মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯শ’ ৯৪ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩শ’ ৫৬ এবং নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬শ’ ৩৮ জন। ৩৩টি ওয়ার্ডের ১শ’ ৯৬টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ১শ’ ৭৭টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২শ’ ১১ জন ও ১১টি সংরক্ষিত আসনে ৬৫ জন নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
সবার দৃষ্টি এখন রসিক নির্বাচনের দিকে। প্রচার-প্রচারণা এবং অপেক্ষার পালা শেষ। আজ বৃহস্পতিবার রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন। সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর ২০১২ সালে প্রথম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এটা দ্বিতীয় দফায় ভোট হলেও এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে মেয়র প্রার্থীরা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার বিকেলের মধ্যেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি প্রার্থী দেয়ায় নগরজুড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ। চারিদিকে তৈরী হয়েছে উৎসব মুখর পরিবেশ। উৎসবের এই ভোটে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য নেয়া হয়েছে নজির বিহীন বাড়তি নিরাপত্তা। চার স্তরের নিরাপত্তাসহ কাজ করছেন ২১ প্লাটুন বিজিবি। সিটির ৩৩টি ওয়ার্ডে ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ছাড়া আরো ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ১টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই একজন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবে। কেন্দ্রে থাকবে একজন প্রিজাইডিং অফিসার, একজন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, দশ জন পুলিশ ও ১৪ জন আনসার সদস্য। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে কঠোর ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন তারা। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ছাড়াও গোটা নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে প্রশাসন। নগর জুড়ে তৈরী করা হয়েছে ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সকল প্রকার নাশকতা এড়াতে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাতে শুরু করে এবং গতকাল রাত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই বহিরাগত দলীয় নেতাকর্মীদের নগর ছাড়ার নির্দেনার পাশাপাশি নগরীর সব হোটেল-মোটেলগুলোকে বন্ধ রেখে সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। গতকাল সকাল থেকে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি টহল নামানো হয় নগরীতে। শহরের প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোষ্ট বসিয়ে প্রতিটি বাস, ট্রাক এবং অটোরিক্সা থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশী করা হয়। ইতিমধ্যে প্রায় ৩ শতাধিক নম্বর বিহীন মোটর সাইকেল আটক করা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ৩দিন আগে থেকেই অভিযানে নেমেছে পুলিশ। নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে গত মঙ্গলবার রাত থেকেই। মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই্য বহিরাগতদের নগর ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে। হোটেল-মোটেলগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে নির্বিঘেœ যেতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। প্রচারণা শেষে বহিরাগত নেতৃবৃন্দও নির্বাচনী এলাকা ছেড়েছেন মঙ্গলবার রাতেই। ভোটের পরিবেশ নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা বেশ আগে থেকেই নানা অভিযোগ করে আসছেন। সে কারনেও কেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নগরীতে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার শঙ্কা নেই। তিনি ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহবান জানান।
কমিশন জানিয়েছে, ২০১২ সালে প্রথম সিটির নির্বাচনে ৪টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন হয়েছিল। বাকি কেন্দ্রগুলোতে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহন হয়েছে। এবার রংপুর বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহনের প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন। তবে কোন প্রকার যান্ত্রিক ত্রæটি হলে স্বভাবিক পদ্ধতিতে ভোট গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লায়ন্স স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র ও বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রে সিসি টিভি স্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল মাঠে নির্বাচনী উপকরণ বিতরণের আগে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা, আর্ম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সাথে কথা বলেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহনযোগ্য। কোন কর্মকর্তা, পুলিশ বা আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি বলেন, আপনারা নিরপত্তাহীনতায় ভুগবেন না। আমরা প্রশাসনকে এমনভাবে সাজিয়েছি যে, ফোন করা মাত্রই ৫ মিনিটের মধ্যে হয় পুলিশ, না হয় র্যাব অথবা বিজিবি সদস্যরা আপনাদের কাছে পৌছবে। সুতরাং কারো হুমকিতে নতজানু হবেন না।
একই অনুষ্ঠানে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্ণিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার সবার উদ্দেশ্যে বলেন, এটি একটি চ্যালেঞ্জ এর নির্বাচন। আমরা অবাধ সুষ্টু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।
নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিরাপত্তার কড়াকড়ি আরও বেশি। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ১শ’ ৯৩টি কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে ভোট। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১শ’ ৮টি কেন্দ্রকে। কেন্দ্রগুলোর আশপাশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ১০ জন করে পুলিশ ও ১৪ জন করে আনসার সদস্য থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রে আট জন পুলিশ ও ১৪ জন আনসার সদস্য থাকবে। এ ছাড়া প্রতি ওয়ার্ডে থাকবে র্যাবের একটি করে দল।
উল্লেখ্য, আজকের এই নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২শ’ ১১ জন ও ১১টি সংরক্ষিত আসনে ৬৫ জন নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের ১শ’ ৯৬টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ১শ’ ৭৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ এবং নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোট হয়েছিল। সেই নির্বাচনে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন