\ ছয় \
আত্বা বলেন, ইবনু আব্বাস রা, বলেছেন : এ আয়াতটি স্বামীর বাড়ীতে ইদ্দত পালন করার নির্দেশকে রহিত করে দিয়েছে। অতএব সে যেখানে ইচ্ছা ইদ্দত পালন করতে পারে। আতা বলেন: ইচ্ছা করলে ওসিয়ত অনুযায়ী সে স্বামীর পরিবারে অবস্থান করতে পারে। আবার ইচ্ছা করলে অন্যত্র ও ইদ্দত পালন করতে পারে। কেননা, মহান আল্লাহ বলেছেন: “তারা নিজেদের জন্য বিধিমত যা করবে, তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই।” আতা বলেন, এরপর মিরাছের আয়াত অবতীর্ণ হলে ‘বাসস্থান দেওয়ার’ হুকুম রহিত হয়ে যায়। এখন সে যেখানে চায় ইদ্দত পালন করতে পারে, তাকে বাসস্থান দেওয়া জরুরী নয়।
সন্তানের ভর-পোষণ ঃ স্বামীর অবর্তমানে সন্তানের লালন পালনের দাযিত্ব স্ত্রীর উপরে বর্তায়। সে তার অথবা তার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে তাদের লালন-পালন করবে। পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ অনুযায়ী, পিতা অক্ষম বা দরিদ্র হলে মা সন্তানের ভর-পোষন করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-‘‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রতিপালকের কাছে। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘আয়িশাহ রা. হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, এক বিখারিণী দু‘টি শিশু কন্যা সঙ্গে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইল। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু‘ভাগ করে কন্যা দুটিকে দিল। এরপর ভিখারিণী বেরিয়ে চলে গেল নবী স. আমাদের নিকট আসলেন। তার নিকট ঘটনা বিবৃত করলেন তিনি বললেন, যাকে এরুপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরুপ পরীক্ষা করা হয়, সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে আড় হয়ে দাঁড়াবে। এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত হয়েছে, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা সাত অথবা নয়টি কন্যা রেখে মারা যান। তারপর আমি এক প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাকে বিয়ে করি। রাসূলুল্লাহ স. আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জাবির! তুমি কি বিবাহ করেছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন: কুমারী না প্রাপ্তবয়স্কা? আমি বললাম প্রাপ্তবয়স্কা। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেন কুমারী বিবাহ করলে না, যাতে তার সাথে তুমিও ক্রীড়া-কৌতুক করতে পারতে এবং সে ও তোমার সাথে কৌতুক করতে পারতো? জাবির রা. বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ স. কে জানালাম, আব্দুল্লাহ কয়েকটি কন্যা সন্তান রেখে ইন্তেকাল করেছেন, আমি তাদের মতই কুমারী বিবাহ করা পছন্দ করিনি। তাই আমি বয়স্কা মহিলা বিবাহ করেছি, যাতে সে তাদের তত্ত¡াবধানের দায়িত্ব গ্রহন করতে পারে। রাসূলুল্লাহ স. বললেন আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন।
বিবাহের অধিকার ঃ ইসলাম বিধবাদের বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরন করলে নিদিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর ঐ বিধবা ইচ্ছা করলে বিবাহ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তারপর যখন তারা ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতিসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই।
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট মুফাসসির ইবনে জারীর আত-তাবারী রহ. বলেন “বিধবা নারীরা ইদ্দত কাল অতিবাহিত করার পর সুগন্ধি ব্যবহার, সাজ-সজ্জা ও যে গৃহে তার ইদ্দত পালন করেছে তা থেকে বের হতে পারবে এবং বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। আল্লাহ তাআলা তাদের ইদ্দত পালনের পর এসব কাজের জন্য বৈধ ঘোষনা করেছেন।” এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবুত্ব ত্বাহির ও হারমালাহ্ ইয়াহইয়া রহ, থেকে বর্ণিত, উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন, তার পিতা আব্দুল্লাহ রাহ:, ‘উমার ইবনু আবদিল্লাহ ইবনুল আরক্বাম আয-যুহরীকে নির্দেশ দিয়ে লিখলেন যে, তিনি যেন সুবয়া‘আহ বিনতু হারিছ আসলামীর কাছে চলে যান।
মুসলিম জাতির রূহানী চেতনা ও গাউছুল আজম কনফারেন্স
আল্লামা মুহাম্মদ আশেকুর রহমান
অন্ধকার যুগের ঘোর অমানিশা দূর করার জন্য মহান আল্লাহ উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাঁর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামাকে। যাঁর আলোতে আলোকিত হয়েছে সারা কায়িনাত তথা সৃষ্টিকুল। বহুত্ববাদ, পশুত্ববাদ, মানবতাহীন আরব সমাজ ইসলামের আলো দিয়ে আলোকিত করে প্রতিষ্ঠা করেছেন একত্ববাদ, মনুষ্যত্ববাদ। ব্যক্তিজীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবন, দোলনা থেকে কবর, কবর থেকে জান্নাতে প্রবেশের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মানবজাতির জন্য রেখে গেছেন রাহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মহান আল্লাহর পয়গাম নিয়ে তিনি এমন একটি সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বাধুনিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছেন যাতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহও সন্তুষ্ট, সৃষ্টিজগতও সন্তুষ্ট। তাই আল্লাহ বার বার বলেছেন, “কথায়, কাজে, আদর্শে, এমনকি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার হাবীব (দঃ)-কে অনুসরণ কর, অনুকরণ কর।” নবীজী মানবগোষ্ঠীর জন্য রেখে গেলেন মহাগ্রন্থ আল-কোরআন ও পবিত্র সুন্নাহ্, যা আঁকড়ে ধরলে গোমরাহ হবে না কখনো মুসলিম উম্মাহ্। তবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছেন যে, মানবজাতির এক মহাশত্র” হলো শয়তান। সে তার মানুষ ও জ¦ীন অনুসারি দিয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যায় মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করার জন্য। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নিলর্জ্জতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, ইভটিজিং, অবৈধ প্রেম ইত্যাদি শয়তানের নব নব আবিষ্কার। এসব শয়তানি কর্মকান্ড থেকে রেহাই পেতে চর্চা করতে হবে কুরআন-সুন্নাহ্, গড়তে হবে কুরআন-সুন্নাহ্ভিত্তিক জীবন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে নবীজীর আদর্শ, গ্রহণ করতে হবে নবীজীর প্রকৃত উত্তরসূরীদের ছোহবত। যাঁদের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হলো কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ, আওলাদে মোস্তফা, খলিফায়ে রাসূল (দঃ) হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হু। যিনি গাউছিয়্যতের কন্ঠে ডাক দিয়েছিলেন, “হে যুবক! নামাজ পড়, রোজা রাখ, নবী কারিম (দঃ)’র উপর দরূদ পড়, মাতৃভূমি শান্ত কর।” এ মহান দায়িত্ব নিয়ে তিনি নেমে পড়েছিলেন তরিক্বতের ময়দানে। হাজার হাজার যুব সমাজ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর হুকুম পালন করতে থাকেন নামাজ, রোজা, জিকির, তাহাজ্জুদ, মোরাকাবা, দরূদে মোস্তফা (দঃ) ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। এছাড়াও এ মহামনীষী আধ্যাত্মিক পদ্ধতিতে তাওয়াজ্জুহ্র মাধ্যমে নবীজীর নূরে বাতিন দিয়ে পরিশুদ্ধ করেছেন হাজার হাজার যুবক-যুবতীর অন্তর। এ মহামনীষী দেশ-জাতির কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করেছেন অনেক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসা, মসজিদ, হিফ্জখানা, মুসাফিরখানাসহ মানবকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান তিনি রেখে গেছেন। যা তাঁর একমাত্র প্রতিনিধি মোর্শেদে আজম, আওলাদে রাসূল (দঃ), হযরতুলহাজ¦ অধ্যক্ষ আল্লামা শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী নিজের শ্রম, মেধা, ত্যাগ ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে পরিচালনা করছেন। যিনি একদিকে রূহানী কার্যাবলী, অন্যদিকে মানবকল্যাণে নিজের মূল্যবান জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আজ বিশ^ব্যাপী মুসলিম জাতির যে ক্রান্তিকাল, বিশেষ করে মিয়ানমার ও ফিলিস্তিন মুসলিম ভাই-বোনদের উপর ইহুদী ও সুচি সন্ত্রাসীদের যে অত্যাচার, নির্যাতন চলছে এমন পরিস্থিতিতে রূহানী মোকাবেলার জন্য গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হুর রেখে যাওয়া তরিক্বতের বড়ই প্রয়োজন এবং এ তরিক্বতের কান্ডারী মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর ছোহবত গ্রহণ সময়ের দাবী। তাই, আসুন, হে ভাইয়েরা, আগামী ২৫ ডিসেম্বর সোমবার চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের ঐতিহাসিক গাউছুল আজম কনফারেন্সে উপস্থিত হয়ে নবীজীর জীবনাদর্শ অনুশীলন করি, কুরআন-সুন্নাহ্ভিত্তিক তরিক্বতের চর্চা করি, নবীজীর শান-মানের বর্ণনা শুনি, মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা বায়তুল মোকাদ্দাস দখলের ষড়যন্ত্রের রি”দ্ধে গর্জে ওঠি। ইসলামের দুশমনদের বির”দ্ধে রূহানী ও আধ্যাত্মিক বিপ্লব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ কনফারেন্স যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন