অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশের ব্যাংকগুলোতে লাগামহীনভাবেই চলছে অনিয়ম-দুর্নীতি। আর এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট একশ্রেণীর অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তারা। ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব অসাধু কর্মকর্তার কারণে ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ঋণ কেলেঙ্কারির নতুন নতুন ভয়াবহ ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনি, যুবক, বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটছে। এখানেই থেমে নেই কিছুদিন পূর্বে চাঞ্চল্যকর এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা। কয়েকদিন আগে জনতা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গ্রাহকের এফডিআর থেকে ২ কোটি ৩৫লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে গিয়ে ধরা পড়ে। যদিও এসব কেলেঙ্কারি-জালিয়াতি ছাপিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। এর আগে কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের এমন ঘটনা ঘটেনি। এতে দেশের ব্যাংকগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংক খাতের অতীতের কেলেঙ্কারি মূল হোতারা রাজনৈতিক কিংবা অন্যকোন প্রভাবে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা তো হয়নি, উল্টো ঘটনাগুলো নিয়ে অর্থমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, যা সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
অসাধু কর্মকর্তাদের চরম অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকে লুটপাট হয়েছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারীতে সোনালী ব্যাংকের লুট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এসব কেলেঙ্কারী বা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। অর্থমন্ত্রী অনেক বার অনেক কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তবে সেসব শুধু বক্তৃতায়ই সীমাবদ্ধ ছিলো। অবশ্য অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা দলের লোক।’
বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতির পর এবার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিেিটডের (ইউসিবিএল) এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ব্যাংকের এ এম ডি মো. শহিদুল ইসলাম বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ব্যাখ্যা প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ এম ডি শহিদুল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে ঋণ হিসাব বিআরপিডি সার্কুলার নং ১৫/২০১২ তারিখ ২৩/০৯/২০১২ এর শর্ত মোতাবেক যথাযথ ডাউন পেমেন্টে না নিয়ে পুনঃতফসিল করেছেন। বিভিন্ন শাখার মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন। এ ছাড়া ব্যাংকের পরিদর্শনে শীর্ষ ঋণ খেলাপি ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একজনেরই বিভিন্ন নামের সাতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সাতটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৪১ দশমিক ১১ কোটি টাকা। মো. শহিদুল ইসলাম তার ব্যাক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে প্রভাবশালী ওই ব্যাক্তির দুটি কোম্পানির ঋণ পুণঃতফসিল করেছেন। ধারাবহিকভাবে ব্যাংকগুলোতে এ ধরণের অনিয়ম চলতে থাকলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সূত্র মতে, শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এর আগেও বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারীর মূল হোতাদের একজন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিসমিল্লাহ গ্রুপের এ কেলেঙ্কারীরর সাথে জড়িত থাকায় পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে তার চাকরিও চলে যায় বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে তিনি এখনো দেশের বাইরে বিসমিল্লাহ গ্রুপের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে এমডি মো. শহিদুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি সাইফুর ইসলাম নন। একই সঙ্গে রং নাম্বার বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন