শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম

প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। ৭০ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আড়াই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েটি কক্সবাজারের সাথে সংযুক্ত করা গেলে দ্রুততম সময়ে সারাদেশের যোগাযোগ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। দেশের উন্নয়ন বিনিয়োগ, পর্যটন তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প।
গতকাল (বুধবার) বন্দরনগরীর সার্কিট হাউজে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত এলাইনমেন্ট এবং নকশা সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অ্যাট গ্রেড (ভূমিসংলগ্ন) ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সমন্বয়ে একটি নকশা প্রস্তাব করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ-সওজ। এ নকশা প্রস্তাব করেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক শিশির কান্তি রাউত। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে তিনটি এলাইনমেন্টের মধ্যে অ্যাট গ্রেড ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত নকশাটির বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরে শিশির কান্তি রাউত বলেন, এ এলাইনমেন্টটি ব্যয় সাশ্রয়ী। ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে পুরো প্রকল্প তুলে ধরেন তিনি। এলাইনমেন্টটি কারিগরি মূল্যায়ন, পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনুকূল মন্তব্য করে শিশির কান্তি বলেন, ২১৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বাজার এলাকা, জংশন, গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনগুলোতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে, সবমিলিয়ে যার দৈর্ঘ্য হবে ১৯.৯ কিলোমিটার। এটির নির্মাণে ২৬ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা লাগবে। অন্যদিকে সড়কজুড়ে এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে ব্যয় পড়বে ৬৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।
বিদ্যমান মহাসড়কের পাশে এ অ্যাট গ্রেড অ্যান্ড এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে জানিয়ে শিশির কান্তি বলেন, পুরো সড়কজুড়ে বেড়া দেয়া থাকবে ফলে এটি নন-মোটরাইজড ভেহিকেল থেকে মুক্ত থাকবে। তিনি জানান, প্রস্তাবিত এ এলাইনমেন্টে দুর্ঘটনা ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। ফলে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছানো যাবে।
পুরো মহাসড়ককে ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের মধ্যে থাকবে যাতে পুরো মহাসড়কে নজরদারি করা যায়। এছাড়াও প্রস্তাবিত এলাইনমেন্টে ৬৪টি আন্ডারপাস, সাতটি ইন্টারচেঞ্জ অপশন ও দশ লেইনের ডিজিটাল টোল প্লাজা থাকবে বলে জানান এ অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো: রুহুল আমিন বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ চট্টগ্রামের সাথে হয়। তাই চট্টগ্রামের সাথে দেশের অন্যান্য জায়গার দ্রুত যোগাযোগ অর্থনীতিতেও গতি আনবে। পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজার জেলাকে এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত করা যায় কি না সেটা ভেবে দেখতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও আশপাশের বিশেষ করে কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। সরকারের উদ্যোগে এখানে ডিপ সি-পোর্ট ও এলএনজি টার্মিনাল হবে। কিন্তু কক্সবাজার যাওয়ার যে রাস্তা এটা পর্যটকদের জন্য খুবই ভীতিকর। সবকিছু বিবেচনায় এনে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েটি কক্সবাজারের সাথে সংযুক্ত করা গেলে দ্রুততম সময়ে সারাদেশের যোগাযোগ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমাদের দেশে যে ইকোনমিক জোনগুলো রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই চট্টগ্রাম অঞ্চলে। বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে এসব ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম সন্তোষজনক। এক্সপ্রেসওয়ে এসব উদ্যোগকে আরো বেশি কার্যকর করবে।
অন্যদিকে পর্যাপ্ত আন্ডারপাস, ওভারপাস রেখে যাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। ভূমি অধিগ্রহণ যাতে বেশি করতে না হয় সে বিষয়ে মনোযোগী হতেও অনুরোধ জানান তিনি। সওজের চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র ধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো: মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক সৈয়দ মাহফুজুল হক শাহ। সভায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত এলাইনমেন্ট এবং নকশা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করেন এক্সপ্রেসওয়ের পিপিপি ডিজাইন প্রজেক্টের টিম লিডার গাভিন স্ট্রিড ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিশির কান্তি রাউত। সভায় সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অধিদফতরের প্রকৌশলীরা বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রাফিউল হাছান ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:২৬ এএম says : 0
এই টাকা নষ্ট না করে বর্তমান ঢাকা চট্রগ্রাম রাস্তাটাকে 6 লাইন করলেই ভাল হবে ।পৃথিবীর কোন দেশে এই রকম এক্সপ্রেস ওয়ে নাই
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন