ক্ষমতায় ফিরে নির্মম জবাবদিহিতায় আনার প্রতিশ্রতি ইমরানের
পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য নিন্দা করেছেন এবং শাসকদেরকে দেশের ‘লুণ্ঠিত অর্থ’ দেশে ফিরিয়ে আনতে বলেছেন। বুধবার এক ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সমর্থকদের সম্বোধন করে ইমরান ক্ষমতাসীন শাসকদের জবাবদিহিতে আনার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, অতীতে এ শাসকরা আইনের হাত থেকে পালিয়ে গেলেও ভবিষ্যতে তারা সংবিধান ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ফল ভোগ করবে।
পিটিআই প্রধান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জনগণকে ত্যাগ স্বীকার করতে বলেছেন, তবে তার পরিবর্তে ‘আপনার লুট করা অর্থ বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে’ ত্যাগ স্বীকার করা উচিত। ইমরান প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের সমালোচনা করে বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে একটি চুক্তির পর শাহবাজ জাতিকে মুদ্রাস্ফীতির জন্য প্রস্তুত করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম একটি বড় সিদ্ধান্ত হবে, তারা অবশ্যই জাতিকে নিয়ে চিন্তিত হবে, সরকারকে তিনি সরকারি গাড়ির সংখ্যা হ্রাস এবং জমি বিক্রির পরিকল্পনা শেয়ার করে জনগণকে বোকা বানানো বন্ধের পরামর্শ দেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন যে, ‘সরকারের প্রসাধনী ব্যবস্থার দ্বারা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে না, কারণ এ সরকারের আমলে পাকিস্তান তার সরকারের মেয়াদের চেয়ে তিনগুণ বেশি মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছিল’। ‘জোট সরকার ১০ মাসের মধ্যে অর্থনীতি ঠিক করার দাবি করেছিল, কিন্তু তারা আসলে তা ধ্বংস করেছে। এমনকি গত ১০ মাসে দেশে যা ঘটেছে তা শত্রæরাও করতে পারেনি’, তিনি যোগ করেন।
পিটিআই প্রধান দেশের সকল অন্যায়ের জন্য বর্তমান শাসক ও তাদের ‘সুযোগদাতাদের’ দায়ী করেছেন। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতায় আসার পর তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের দুর্নীতির মামলা বাতিল করা।
পাঞ্জাব এবং খাইবার-পাখতুনখোয়া (কে-পি) নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ইমরান খান যদি বিধানসভাগুলো ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন না হয়, সংবিধান রক্ষায় জনসাধারণকে বেরিয়ে আসার আহŸান জানান।
তিনি যোগ করেন, ‘যদি ৯০ দিন পর নির্বাচন বিলম্বিত হয়, তাহলে জাতিকে সংবিধান রক্ষার জন্য বাইরে পা রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য দেশে আইনের শাসন এবং সংবিধানের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জঙ্গলের আইন নয়’। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ৯০ দিন পর তত্ত¡াবধায়ক সরকার থাকতে পারে না।
নির্বাচনের তফসিল জারি না করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজার সমালোচনাকালে তিনি ধারা ৬ [রাষ্ট্রদ্রোহিতা] প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন। একই সময়ে, পিটিআই প্রধান তার দলের কর্মী ও সমর্থকদের পার্টির ‘জেল ভরো’ [আদালতে গ্রেফতার] আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, যা বুধবার শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আন্দোলন শুরুর পর জাতি নির্ভীক হয়ে পড়েছে।
‘এটি ভয়ের শিকল ভাঙার জন্য শুরু করা হয়েছে এবং জাতি এখন একটি বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত’ তিনি বলেন। তিনি গ্রেফতারের জন্য লাহোরের জনগণ এবং পিটিআই সিনিয়র নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) অফিসের বাইরে বিক্ষোভ সংক্রান্ত মামলায় প্রতিরক্ষামূলক জামিন চেয়ে দুই দিন আগে লাহোর হাইকোর্টে (এলএইচসি) হাজির হওয়ার সময় ইমরান সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) এর চালু করা ‘জেল ভরো তাহরিক’-এর প্রথম দিন ‘শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ কমপক্ষে ৮১ জন দলের সমর্থক’ গ্রেফতারবরণ করেছেন। বুধবার তারা দ্য মলের চ্যারিং ক্রসে গ্রেফতারের পর কারাগারে যান। পার্টির সমর্থকরা ডা. ইয়াসমিন রশিদের নেতৃত্বে একটি কনভয়ে চলে যায় এবং জেল রোড হয়ে চ্যারিং ক্রসে পৌঁছে, যেখানে তারা অবস্থান নিয়ে ফেডারেল এবং পাঞ্জাব সরকারের বিরুদ্ধে সেøাগান দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওগুলিতে প্রচুর সংখ্যক পিটিআই কর্মীকে দেখা গেছে যারা পাঞ্জাব বিধানসভার সামনে অবস্থানের জায়গায় ভিড় করেন। পিটিআই কর্মীরা চ্যারিং ক্রসে একটি ‘ডামি জেল’ নিয়ে আসেন। কিছু কর্মী খাঁচার ভেতরে দাঁড়িয়ে আন্দোলনের বিষয়ে দলীয় নীতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেন।
একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে একটি মেগাফোনের সাহায্যে পিটিআই কর্মীদের প্রিজন ভ্যানে উঠতে বলতেও দেখা গেছে, যদি তারা স্বেচ্ছায় ভেতরে ঢুকতে চায়। পিটিআই কর্মীদের শেয়ার করা আরেকটি ভিডিওতে পিটিআই ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মেহমুদ কুরেশি, মহাসচিব আসাদ উমর, প্রাক্তন গভর্নর ওমর সরফরাজ চিমাকে দেখানো হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী মুরাদ রাস, সিনেটর আজম স্বাতী এবং সিনেটর ওয়ালিদ ইকবাল একটি জেল ভ্যানে বসে থাকার পর তারা জোরপূর্বক পথ দিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে। ফিরোজপুর রোডে প্রিজন ভ্যানের ওপরে কয়েকজন পিটিআই কর্মীকে কারাগারের দিকে যেতে দেখা গেছে।
টুইটারে নিয়ে পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, শাহ মেহমুদ কুরেশি, আসাদ উমর এবং এজাজ চৌধুরীসহ অনেক পিটিআই নেতা ও কর্মী পুলিশের কাছে গ্রেফতারবরণ করেছেন’। তিনি দাবি করেছেন যে, দ্য মলে ডিউটিতে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ‘মানুষের সমুদ্র আতঙ্ক তৈরি করেছে’।
গ্রেফতারের সংখ্যা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। পিটিআই মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরী দাবি করেছেন যে, ৫০০ থেকে ৭০০ দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে. আর পাঞ্জাব সরকারকে পুলিশ জানিয়েছে যে, অন্তত ৮১ জন পিটিআই সদস্য কোট গারদে বন্দি রয়েছেন। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও ডন অনলাইন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন