মালেক মল্লিক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে তাঁর আইনজীবী সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের অপব্যবহার করে এটি দায়ের করে। এই মামলায় এখন পর্যন্ত যা চলছিল তা স্বাভাবিক নয়। এটা আসলে কোনো মামলাই না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি প্রথম দিনেই খারিজ করে দেয়া উচিত ছিল। কারণ এই মামলার আইনি কোনো ভিত্তি নেই। ত্ইা এ মামলায় খালেদা জিয়াকে সম্মানের সহিত খালাস দেবেন বলে আমি আশা করি। এই মামলায় প্রাইমারি এভিডেন্সও নাই, সেকেন্ডারি এভিডেন্সও নাই। এই আইনজীবী আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠাতে পারবেন কিন্তু। এতে আমাদের নেত্রীর কোনো ক্ষতি হবে না; বরং তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়বে। তিনিই হবেন বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় বিশেষ জজ আদালতের ৫-এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী এসব কথা বলেন। দশ দিনে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হল।
এর আগে খালেদা জিয়া বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে আদালতে উপস্থিত হন। এরপর আদঅরতের কার্যক্রম শুরু করেন বিচারক। ব্যারিস্টার মওদুদ তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নজির হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এই দুটি মামলার নথি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। বিষয়গুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে অনেক আগেই মামলাটি খারিজ হয়ে যেত। যেহেতু মামলাটি রাজনৈতিক, তাই খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে এটা করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক নেতাদের নিঃশেষ করার জন্য করা হয়ে থাকে। এখানেও তা-ই হয়েছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার মতো রাজনীতিবিদদের জেল খাটতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সংশ্লিষ্ট ছিলেন- ১৯৬৪ সালের এমন একটি মামলার উদাহরণ মওদুদ বলেন, সেই সিদ্ধান্তটি ছিল-বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।
এই আইনজীবী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের অপব্যবহার করে এটি দায়ের করে। দুদকের উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে প্রেসিডেন্ট প্যাডে এই মামলাটি তৈরি করে। অথচ প্রেসিডেন্ট প্যাডের মামলার অনুমোদনের বিষয়টি ১৯৯১ সালেই বাতিল হয়ে গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধিমালা মোতাবেক এই মামলা দায়ের করা হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের অধীনে মামলাটি করা হয়েছে। তবে এই মামলার প্রক্রিয়া, অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। তাই এ মামলা চলারই কথা না।
ফখরুদ্দিনের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় সেনা কর্মকর্তাদের আলাপের বরাতে মওদদু বলেন, আমি তখন জেলে ছিলাম। ক্ষমতা দখল করতে হলে কী করা যায়, সে বিষয়ে তারা কথা বলেছিল। প্রথমে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা তারা নিয়েছিল। পরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৩টি এবং আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করে। এই মামলা তার একটি। তিনি বলেন, এই মামলায় প্রাইমারি এভিডেন্সও নাই, সেকেন্ডারি এভিডেন্সও নাই। এটা একটি অবরুদ্ধ আদালত। এক-এগারোর সময়ে এ ধরনের আদালতে বিচার হত।
এ বক্তব্যের ব্যাখ্যায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় থেকেও বিভিন্ন অংশ আদালতে পড়ে শোনান বিএনপি নেতা মওদুদ। শেষে তিনি বলেন, এই মামলায় খালেদা জিয়াকে সম্মানের সহিত খালাস দেবেন বলে আমি আশা করি। কারণ এই মামলার আইনি কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি আরো বলেন, এখানে আইনজীবীদের জন্য কোনো বসার ব্যবস্থা নেই, এখানে নির্যাতনমূলক বিচার হচ্ছে বলে আমি মনে করি। কারণ এখানে অনেক আইনজীবী আসতে পারেন না, সাধারণ মানুষও আসতে পারে না। এরপরও এখানে খালেদা জিয়ার আরো ১৪টি মামলা স্থানান্তর করা হয়েছে। আমরা হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে যখন মামলা পরিচালনা করি তখন বিচারক এবং আইনজীবীদের দূরত্ব থাকে আট ফিট। কিন্তু এখানে দূরত্ব ১০০ ফিটেরও বেশি। আপনাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এতটা দূরত্ব রাখা হয়েছে যা কোনোভাবেই ঠিক নয়। মামলার শুনানিরও ভালো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এরপর অ্যাডভোকেট সানাউল্ল্যাহ মিঞা আদালতে আগামী তিনটি কার্যদিবসে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা ও স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক অসুবিধার কারণে খালেদা জিয়া আগামী দুদিন তাঁর ব্যক্তিগত উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি চান। তিনি খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনও প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, এর আগে আদালত খালেদা জিয়ার অস্থায়ী জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। সে স্থলে স্থায়ী জামিনের আদেশ দেয়া হোক। ওই সময় এর বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। উভয়ের শুনানির পর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি এবং স্থায়ী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে দেন আদালত।
খালেদার পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষে এ মামলার অপর আসামিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন তাদের আইনজীবীরা। তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য বুধ ও বৃহস্পতিবারও সময় আছে। যুক্তিতর্ক শুনানির প্রথম দিন ২০ ডিসেম্বর এ মামলায় দুদকের আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন। এরপর দশ কার্যদিবস খালেদার আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপন চলে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নয় বছর আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলা রায়ের পর্যায়ে আসবে। বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের মাঠে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ এই আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলারও বিচার চলছে। ওই মামলাও এখন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন