স্টাফ রিপোর্টার : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মঠবাড়িয়া ও টেকনাফে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশেই বিজিবি গুলি ছুড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, সব প্রক্রিয়া মেনেই গুলি চালানো হয়েছে। তবে এমন ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘মোবাইল চিকিৎসা’ সেবার উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। আজিজ আহমেদ বলেন, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, দায়িত্ব পালনকালে যে ধরনের প্রক্রিয়া মানা দরকার তার প্রত্যেকটা মেনেই গুলি চালানো হয়েছে। তবে, এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন ঘটনা কখনও প্রত্যাশিত নয়। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা না করায় এ ধরনের ঘটনার অবতারণা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনও কখনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি পরিস্থিতি বাধ্য করে ভবিষ্যতেও গুলি চালাতে বিজিবি বাধ্য হবে বলে যোগ করেন আজিজ আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, কোনো জায়গায় স্থানীয় লোকজন অসহযোগিতা করলে আর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বর্তায় না। এ পরিস্থিতি যারা সৃষ্টি করছে, তাদের ওপর এর দায়ভার বর্তায়।
অনুষ্ঠানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক জানান, বিজিবির হাসপাতালসমূহে মোবাইলভিত্তিক টেলিকনসালটেশন চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
গতকাল সকালে রাজধানীর পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিজিবি সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তৌফিক হাসান সিদ্দিকীসহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার পিলখানা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, খাগড়াছড়ির জালিয়াপাড়া, ঠাকুরগাঁও এবং চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত বিজিবি›র ৫টি হাসপাতালে একই সাথে এই মোবাইলভিত্তিক টেলিকনসালটেশন চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু করা হলো। এই কার্যক্রম চালু হওয়ায় দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে বিজিবি›র নিজস্ব ডাক্তার বা স্থানীয় ডাক্তার নেই, সেই সকল স্থানের বিজিবি সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের অসুস্থতায় জরুরী প্রয়োজনে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত ডাক্তারের নিকট থেকে মোবাইলে সংযুক্ত হয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পথ্য সম্পর্কে তাৎক্ষণিক সেবা পাবেন।
উল্লেখ্য, বিজিবি একটি অপারেশনাল ফোর্স। সার্বক্ষণিকভাবে এর সীমান্ত এবং দেশের অভ্যন্তরে নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিজিবি›র ৫৯টি ব্যাটালিয়নে নিয়জিত সদস্য এবং তাদের পরিবারবর্গকে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনার উদ্দেশ্যে বিজিবি মহাপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১ জুন ২০১৫ তারিখে পিলখানাস্থ বিজিবি হাসপাতাল এবং সাতকানিয়া বিজিবি হাসপাতালে প্রথমে মোবাইল টেলিকনসালটেশন সেবা চালু করা হয়েছিল। এখন থেকে বিজিবির সবগুলো হাসপাতালে সার্বক্ষণিক এই চিকিৎসাসেবা চালু হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিজিবি সদস্যদের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বিজিবি পূনর্গঠনের আওতায় গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে বিজিবি দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নতুন ৩টি বর্ডার গার্ড হাসপাতাল (খাগড়াছড়ির জালিয়াপাড়া, ঠাকুরগাঁও এবং চুয়াডাঙ্গা) উদ্বোধন করেন। এর ফলে বিজিবি’র ৫টি হাসপাতালের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা বিস্তৃত হয়েছে। তা সত্তে¡ও বিজিবি সগদস্যবৃন্দ বিভিন্ন দুর্গম বিওপি অথবা বিজিবি পরিবারের সদস্যবৃন্দ সারাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে রয়েছেন। তাদেরকে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনবার জন্য বিজিবি মহাপরিচালকের ঐকান্তিক আগ্রহেই শুরু হয়েছে মোবাইলভিত্তিক টেলিকেনসালটেশন সাপোর্ট প্রোগ্রাম।
গত ০১ লা জুলাই ২০১৫ তারিখ পরীক্ষামূলকভাবে এটির কাজ শুরু হয় যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত আনুমানিক ৩৫০০ জন বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ এ চিকিৎসা সুবিধা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে বিজিবিতে ১০২৬ জন সদস্য নন কমুনিকেবল ডিজিজ অর্থাৎ হৃদরোগ, রক্তচাপ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এর কারনে নিম্ন ক্যাটাগরীভুক্ত। তাদেরকে বিজিবির মোবাইলভিত্তিক টেলিকেনসালটেশনের ডাক্তারগণ নিয়মিত বিরতিতে কল করছেন এবং চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছেন। এই সেক্টরের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ চিকিৎসা সংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরী হচ্ছে যার মাধ্যমে বিজিবি সদস্যদের স্বাস্থ্য অবস্থা সম্পর্কে জানা ও গবেষনার সুযোগ থাকবে। এই ডাটাবেজে ইতোমধ্যে ৩ লাখ ২৭ হাজার মেডিক্যাল রেকর্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় যত প্রেসক্রিপশন প্রদান করা হবে সবগুলোই ডাটাবেজে ব্যক্তিগত রেকর্ডে সংরক্ষিত থাকবে এবং ডিজিজ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম চালু থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন