নূরুল ইসলাম : এবার ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রথম দফায় আসছে মিটার গেজের ১৫টি কোচ। লাল সবুজের স্টিলের বিলাসবহুল কোচগুলে রেলওয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনসহ বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের সাথে যুক্ত হবে। পর্যায়ক্রমে আসবে আরও ১৩৫টি। এর মধ্যে ৫০টি কোচ ব্রডগেজের। রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ২৩ মার্চ এমজি কোচগুলো ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত ইনকা রেল ফ্যাক্টরী থেকে তানজুং বোরাক বন্দরে নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে জাহাজে করে কোচগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। আগামী ২০ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে এগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছার কথা। রেল সূত্র জানায়, বিলাসবহুল এসব কোচ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিরতিহীন একটি বিলাসবহুল ট্রেন সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনাও আছে। এটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবে সাড়ে চার ঘন্টায়। ট্রেনটি পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা যায় কি না তা নিয়েও চিন্তা ভাবনা চলছে। আগামী জুন মাস থেকে ট্রেনটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলছে মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধুলী, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশিথা। এগুলো প্রতিদিন আটবার আসা-যাওয়া করে। গত ২৩ মার্চ ভারত থেকে প্রথম দফায় এসেছে ব্রডগেজের জন্য তৈরী ২০টি কোচ। বিলাসবহুল এ কোচগুলো আসার পর রেলওয়ের সেবা নিয়ে যাত্রীরা নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুনের মধ্যেই ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে মোট ২৭০টি যাত্রীবাহী নতুন কোচ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হবে। গত ২৩ মার্চ ভারতের পাঞ্জাবের কাপুরথালা রেল কোচ ফ্যাক্টরীতে তৈরী ২০টি কোচ দর্শনা হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে এখন সেগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। ব্রডগেজের কোচ আসার পর মিটার গেজের রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা রেল ফ্যানদের মনে অনেকটা হতাশা দানা বেঁধেছিল। কিন্তু দুদিনের মাথায় মিটার গেজের জন্য তৈরী কোচেরও খবর পাওয়া গেছে। রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ২৩ মার্চ বিকাল পৌনে ৬টার দিকে ১৫টি কোচ ইন্দোনেশিয়ার ইনকা রেল ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিশেষ ভ্যানে করে তানজুং বোরাক বন্দরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। সেখান থেকে জাহাজে করে এগুলো আগামী ২০ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছানোর কথা। প্রথম চালানে ১৫টি কোচের মধ্যে রয়েছে ১১টি শোভন চেয়ার, ২টি চেয়ার কোচ, খাবারের গাড়ি ও গার্ডব্রেক, ১টি পাওয়ার কার এবং ১টি প্রথম শ্রেণির কোচ। ইন্দোনেশিয়ার ইনকা কোম্পানীর ওয়েব সাইট থেকে জানা গেছে, মিটার গেজের জন্য মোট একশটি কোচের মধ্যে ১৩টি এসি স্লিপার, ২৪টি এসি চেয়ার, ৩৬টি শোভন চেয়ার, ১৩টি ডাইনিং, গার্ডব্রেক ও প্রেয়ার স্পেস কার, ৮টি পাওয়ার কার এবং ৬টি প্রথম শ্রেণি ননএসি স্লিপার কোচ রয়েছে। একই সাথে ব্রডগেজের জন্যও একই কোম্পানীর আরও ৫০টি কোচ আসবে পর্যায়ক্রমে। রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ১৫০টি কোচ কেনার চুক্তি হয় ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর। ৭২ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারে কেনা হয়েছে কোচগুলো। এর মধ্যে ১০০টি মিটার গেজ এবং ৫০টি ব্রড গেজের। ইন্দোনেশিয়া থেকে কোচগুলো এডিবির অর্থায়নে কেনা হয়েছে। ভারতীয় অর্থায়নের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ১২০টি ব্রড গেজ কোচ কেনার চুক্তি হয় গত বছরের ২১ জানুয়ারি। ১২০টি কোচের মূল্য ৭৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
রেলওয়ের ম্যাকানিক্যাল বিভাগের একজন উর্ধ্বতন প্রকৌশলী জানান, বর্তমানে আন্ত:নগর ট্রেনগুলোতে যেসব কোচ যুক্ত আছে সেগুলো থেকে স্টিলের লাল-সবুজ কোচগুলো অনেক উন্নত। এগুলোর সিট, দরজা, জানালা ও টয়লেট তুলনামূলক চওড়া। জানালার গ্লাসগুলো আধুনিক মানের। কোচগুলোতে খাবার সংরক্ষণ করার ব্যবস্থাসহ সার্বক্ষনিক ঠান্ডা ও গরম পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। আছে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থান। যা প্রতিটি ট্রেনের এক কোচ পর পর যুক্ত থাকবে।
এদিকে, এই বিলাসবহুল কোচগুলো দিয়েই ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে একটি নতুন বিরতিহীন আন্ত:নগর ট্রেন সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ট্রেনটি হবে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মাত্র সাড়ে চার ঘন্টায় ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের অধিকাংশ রুট ডাবল লাইন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নতুন ট্রেন চালু করতে সমস্যা নেই। নতুন কোচগুলো যুক্ত হলে ট্রেনের গতি বাড়বে। তাতে সাড়ে চার ঘন্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া সম্ভব। রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই ট্রেন ছাড়াও চলতি বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ১৫টি কোচের একটি নতুন ট্রেন, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে ১৫ কোচের একটি আন্ত:নগর ট্রেন এবং চট্টগ্রাম-দিনাজপুর রুটে একটি নতুন ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। নতুন ২৭০টি কোচ আসার পর এসব ট্রেনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন