\ পাঁচ \
সাজসজ্জা ও সুগন্ধি পরিহার ঃ ইসলাম বিধবার ইদ্দত এর সময় অতিরিক্ত সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার নিষেধ করেছে। কেননা ইসলাম নারীদের সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার তার স্বামীকে প্রদর্শনের জন্য করার অনুমতি দিয়েছে, আর ঐ সময়ে সাজসজ্জা ও সুগন্ধি পরিহার সমাজের ও দাবী থাকে। এ সময়ে বিধবা চাকচিক্যময় পোষাক ও অলংকার পরিহার করে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরন করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চারমাস দশদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনে কাসীর রহ. বলেন এই সময়ে বিধবা স্ত্রীরা নিজেদের সৌন্দর্য, সুগন্ধি, উত্তম কাপড় এবং অলংকার পরিধান থেকে বিরত রাখবে। আর এটা পালন করা তাদের জন্য ওয়াজিব।
এ সময়ে সুগন্ধি পরিহার প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমাদের নিষেধ করা হত, আমরা যেন কারও মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক পালন না করি। তবে স্বামীর মৃত্যুতে চারমাস দশদিন শোক পালন করতে হবে এবং (এ সময়) আমরা যেন সুরমা এবং খোশবু ব্যবহার না আর রঙিন কাপড় যেন পরিধান না করি। তবে হালকা রঙের হলে দোষ নেই। আমাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, আমাদের কেউ যখন হায়েয শেষে গোসল করে পবিত্র হয়, তখন সে (দূর্গন্ধ দূরীকরণার্থে) আযফার নামক স্থানের কুস্থ (সুগন্ধি) ব্যবহার করতে পারে।
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া ঃ ইসলাম বিধবা নারীদের পরিচন্ন রাখতে এবং মানব জাতিকে সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা ও সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত বিবাহ করতে নিষেধ করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘‘যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরন করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চারমাস দশদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা’’। অত্র আয়াতের অংশের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট মুফাসসির ইবনে জারীর আত-তাবারী রহ. বলেন, তারা ইদ্দত পালন অবস্থায় নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রাখবে স্বামী গ্রহন থেকে, সুগান্ধ ও সাজসজ্জা থেকে, স্বামীর জীবদ্দশায় তারা যে গৃহে বাস করত, সে গৃহ থেকে অন্যত্র গমন করা থেকে।
মহান আল্লাহ অন্য স্থানে ইরশাদ করেন ‘‘আর যদি তোমরা আকারে-ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের অন্তরে কোন সংকল্প লুকিয়ে রাখলো, তবে তাতেও কোন পাপ নেই’’, আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীর কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রæতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচ্ছে কর না। আর এ কথা জেনে রেখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী ও ধৈর্যশীল। আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনে কাসীর রা. বলেন, বিধবার ইদ্দত পালন করার সময় বিবাহতো করা যাবেই না; বরং বিবাহের অঙ্গীকার ও করা যাবে না। তবুও কেউ যদি ঐ সময় বিবাহর করে নেয় এবং সহবাসও করে, তবে তাদের পৃথক করে দিতে হবে। তবে ইদ্দত শেষ হওয়ার পর মোহর আদায় করতঃ তারা পরস্পর ইচ্ছে করলে বিয়ে করতে পারবে।
স্বামীর গৃহে অবস্থান ঃ স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রী স্বামীর গৃহে অবস্থান করে নিদিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করবে এবং স্ত্রী ইচ্ছা করলে স্বামীর গৃহে এক বছর পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘‘যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরন করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চারমাস দশদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা, তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতিসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই’’। আর যদি বিধবা কোন প্রয়োজনে স্বামীর গৃহ ব্যতীত অন্য স্থানে ইদ্দত পালন করতে চায় তবে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- ‘‘মুজাহিদ রহ, হতে বর্ণিত। মহান আল্লাহর বানী : তোমাদের মধ্যে যারা বিবিদেরকে রেখে মারা যাবে”। তিনি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, স্বামীর বাড়ীতে অবস্থান করে ইদ্দত পালন করা মহিলাদের জন্য ওয়াজিব ছিল। পরে মহান আল্লাহ অবর্তীন করেন: তোমাদের মধ্যে যারা বিবিদেরকে রেখে মারা যাবে, তারা বিবিদের জন্য অসিয়ত করবে, যেন এক বৎসরকাল সুযোগ-সুবিধা পায় এবং গৃহ হতে বের করে দেওয়া না হয়, তবে যদি তারা নিজেরাই বের হয়ে যায়, তবে তোমাদের প্রতি গোনাহ নেই তারা নিজেদের ব্যাপারে বৈধভাবে কোন কিছু করলে।” মুজাহিদ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা (আরো) সাত মাস বিশ রাত (যোগ করে) তার পূর্ণ এক বছরকাল থাকার ব্যবস্থা করেছেন। (এ সময়) মহিলা ইচ্ছা করলে ওসিয়ত অনুসারে পূর্ণ এক বছর থাকতে পারে, আবার সে ইচ্ছা করলে বের ও হয়ে যেতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলার বানী ‘‘তবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই’’ এ মর্মার্থ হলো এটাই। তাই মহিলার উপর ইদ্দত পালন করা যথারীতি ওয়াজিব। আবূ নাজিহ এ কথাগুলো মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন