শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিএনপিতে নারী নেতৃত্ব বিকাশে চাপ বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০১৬

আফজাল বারী : নারী নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে যুব মহিলা দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে বিএনপিতে। বাস্তবতাও রয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারী নেতৃত্বের বিকাশে ক্ষমতাসীনরা গঠন করেছে Ñ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগ। শরিক দল জামায়াতের রয়েছে দুইটি সংগঠন Ñ মহিলা জামায়াত ও ছাত্রী সংস্থা। কিন্তু মহিলাদের নিয়ে বিএনপির রয়েছে মহিলা দল নামের মাত্র একটি পৃথক সংগঠন।
দলীয় সূত্রমতে, সাবেক ছাত্র নেত্রীদের মূল্যায়ন Ñ নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং কথিত মৌলবাদ বা নারীবিদ্বেষীর অপপ্রচার ঘোচানোর তাগিদ থেকেই আরো নারীবিষয়ক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। তাই যুব মহিলা দল কমিটি গঠন প্রক্রিয়া এগিয়েছে অনেকদূর।
সূত্রটির আরো জানায়, এই প্লাটফর্মে স্থান পাচ্ছেন উচ্চশিক্ষিত সাবেক ছাত্রদল নেত্রীরা, যাদের বয়স মহিলা দলে সম্পৃক্ত হওয়ার মতো নয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত দুটি কমিটি জমা দেয়া হয়েছে। একটিতে আছেন যারা মহিলা দলের সাথে সম্পৃক্ত নন তারা, অপরটিতে যাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তাদের অনেকেই মহিলা দলের বিভিন্ন পদে রয়েছেন।
এই কমিটির ধরন বা আকার কী হবে তা নির্ভর করছে শীর্ষ নেতার ইচ্ছার ওপর। পরামর্শকরা প্রথমে ৭১ বা ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনের সুপারিশ দিয়েছেন। এদিকে যুব মহিলা দল গঠনবিরোধী গ্রুপও রয়েছে দলটিতে। তবে যুক্তিতে বিপক্ষের চেয়ে কমিটি গঠনের পক্ষের পাল্লাই ভারী। এ দাবি নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
জানা গেছে, সারা দেশে হাজার হাজার ছাত্রনেত্রী রয়েছেন যারা বিভিন্ন সময় ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা সরকারি ও বেসকরারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ আবাসিক হলের সভাপতি/সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জিয়ার আদর্শ ধারণ করে যুগ পার করেছেন ছাত্রদল করে। শিক্ষাজীবন শেষে অনেকে রাজনীতি থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। রাজনীতিতে কলঙ্কের ছাপসহ ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন ও আভ্যন্তরীণ পরিবেশ না পেয়ে অনেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকরি, আইন পেশাসহ স্বাধীন পেশা বেছে নিয়েছেন। ফলে বিএনপিতে উচ্চশিক্ষিত মহিলাদের অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। নতুন নারী নেতৃত্ব তৈরির পথও প্রায় বন্ধ। দেশ-বিদেশে বাড়ছে সমালোচনাও।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দলীয় নারীনেত্রী ও বোদ্ধাদের কাছে মতামত চান বিএনপি প্রধান। তিনি বিএনপিরই একজনকে এ বিষয়ে সারা দেশে সাবেক ছাত্রনেত্রীর খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব দেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ওই নেত্রী একটি খসড়া তালিকাসহ বেশ কিছু মতামত দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে।
এদিকে যুব মহিলা দল গঠনের ধারণা আসে দলের সিনিয়র নেতা ও পরামর্শকদের কাছ থেকে। বাস্তবতার আলোকে তিন যুক্তিতে কমিটি গঠনের সুপারিশে ঐকমত্য পোষণ করেছেন বিএনপিপন্থী বোদ্ধারাও।
প্রথমত, মোট ভোটের অর্ধেক নারী ভোটার। তাহলে নেতৃত্বের বেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে কেন মহিলা শতকরা মাত্র ১১ ভাগ। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নারীবিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকের মতো ২-৩টি পদে পুনর্বাসন করা হয়। বাকিদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে রাখা হয়েছে মহিলা দলকেই। এ পরিস্থিতিতে নতু অঙ্গসংগঠন অথবা নতুন প্লাটফর্ম সৃষ্টি করে নেতৃত্বে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পক্ষে তারা।
দ্বিতীয়ত, শহীদ জিয়া যুবশক্তিকে অগ্রাধিকার দিতেন, ১৯ দফায় সমাজ গঠনে যুবক-যুবতীদের সম্পৃক্ত করার কথা উল্লেখ আছে। শুধু যুবদল গঠন করে তাতে যুবকদের সম্পৃক্ত করা হলে যুবতীদের প্লাটফর্ম কেন নয়।
তৃতীয়ত, বিএনপির বিরুদ্ধে মৌলবাদের অপপ্রচার রয়েছে। নারী নেতৃত্ব বিকাশের বিপরীতে ধর্মান্ধতায় প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে দেশ-বিদেশে। তাই মহিলা দলের পাশাপাশি যুব মহিলা দল গঠন করে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ালে এ অপপ্রচার ঘোচানো যাবে বলে মনে করেন বিএনপিপন্থী বোদ্ধারাও।
তাদের আরো পরামর্শ হলো মহিলা নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে। মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগ। শরিক দল জামায়াতের রয়েছে দুইটি সংগঠনÑমহিলা জামায়াত ও ছাত্রী সংস্থা। কিন্তু মহিলাদের নিয়ে বিএনপির রয়েছে মাত্র মহিলা দল।
এদিকে আবার মহিলা দলের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন না সাবেক ছাত্র নেত্রীরা। এই নারী নেত্রীদের ভাষ্য হলোÑতাদের বয়স এখনো মহিলা দলের রাজনীতি করার মতো হয়নি। মহিলা দলের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থার অভাব রয়েছে। তারা অন্য রাজনৈতিক দলের মতো মহিলাদের পৃথক সংগঠন গড়ে সেই ব্যানারে রাজপথে সক্রিয় থাকতে চায়। নাম হতে পারে যুব মহিলা দল।
ইতিবাচক যুক্তির মধ্যে দলের একটি গ্রুপ এই কমিটি গঠনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তাদের যুক্তি হলো যুব মহিলা দল গঠন করা হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে মহিলা দলে।
কমিটি গঠন করা হবে, তাতে থাকছেন উচ্চশিক্ষিত সাবেক ছাত্রনেত্রীরা-এক বছর আগে আলোচনা হতে না হতেই মহিলা দলের অনেকেই যুব মহিলা দলে স্থান পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা বর্তমান মহিলা দলের অস্তিত্ব নিয়ে টান পড়েতে পারে বলে মনে করে মহিলা দলের বর্তমান নেতৃত্ব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Abir ২৬ মার্চ, ২০১৬, ১১:৪২ এএম says : 1
valo decision
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন