সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নদীর সীমানা : ৩১৪০ পিলার ভুল জায়গায়

প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দখল রোধে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে স্থাপন করা ১১ হাজার ৮৮৪টি পিলারের (খুঁটি) ৩ হাজার ১৪০টি সঠিক স্থানে স্থাপিত হয়নি বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। সচিবালয়ে গতকাল বুধবার নদীর নাব্যতা ও স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা শেষে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা চিহ্নিতকরণে স্থাপিত পিলার নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ৬ হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপন করার কথা। পিলার স্থাপন করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৩টি, এর মধ্যে ৯৪২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপিত হয়নি। নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজার ৪১টি পিলার স্থাপন করার কথা। পিলার স্থাপন করা হয়েছে ৫ হাজার ১১টি, এর মধ্যে ২ হাজার ১৯৮টি পিলার নিয়ে আপত্তি রয়েছে। গাজীপুরে বেশিরভাগ পিলার সঠিক আছে।
মন্ত্রী গাজীপুরের পিলার সঠিক তথ্য দিতে না পারলেও সভা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে ৩-৪ বছর আগে ৪০৩টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে।
আপত্তি থাকা পিলারগুলো পুনঃনির্ধারণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে টাস্কফোর্সের সভাপতি বলেন, কোনো কোনো স্থানে নদীর সীমানা পিলার উপড়ে ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও উপড়ে গেছে। সেগুলোকে নতুনভাবে করার জন্য বলা হয়েছে।
সাভারে ১৪৩ ট্যানারির কার্যক্রম চলছে ঃ
শাজাহান খান বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন যে পর্যায়ে রয়েছে সরকারিভাবে ট্যানারি স্থানান্তরে যা করা দরকার তার প্রায় সব করেছি আমরা। কিন্তু মালিকদের অনাগ্রহ ও কিছু সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার কারণে তারা সেখানে যেতে পারেনি।
তীব্র পরিবেশ দূষণ বিবেচনায় নিয়ে ১৯৯৩ সালে ট্যানারি সাভার ও কেরাণীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলঝড়া ও হযরতপুর ইউনিয়নের হরিণধরা এলাকায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের অসহযোগিতার কারণে দীর্ঘদিনেও স্থানান্তর কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সরকার বার বার সময় বেঁধে দিলেও মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা আবার পেছানো হয়েছে। নৌমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৫৫টি শিল্প ইউনিটের সংখ্যা নির্ধারণ করেছিলাম, এর মধ্যে ১৫৪টির লে-আইট প্ল্যান পর্যন্ত অনুমোদন করেছিলাম, একটির মামলা রয়েছে।
ইতোমধ্যে ১৪৩টি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে ৪২টির মতো কারখানা পঞ্চমতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করেছে। ১০১টির বেজমেন্ট, পাইলিংসহ বিভিন্ন কাজ চলছে। আশা করি তারা শিগগিরই কাজ সম্পন্ন করবে।
মন্ত্রী বলেন, তবে আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি, আগামী ৩১ মার্চের পর কোনোক্রমেই কাঁচা চামড়া হাজারীবাগে ঢুকতে দেব না।
নদী দূষণ রোধে একটি কনসেপ্ট পেপার (ধারণাপত্র) তৈরির জন্য নৌবাহিনীর প্রধান করে একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে টাস্কফোর্সের প্রধান বলেন, তারা আগামী মাসের মধ্যে এ পেপারটি তৈরি করবে। এরপর আমরা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে নদী দূষণ রোধের কাজ করতে চাই।
শাজাহান খান বলেন, বড়াল নদী ভরাট করে তিনটি রাস্তা করা হয়েছে। এ রাস্তাগুলো অপসারণ করে নদীর গতিপ্রবাহ সৃষ্টির কাজ শুরু হয়েছে। ওখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। বড়াল নদীর তীরে কোথাও কোথাও ইকোপার্ক করে দেব স্থানীয়দের বিনোদনের জন্য।
বুড়িগঙ্গা উদ্ধার করে সৌন্দর্য বর্ধন
আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারের বিষয়টি একটা বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, আদি বুড়িগঙ্গা এমন সব প্রভাবশালী লোকেরা ভরাট করে দখল করে আছে, যে দখল আমাদের উচ্ছেদ করতেই হবে। আমরা এ চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছি। কঠোরভাবে এ চ্যালেঞ্জ ইনশাল্লাহ আমরা মোকাবেলা করব। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল শুধু উদ্ধারই নয়, হাতিরঝিলের মতো সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করবে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে। আগামী সভায় এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে পারব বলে মন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, এর আগে যে কমিটি করে দিয়েছিলাম তারা (আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধার) কাজ করছে। এটা মনিটর করার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি কমিটিও করে দিয়েছি। আদি বুড়িগঙ্গা দখল করে ম্যাটাডোর কোম্পানি মসজিদ করেছে জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, এ কাজগুলো যারা করেছে অমানুষের মতো কাজ করেছে। আমরা জায়গাগুলো চিহ্নিত করছি। যারা এগুলো করেছে তারা বাধা সৃষ্টি করছে।
নদী দখল করে স্থাপনা না করার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নদী দখল উচ্ছেদে আমাদেও মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনার সিদ্ধান্ত আছে। আমরা সেভাবে কাজ করব।
অবৈধ দখলের সময় কেন সরকার বাধা দেয়নিÍ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সেটা তখন যারা ছিলেন তারা জানেন। এটা যদি বলি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন তার বৌয়ের নামে খাল বরাদ্দ দিয়েছিল কী করে? তখন আপনারা তারে ধরতেন।
গভায় নৌ-পরিবহন সচিব অশোক মাধব রায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম, বিআইডবিউটিএ’র চেয়ারম্যান এম মোজাম্মেল হকসহ টাস্কফোর্স সংশ্লিষ্টরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন