পঞ্চায়েত হাবিব : ব্যক্তি মালিকানা জমি খাস বানানোর চেষ্টার ঘটনায় মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়ায় মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার যুবায়ের (সাভারের সাবেক সহকারী কমিশনার ভ‚মি) বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চিঠি দেয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ব্যবস্থা নিতে পারেনি জেলা ও মাঠ প্রশাসন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) ফারুক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি। তদন্তপূবর্ক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার আগে কিছু বলা যাবে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠি গত ১২ ডিেিসম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা জেলার সাভার থানা এলাকার বাসিন্দার মেজর মো. মোজাহের উদ্দিন সাভার উপজেলার ৬২৭ গেন্ডা মৌজার ৮ শতাংশ জমি ২০০০ সালে নামজারি পূর্বক খাজনাদি পরিশোধ করে ভোগদখল করে আসছেন। উল্লিখিত জমির মধ্যে ৪ শতাংশ জমি নিজ মেয়ে মোছা. নুশরাত জাবীনের নামে নামজারির জন্য সাভারের তৎকালীন সহকারী কমিশনার ভ‚মি অফিসার মো. যুবায়েরের কাছে লিখিত আবেদন করেন। সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. যুবায়ের জমির খারিজের আবেদনের জবাব না দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তা আটকে রাখে এবং কটুক্তি করা হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পক্ষ থেকে একই আচরণ করা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসককে অবগত করা হয়। সংশ্লিষ্ট্র কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ওই ভ‚মি ভুলবশত খাস তফসিলভুক্ত হয়েছে মর্মে জানানো হয়। এ ছাড়া তহসিল অফিসের আরএস পর্চার উপর দাখিল করা প্রতিবেদন ছিড়ে ফেলে এসএ পর্চার উপর মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরিপূর্বক নতুনভাবে সাজানো তথ্যের উপর না মঞ্জুর লিখায় অভিযোগকারী সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
এদিকে দুই বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে অভিযোগ করেছিলেন। তার সমস্যার সমাধান করতে পারেনি ভ‚মি প্রশাসন। আগের ঘটনাটি ছিল ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের। সাভারে দুদকের আয়োজনে এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সহায়তায় ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শুনানিতে মোজাহার উদ্দিন অভিযোগটি করেছিলেন। সাভারের ভ‚মি ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সেই গণশুনানির অভিযোগের অগ্রগতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ফলোআপ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোজাহার উদ্দিন অভিযোগ করেন, তার একটি জমি তিনি মেয়ের জামাইকে সাফকবলা দলিল করে দিয়েছেন। পরে জামাই এটির নামজারি করতে গেলে তহশিল অফিসার জানান, জমিটি ১৯৮২ সালে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এখন আর নামজারি করার সুযোগ নেই। এর ফলে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়েছে। পরে তিনি সাভারের উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভ‚মি বা এসিল্যান্ড) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তথ্যটি সঠিক নয় বলে তাকে জানানো হয়। এসিল্যান্ড নামজারি করে দেয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। প্রায় দুই বছর পর অনুষ্ঠিত গণশুনানির ফলোআপ অনুষ্ঠানে মোজাহার উদ্দিন বলেন, আমার কাজটি এখনো হয়নি। চার বছর ধরে এর সমাধান করতে ঘোরাঘুরি করেই যাচ্ছি। সেবাগ্রহীতাদের সব অভিযোগের উত্তর দেন সাভারের উপজেলা এসিল্যান্ড, এসি ল্যান্ড আশুলিয়া ও আমিনবাজার রাজস্ব সার্কেল, সাভার ও আশুলিয়া সাবরেজিস্ট্রার, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পল্লি বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপক। গণশুনানির ফলোআপ অনুষ্ঠানে হাজেরা বেগম অভিযোগ করেন, ২০০৮ সালে গেন্ডা এলাকার ৫৫ দাগের ৪৯ শতাংশ জমির ৫ শতাংশ ক্রয় করেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি খাজনা পরিশোধ করেছেন। ২০১৪ সালের খাজনা পরিশোধ করতে গিয়ে জানতে পারেন, ওই জমির মালিকানা থেকে তার খারিজকৃত নাম বাতিল হয়ে গেছে। বর্তমানে ওই জমি আগের মালিকের নামে আছে। অভিযোগকারী জানতে চান যে বিনা নোটিশে খারিজকৃত নাম কেন বাতিল করা হয়েছে? দুই বছর আগে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে তৎকালীন এসিল্যান্ড মো. যুবায়ের বলেছিলেন, একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নাম বাতিল করা হয়। প্রথমে নোটিশ ও পরে তদন্ত করা হয়। নিয়ম মেনেই সব কিছু করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সাবেক সাভারের সহকারী ভ‚মি কর্মকর্তা যুবায়ের ইনকিলাবকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন