সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

সংস্কৃতিতে আমাদের প্রত্যাশা

আবু মালিহা | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বর্ষবরণ সে এক অপার আনন্দ। নতুন বৎসরের খুশীর আনন্দ সকলের মন প্রাণকে প্রফুল্ল করে। তা থেকে কোন অর্থেই পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের জনগণ। সাদা-মাটা জনগণের চিন্তা চেতনায় তারই উৎফুল্ল ভাব সঞ্চারিত হয় প্রতিটি জনমনে নতুনের আগমনে। দেখা যায় পথে প্রান্তরে খুশীর আমেজে নানা ধরনের বর্নীল আয়োজনে। নানা বর্ণের নানা সংস্কৃতির মানুষের মেলামেশাতে এবং আনন্দ কোলাহলে গীত প্রবাহ ছুটে চলে দেশের সর্বত্র। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই থাকে যেন আগমনী বৎসরটি সকলের জন্য সুখ-সাচ্ছন্দের অনাবিল পরিবেশ নিয়ে আসে। তারই জন্য নানা সংবর্ধনার ডালি সাজিয়ে বর্ষবরণের এক মহা আয়োজনে মুখর করে তোলে এ দেশের জনগণ। এতো গেল সংস্কৃতি চেতনার মৌলিক আবেদন। কিন্তু পরিবেশ এবং দেশের রাজনীতির সংস্কৃতি কী তারই আলোকচ্ছটার কোন পরিবেশের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ভাবনার অন্তহীন দিগন্তের চাওয়া পাওয়া আর বাস্তবতার কঠিন লড়াইয়ের মাঝে কী দুঃস্তর ব্যবধান সৃষ্টি করছে আজকের বাংলাদেশে! আমরা কী পাব কোন সম্ভাবনার ভবিষ্যত সুখ এবং চাওয়া পাওয়া। দেশের মানুষ কী স্বস্তি পাবে আগামী দিনগুলোর বাস্তবতায়। ঘটবে নাতো কোন নারকীয় পরিস্থিতি। এবং উত্তপ্ত হয়ে উঠবেনা তো রাজনীতির অঙ্গন। ষোল কোটি জনতা আপন নীড়ে দু’মুঠো অন্ন খেয়ে নিশ্চিন্তে রাত্রি যাপন করতে পারবেতো! অথবা দিনান্তে কাজ শেষে নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারবে তো। স্বাভাবিক ভাবেই এ প্রশ্নগুলো এসে যায়। কেননা আমরা দুঃখ সয়ে সয়ে দুঃখকে এখন আর গা লাগাইনা। কথায় বলেনা, ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া, তাদের আবার দুঃখ কীসের।’’
বর্তমান দেশের জনগণের আর্ত চিৎকার বা করুন আকুতি অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক সরকারের কর্ন কুহুরে কোনভাবেই প্রবেশ করছে না। শত শত মা বোনের কোল খালি করে বর্তমান সরকার যেন আমস্বত্বের স্বাদ পাচ্ছেন বিরোধী রাজনীতিক এবং জনমতের পক্ষের লোকদের দমনপীড়ন এবং নির্যাতন করে স্বৈর চেতনার আনন্দ উপভোগ করছেন নিজেদের ক্ষমতার দর্পে। তাদের ধারণা কার বুকের পাটা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। বিগত সময়ের যত স্বৈরশাসক ছিলেন সবাই যেন তাদের কাছে শিশুতুল্য। তর্জন গর্জনে দেশের জনগণকে যেভাবে প্রতিনিয়ত দেখে নেবার এবং উৎখাত করে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়ার যে বক্তব্য আমরা শুনতে পাই তা যেন ভয়ঙ্কর দৈত্যরাজের হুঙ্কার ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রসঙ্গত ২০০৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্র্যন্ত বর্তমান সরকার দ্বিতীয় দফার মেয়াদ কাল অতিক্রম করছে। এরই মধ্যে বহু চড়াই উৎরাই পার হয়ে এদেশের জনগণ সতের সালের শেষ উপকন্ঠে এসে ২০১৮ কে সবাই মনে প্রাণে বরণ করেছে। কেননা, তবুও তো নতুন বৎসর। তার আনন্দ এবং সুখ নব চেতনায় সুখ বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে তারই সম্ভাবনাকে লালন করে আগামী দিনের পথ চলতে জনগণ অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়। ইংরেজী নববর্ষে বিশ্বের জনগণের মত এদেশের জনগণও তাই অন্তরের সুখ ভরা শুভেচ্ছার ডালি নিয়ে স্বাগত জানায়।
আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের জনগণ সুখ চায়, শান্তি চায়, নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপন করতে চায়। রাজনীতির কোন্দল এবং হিংসা হানাহানি থেকে দূরে থাকতে চায়। কোন ভাবেই অন্যের অধিকারকে খর্ব করতে চায় না বা অন্যের সম্পদকে হরন করতে চায়না। নিজের শ্রম ঘন কর্মের মাধ্যমে উপার্জনের নূন্যতম চাহিদা মেটাতে পারলেই সুখ অনুভব করে। কিন্তু সে পরিবেশ কী সরকার প্রধানগণ জনগণের এ মৌলিক অধিকারটুকু ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। গতানুগতিক হিসেব বলছে পারে নাই। বছরের পর বছর ঘাটতি বাজেটের পাহাড়সম চাপ জনগণের হাড়শুদ্ধ চেপে ধরে রাজস্ব আদায়ের নাম করে বিশাল বিশাল বৈদেশিক ঋণের বোঝা পরিশোধের অর্থনৈতিক নিপীড়নের চিত্রটাই কী বলে দেয়না বাংলাদেশের জনগণ কতটুকু সুখে আছে!
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট ভিন্ন ধারায় বয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে ইসলাম বিদ্বেষী এক শ্রেনীর উন্মাদ রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সরকারের মদদে গোটা বিশ্বে বর্ণদাঙ্গা এবং ধর্ম বিদ্বেষী দাঙ্গায় উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে ‘জঙ্গীবাদ’ আবিস্কারের ব্যাপারটি মুখ্য হয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিম দমনে উৎসাহিত হয়ে পড়েছে। হালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতন ছিল অন্যতম। আর এ ব্যাপারে কিছু কিছু মুসলিম রাষ্ট্র নায়কদের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করছে আধিপত্যবাদী সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠীরা। তারা তাদের কৌশল প্রয়োগ করে আমাদের লোক দিয়ে আমাদেরকেই দমন করার অপকৌশলটি বেছে নিয়েছে। এ ব্যাপারে ইহুদী রাষ্ট্রের সাথে আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটিশ এবং ভারত সহ এ সমস্ত রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অঘোষিত ক্রুসেডের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এ বিষয়টি সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং সংবাদ সংস্থা সহ বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন থেকে সূত্র বা আলামত প্রকাশ পাচ্ছে!
বাংলাদেশের প্রকৃতির সজীবতার উচ্ছ¡লতায় আমার এ সোনার দেশ। ধর্ম, বর্ণ এবং বিভিন্ন জাতি ও উপজাতির সমন্বয়ে দারুণ ভালবাসার প্রশ্রবনে আমরা সবাই নিজস্ব স্বত্তার সংস্কৃতি বিকাশে আন্তরিক। নেই কোন হিংসা-বিদ্বেষ এবং বৈরীসুলভ আচরণ। একই মায়ের জঠরে আমাদের মূল সত্তাকে আপন মহিমায় প্রকাশ করার অনবদ্য চেতনার নির্ঝরণী স্রোতে অনন্ত প্রেম উৎসরনের আকুল নিবেদনের ভাবগত বিলাস মানব কল্যাণের এক কাব্যিক দিগন্তের সবুজ চত্বর যেন।
আমরা হারিয়ে যাই এদেশের মাঠে প্রান্তরে নয়নাভিরাম দৃশ্যের মাঝে। এমন দেশ ভ‚বন জুড়ে খোঁজে পাওয়া যায়না। তবুও কেন আমরা জাতিগতভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি বিভৎস পরিবেশ দৃষ্টে। দিন দিন যেন অপসংস্কৃতি এবং বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনে নূব্জ এবং দেওলিয়া হয়ে পড়ছি নিজস্ব সংস্কৃতি সত্তার দূরবস্থা দর্শনে। আমরা কী নিজেদের অস্তিত্ব ভুলতে বসেছি। কেন আমরা পরের দ্বারস্থ হবো আপন সত্তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পায়ে ঠেলে দিয়ে। কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং দেশজ ঐতিহ্যের যারা ক্ষতি সাধনে লিপ্ত আমরা কেন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারছি না। অপসংস্কৃতির শকুনীরা যেভাবে এদেশকে ক্ষত বিক্ষত করতে চায়, তাদের থেকে এখনই আমাদের সজাগ হতে হবে। নইলে অচিরেই এ দেশের জাতিসত্তার উপর মরণ কামড় দিবে আমাদের সংস্কৃতির চিরশত্রæরা। তারা ওঁত পেতে আছে আমাদেরই সাথী হয়ে। সতর্ক নজর না রাখলে তড়িৎ গিলে খাবে অপসংস্কৃতির ডাইনোসূরেরা। আড়ালে আবডালে অপসংস্কৃতির নাগিনীরা ফনা তুলে আছে মোক্ষম সময়ে ছোবল মারার জন্য। একটুখানি চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাবেন এদেরকে।
বিষদাঁত এবং নখর নিয়ে এ সমস্ত ইচ্ছু-বাচ্চুরা সব সময় দাঁত কটমট করে উদগ্র রক্তচক্ষু নিয়ে প্রতিহিংসার লেলিহান শিখার সর্পিনীর লালসার জিহবাকে লক্ লক্ করে ভিতর-বাহির করছে। এ সমস্ত খল সংস্কৃতির ধারক বাহকদেরকে চিহ্নিত করে সংস্কৃতিকে রক্ষার যাবতীয় কৌশল অবলম্বন করতে হবে। জ্বলে উঠতে হবে আপন সংস্কৃতির দীপ্ত আলোর আভায়। দূর করতে হবে অপসংস্কৃতির যাবতীয় পঙ্কিলতার আবর্জনাকে। সুস্থ এবং শুদ্ধ সংস্কৃতিকে বিকশিত করতে হবে সম্মিলিত প্রয়াসে।
বর্ষবরণ সংস্কৃতি এটা আনন্দের। উৎসবমুখর পরিবেশে তার আগমনকে অনিন্দ্য সংস্কৃতিতে ভরিয়ে তোলা যায়। মনো সংস্কৃতি জগতে তার ভাব, ভাষা এবং প্রকাশের এক অনন্য শিহরণ বটে। আবেগে এবং প্রতীক্ষার দিগন্তকে বহুদূরে প্রকাশিত করার এক উপলক্ষ বটে। আনন্দ পূলক জাগায় প্রতি মনে এবং প্রাণে। সত্যিই কোন ভাব ব্যঞ্জনা দিয়ে তার প্রকাশকে সীমিত করা যায় না। নব নৃত্যে চিত্তে দোল খায়। শিহরণ জাগায় ভাব দ্যোতনায়। কোলাহলে মুখরিত করে মনের আল্পনায় স্মৃতি জাগানিয়া অন্তরের উৎফুল্ল বিহŸলতায়। আমরা সবাই সেই ক্ষণটুকুকে মধুর করে রাখতে চাই আগামীর শুভ কামনায়। বর্ষ আসে এবং যায়। ভবিষ্যত অতীত হয়। এভাবেই প্রকৃতির নিয়তি আমাদের ভাগ্য ললাটে। তবে একে আমাদের জীবন নায়ের দোলায় কতটুকু সফলতার পাতায় এঁকে রেখেছি তাই আমাদের মূল ভাবনা। এ বিষয়টিকে সামনে রাখলে আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কতটুকু প্রাণান্তর প্রচেষ্টায় নিয়োজিত আছি তা অবশ্যই একটা পরিসংখ্যান হিসেবে চোখের সামনে ভেসে উঠবে। এখন যেভাই হোক আমাদের জীবন থেকে ২০১৭ সাল গত হয়েছে। শুভ নববর্ষ ২০১৮ কে স্বাগত জানাই। তবে আমরা চাইনা বিগত সময়ের যা কিছু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জাতির ললাটে কলঙ্কের অনেক বোঝা যা জাতির মেরুদন্ডকে ভেঙ্গে দিচ্ছিল তা যেন আর কোন দিন আমাদের ভাগ্যে ফিরে আসে এবং ভবিষ্যত যেন সোনালী প্রভাতের ন্যায় সুখী, সুন্দর এবং ইনসাফপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নতুন পয়গাম নিয়ে আসে প্রতিটি মানুষের জন্য, এই প্রার্থনা আজ অন্তর জুড়ে মহান প্রভুর দরবারে। আমরা যেন আর কোন পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ না হই। এবং স্বাধীন সার্বভৌম উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের মর্যাদার নব উদ্যমে হিমাদ্রী সম উচ্চতার শিখরে সগৌরবে জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারি। তদ্রæপ ফি-বছর যেন নববর্ষের আগমনকে ঘিরে আমরা যেন ভবিষ্যত প্রত্যাশার সোনালী দিনগুলো দেশ এবং জাতির সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে আমাদের দেশপ্রেম চেতনায় সমস্ত কর্মকান্ড কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের লালন এবং সুখ স্বপ্নের দেশটি যেন বাস্তবে রূপায়িত হয়। সেই প্রত্যাশায় দেশবাসীর শুভ কল্যাণ কামনায় আবারো স্বাগত জানাচ্ছি ইংরেজী নববর্ষ ২০১৮ সালকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন