে এই পুরো চ্যালেঞ্জটাই সামলাতে হবে তাকে। দেশটির ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এমন মন্তব্য করে বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে একজন তো নির্বাচিত হবেনই। এ জন্যই পররাষ্ট্রনীতিতে ভবিষ্যৎ এই প্রেসিডেন্টের চ্যালেঞ্জ কী হতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন ডিরেক্টর জেমস ক্ল্যাপার। এতেই ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের জন্য এই সত্যটা বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলছেন, একটি অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হোয়াইট হাউসের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে। কেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে, তার খ-চিত্রও তুলে ধরেছেন ক্ল্যাপার। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের জন্য মোটেই সুখকর হবে না। এর মধ্যে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে মস্কো বড় একটি কূটনৈতিক চালও দিয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, সিরিয়ায় যা করার, তা এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে রাশিয়া। রাশিয়াবিরোধীদের মতে, মস্কো বাশার আল-আসাদকে সহায়তা করতেই এসেছিল। আর তা করেছেও। এ জন্য পুতিন সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার মানে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের হুমকিকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের আসল কাজ শেষ করা রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে পাল্লা দেয়া নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে। নতুন করে সৃষ্টি হওয়া এসব চ্যালেঞ্জ ছাড়াও ইরাক-সিরিয়ায় আইএস সমস্যা এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন ঐতিহাসিক সমস্যা তো আছেই। দুবারের প্রেসিডেন্ট ওবামা যেসব বিষয়ে সমাধান দিতে পারেননি, সেগুলো নতুন প্রেসিডেন্টকেই করতে হবে, যা খুব একটা সহজ কাজ হবে না। বিগত ৯ মাসে ১০ বারের বেশি বোমা হামলা চালানো হয়েছে তুরস্কে। এতে নিহত হয়েছে ২০০ জনের বেশি। এসব হামলার জন্য সরকার সন্দেহ করছে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। আবার অনেকে বলছেন, এসব হামলার জন্য ইসলামিক স্টেটই (আইএস) দায়ী। সঙ্গত কারণেই দেশটির রাজনীতিতে উথাল-পাথাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তুরস্ক সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে সিরিয়ার কুর্দিদের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ করার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সেটা করা ওয়াশিংটনের জন্য কখনই সহজ হবে না। কারণ সিরিয়ায় আইএসবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র এই কুর্দিরাই। এ পরিস্থিতিতে নতুন প্রেসিডেন্টকে ওয়াশিংটনের প্রকৃত স্বার্থ কী, তা বিবেচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অপরদিকে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই অস্থিতিশীলতা লিবিয়ার পিছু ছাড়েনি। রাজনৈতিক যেসব পক্ষ গণতন্ত্রের কথা বলে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়েছিল, তারাই এখন একে অপরের শত্রু। ঠিক এই অবস্থায় লিবিয়ায় ঘাঁটি গেড়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস। লিবিয়ায় ঘাঁটি বানিয়ে প্রতিবেশী দেশ তিউনিসিয়াকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে তারা। এর প্রমাণ হিসেবে ২০১৫ সালের মার্চ এবং জুন মাসে তিউনিসিয়ায় দুই দফা হামলা চালায় আইএস। এতে মোট ৫৮ জন প্রাণ হারায়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লিবিয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ভূমিকার সমালোচনা করেই নিশ্চুপ রয়েছেন। কিন্তু ওবামার উত্তরসূরি এমন নিশ্চুপ থেকে লিবিয়ায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারবেন না, যা নিশ্চিতভাবেই বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া গত কয়েক সপ্তাহে ইরান বেশ কয়েকবার পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ব্যালাস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ ধরনের পরীক্ষার নিন্দা জানালেও কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইরান পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করেনি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইরান চুক্তি অমান্য করেই এ ধরনের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার রাশিয়া বলছে, ইরান পরীক্ষা চালিয়ে পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করেনি। তাই ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের জন্য নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জ হবে ইরানকে দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা। দ্য ফেডারেলিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন