উচ্চ আদালত গিয়ে কিছু মানহীন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন নিয়ে আসায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এজন্য ওই অনুমোদনহীন হাসপাতালের পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবীদের ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এসব বেসরকারি মেডিক্যালে ছাত্র ভর্তি হলে তাদের ভবিষ্যত কী হবে? শুধুমাত্র টাকার জোরে বড় বড় আইনজীবী ধরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব মানহীন মেডিক্যাল কলেজগুলো আদালত থেকে ভর্তির আদেশ নিয়ে আসছে।
গতকাল রোববার সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি একথা বলেন। সরকার দলীয় এমপি পঞ্চানন বিশ্বাসের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মেনেই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের অনুমতি দেয়া হয়। অনুমোদন পাওয়া এসব কলেজের সামগ্রিক কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করা হয়। তবে কয়েকটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে যাদের কোন নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই, শিক্ষক, পাঠাগার, ল্যাব কিছুই নেই। এজন্য গত তিন বছর ধরে এসব মানহীন হাসপাতালগুলোতে ছাত্র ভর্তি অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন স্থগিত করা এসব মানহীন কয়েকটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে যায়। টাকার জোরে বড় বড় আইনজীবী নিয়োগ করে। আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির আদেশ নিয়ে আসে। এখন তারা আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিতে। দুঃখ লাগে, কীভাবে অনেকে এসব মানহীন কলেজের পক্ষ নেন। কিন্তু আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, কোন মানহীন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজকে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয়া হবে না।
প্রত্যেক বিভাগে বিশেষায়িত হৃদরোগ হাসপাতাল : জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশে হৃদরোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ কারণে সরকার প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে একটি করে স্বতন্ত্র হৃদরোগ বিশেষায়িত হাসপাতাল (উন্নতমানের হার্টের চিকিৎসার জন্য) পর্যায়ক্রমে স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে সারা দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নতমানের হার্টের চিকিৎসার জন্য করোনারী কেয়ার ইউনিটসহ আলাদা হৃদরোগ বিশেষায়িত বিভাগ ও কিডনি বিভাগ খোলা হয়েছে। এসব হৃদরোগ বিভাগগুলোতে উন্নতমানের হৃদরোগ চিকিৎসার সকল প্রকার ওষুধ (ব্যয়বহুলসহ) বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে এবং বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনজিওগ্রামসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের প্রথম সারির অধিক গুণগত মানসম্পন্ন ৩০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেশের চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগ পূরণ করে থাকে এবং শতকরা ১০ ভাগ ওষুধ অন্যান্য মাঝারি ও ছোট ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে।
তিনি জানান, দেশের নামি-দামি কিছু কোম্পানীর কিছু কিছু ব্রান্ডের ওষুধ নকল হয় যা অত্যন্ত নগণ্য। এ সকল নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে।
এমপি মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের দ্রæত টিকাদানের আওতায় আনতে সরকার ব্যপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেয়া নবজাতকের জন্মনিবন্ধনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এবং ইউএনএইচসিআর নামক সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় জন্মনিবন্ধণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন