অর্থনৈতিক প্রশ্নে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সঙ্গে শক্ত কূটনৈতিক অবস্থান অনুসরণের ইঙ্গিত দিয়েছেন নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। মঙ্গলবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই- কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দৃঢ় অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আরও কার্যকর সম্পর্ক চর্চা করবে বাংলাদেশ।
গত ৭ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এ কে আবদুল মোমেন। দায়িত্ব নেওয়ার একদিন পর ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোমেন বলেন, আমার মূল লক্ষ্য হলো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণ করা, বিশেষ করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে।' ভারতের সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বক্তব্যের মাধ্যমে মোমেন ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন ভারত ও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুফল ঘরে তুলতে চাইছে বাংলাদেশ।
মোমেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে ভারত ও চীনের মতো প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধন অক্ষুণœ রাখতে কার্যকর সম্পর্ক চর্চারও চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসের আর কোনও সময়েই ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এত ভালো ছিল না। আমরা এটি ধরে রাখার পাশাপাশি তা অন্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাবো। একই সময়ে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্কের ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। তিনি জানান, চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে এরইমধ্যে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
৭১ বছর বয়সী মোমেন আরও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ‘দৃঢ় অংশীদারিত্বের’ ভিত্তিতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তাকে অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সহযোগী হিসেবে কাজ করারও নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মোমেন পিটিআইকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে কার্যকর ভূমিকার রাখবে তার কার্যালয়। এছাড়া সরকারের উচ্চাকাঙ্খী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বিদেশি সহায়তা আনার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে তার দফতর।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসের আর কোনও সময়েই ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এত ভালো ছিল না। আমরা এটি ধরে রাখার পাশাপাশি তা অন্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাবো। একই সময়ে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্কের ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। তিনি জানান, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে দৃঢ় হয়েছে। উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। ওই সফরে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সময়ে মোদি বলেছিলেন, স্থল ও উপকূলীয় সীমানা জটিলতার মতো ইস্যুর সমাধানের মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘স্বর্ণালী অধ্যায়’ পার করছে। ২০১৮ সালে দুই দেশ বহু যৌথ উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করেছে। এরমধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা রেল লাইন নির্মাণ এবং কুলাউড়া ও শাহবাজপুর রেললাইন পুননির্মাণ।
বড় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে একে আবদুল মোমেন রোহিঙ্গা সংকটের কথা উল্লেখ করেন। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে বর্ণনা করে। এটিকে অর্থনৈতিক ইস্যু বললেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশিদের যুক্ত করে এই সংকট সমাধান না করা গেলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এই ইস্যু সমাধান করা দরকার। অন্যথায় তা পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন