রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উপকূলীয় বেড়িবাঁধে ঘাপলা

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আনোয়ারায় ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প সুফল নিয়ে সংশয়
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় উপকূলীয় বাঁধের সিসি ব্লক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। বাঁধের ব্লক তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের পাথর ও বালু। এতে উপকূল রক্ষায় এ বাঁধ কতটা সুফল দেবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম পওর বিভাগ-১ এর অধীনে ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নং-৬২(পতেঙ্গা), পোল্ডার নং-৬৩/১এ (আনোয়ারা), পোল্ডার নং-৬৩/১বি (আনোয়ারা এবং পটিয়া) পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারা উপজেলায় শঙ্খনদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। গত বছরের মার্চে প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও বাস্তবে কাজ শুরু হয় নভেম্বরে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে উপজেলার রায়পুর, জুঁইদন্ডী ও হাইলধর ইউনিয়নের অসংখ্য ঘর-বাড়ি, মসজিদ-মন্দির, হাট-বাজার, স্কুল-মাদরাসাসহ বিস্তীর্ণ আবাদি জমি নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও (২০১৬-২০১৭) এখনও বেশিরভাগ কাজ হয়নি। এতে আগামী বর্ষার আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
পাউবো সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগর ও শঙ্খনদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে গত বছর উপজেলার হাইলধর থেকে পরুয়াপাড়া বাতিঘর পর্যন্ত এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ অংশে ব্লক, ব্লক ম্যাসিং, ডাম্পিং এবং জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কাজ শুরু করা হয়। এরমধ্যে হাইলধর ইউনিয়নের ফকিরহাটে ১৩৪৫ মিটার ও তৈলারদ্বীপে ৫০০ মিটার, জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের খুরুসকুল গোদারপাড়ে ৫১০ মিটার ও লামার বাজার এলাকায় ১ কিলোমিটার। রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া বাতিঘরে ১৫০ মিটার, পিচের মাথায় ৪০০ মিটার, পরুয়াপাড়ায় ২০০ মিটার, মালিপাড়ায় ৫৪০ মিটার, বার আউলিয়ায় ২৫০ মিটার, ঘাটকুল ফকিরহাটে ৭১০ মিটার, সাপমারা খালের মুখ ও সরেঙ্গায় ৯০০ মিটার এলাকায় ব্লক বসানো হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৬৪.৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুনঃর্নির্মাণসহ স্লইচ গেইটের ক্লোজার, নদী ও খালের ড্রেজিং কাজও করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, উপক‚ল রক্ষার দাবি আনোয়ারাবাসির দীর্ঘদিনের। সরকারের মহতী উদ্যোগের কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। কিন্তু নজরদারির অভাবে সাব ঠিকাদাররা ব্লক তৈরিতে নানা অনিয়ম করছেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদি সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা এ অঞ্চলের মানুষের। জুঁইদন্ডী গ্রামের সাদ্দাম হোসেন জানান, লামার বাজার এক কিলোমিটার অংশে শঙ্খের কালো বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা কয়েক দফা প্রতিবাদ করেও অনিয়ম বন্ধ করতে পারেনি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে,প্যাকেজ ভিত্তিক বিশাল এই কর্মযজ্ঞের কাজ পায় কুমিল্লার মেসার্স মশিউর রহমান, ঢাকার এসএ-এসআই এন্ড ইসরাত এন্টারপ্রাইজ (জেবি), এমজেআর এন্ড এএস (জেবি), চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স, তাহের ব্রাদার্স ও নুর সিন্ডিকেট (জেবি), ফেনীর এস-এএএস (জেবি)সহ বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিজ নিজ নামে কাজ পেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় বিভিন্ন সাব ঠিকাদার দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ করছে। স্থানীয় সাব ঠিকাদাররা ব্লক তৈরিতে সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় বালু, নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করছেন। এতে প্রকল্পের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ব্লক তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। ব্লক তৈরিতে যেখানে ব্যবহার করার কথা উন্নতমানের কালো পাথর, সাদা বালু, সিলিকন বালু ও সিমেন্ট। সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে শঙ্খ থেকে তোলা বালু। আর কালো পাথরের সাথে মেশানো হয়েছে লাল পাথর (মরা পাথর)। উপকরণ মিশ্রণে সিমেন্টের পরিমাণ অনেক কম ও বালুর পরিমাণ বেশি দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে ব্লকগুলোর স্থায়িত্ব কম হবে বলে জানান এলাকাবাসী। তাছাড়া প্রতিটি প্রকল্পের কাজের বর্ণনাযুক্ত সাইনবোর্ড টাঙানোর নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি।
বর্ণিত সিডিউল মতে ব্লক তৈরি করা হচ্ছে দাবি করে এস এ-এ এ এস (জেবি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সেলিম আহমেদ বলেন, আপনাদের অহেতুক মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কাজের বর্ণনাযুক্ত সাইনবোর্ড না থাকলেও মান সঠিক রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার উদ্দিন জানান, অনিয়ম এড়াতে পাউবোর নিয়োজিত ৫জন কার্য সহকারী (এসও) এসব কাজ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম পওর বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ জহির উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব টাস্কফোর্স তৈরিকৃত ব্লক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। তাই কাজের মান শতভাগ নিশ্চিত করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টাস্কফোর্সের কাছে মানহীন ধরা পড়লে সে ব্লক বাতিল করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
mohiuddinmonjur ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ৭:৫৪ পিএম says : 0
মাথায় কাঁঠাল গোঁফে তেল। ধান্ধার আরেক নাম রায়পুর বেঁড়ীবাধ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন