শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তনুর পরিবারকে দুই সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ

তদন্তে অগ্রগতি নেই : আন্দোলনের গতি বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলা তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় শেষ পর্যন্ত মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আইন-শৃঙ্খলা কোর কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হবার পর রাতে মামলাটি ডিবিতে নেয়া হয়। মামলা দায়েরের ছয়দিন অতিবাহিত হলেও হত্যাকারীদের খুঁজে পাওয়া তো দূরের কথা হত্যার কোন ক্লু বের করতে পারছে না পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো। ফলে মামলা তদন্তে আশানুরূপ অগ্রগতি না থাকায় কুমিল্লাসহ সারাদেশে এ নির্মম হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ আন্দোলনের গতি বাড়ছে। ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে নাগরিক সমাজসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। দাবি একটাই তনুর হত্যাকারীদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এদিকে নৃশংস হত্যার শিকার সোহাগী জাহান তনুর বাবা, মা, ভাই ও চাচাতো বোনকে শুক্রবার গভীর রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব-১১ এর একটি দল। এরপর গতকাল শনিবার বিকেলে তনুর মা, ভাই ও চাচাতো বোনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসা থেকে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গণমানুষের প্রতিবাদ আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠছে। তনু হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে আজ কুমিল্লা অভিমুখে ঢাকা থেকে লংমার্চ করার ঘোষণা দিয়েছেন মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। টানা ছয়দিন কুমিল্লার নগর গ্রাম গঞ্জ থেকে শুরু করে সারাবাংলা প্রতিবাদ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে। এক তনুর হত্যার বিচারের দাবিতে আজ রাজপথে লাখো তনু দাঁড়িয়েছে। লাখো তনুর ভাই, বাবা, মা দাঁড়িয়েছে। সেখানেই প্রতিবাদ হচ্ছে সেখানেই সব শ্রেনি-পেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করছে। গতি বেড়েই চলছে প্রতিবাদ আন্দোলনের। কিন্তু ছয়দিনে মামলার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়া নিয়ে নাগরিক সমাজে সংশয় দেখা দিয়েছে। থানা পুলিশের হাতে পাঁচদিন মামলাটি ছিল। এসময় মামলাটির তদন্ত কাজে ধীরগতির বিষয়ে জানা গেছে, ঘটনাস্থল সেনানিবাস এলাকা। আর তাই মামলা তদন্তে মূল প্রতিবন্ধকতাই ছিল সেনানিবাসের সংরক্ষিত এলাকা। পুলিশ চাইলেই যখন তখন সেখানে যাওয়া সম্ভব ছিলনা। আবার সোর্স নিয়োগ করাও অসম্ভব। সবমিলে ওই সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম শুক্রবার দুপুরে হতাশা ব্যক্ত করেই বললেন মামলার অগ্রগতির কোন ভালো খবর নেই।
এদিকে শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা কোর কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাতে মামলাটি থানা পুলিশ থেকে ডিবি পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। আবার শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগরের মির্জাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে সোহাগী জাহান তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও তার ছেলে নাজমুলকে ক্যান্টবোর্ডের কর্মকর্তারা সেনানিবাসের পাহাড় হাউজ এলাকার বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই রাতেই র‌্যাব-১১ এর একটি দল তনুর মা আনোয়ারা বেগম, ছোট ভাই রুবেল ও চাচাতো বোন লাইজুকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে কুমিল্লা র‌্যাব কার্যালয়ে আনা হয়। গতকাল শনিবার সকালে তনুর চাচা আলাল হোসেন গণমাধ্যমের কাছে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। এবিষয়ে র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ এর অধিনায়ক খোরশেদ আলম বলেন, সোহাগী জাহান তনু হত্যাকা-ের বিষয়ে কিছু তথ্য জানার জন্যই তনুর পরিবারের লোকদেরকে মুরাদনগর থেকে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় পাঠানো হয়।
সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলা দায়েরের পাঁচাদিন পর শুক্রবার রাতে এঘটনার রহস্য উম্মোচনে মামলাটি শেষ পর্যন্ত জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। ডিবির অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) একেএম মনজুর আলম গতকাল শনিবার বিকেলে মামলা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অধিকতর তদন্তের জন্যই মামলাটি ডিবিতে দেয়া হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করবো। পাশাপাশি এ হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনসহ প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারেও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
এদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার ৬ষ্ঠ দিনেও কুমিল্লাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবাদ আন্দোলন কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ মো: ওমর ফারুক বলেন, সেনাবাহিনীর এলাকার নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী তনু এভাবে নির্মম খুনের শিকার হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। আজকে তনু হত্যার বিচারের দাবি গোটা বাংলার মানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনা বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি ও মানবাধিকার সংগঠক আলী আকবর মাসুম বলেন, তনু হত্যাকা-ের ঘটনা প্রমাণ করলো আমরা কেউই নিরাপদ নেই। কিন্তু এঘটনার বিচার হতেই হবে। সংস্কৃতি সংসদ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মানিক বলেন, আজকে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, পেশাজীবী সকল মানুষ একটাই দাবি নিয়ে এসেছে তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত বিচার। রাজলহ্মী নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি ফাহমিদা জেবিন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম বলেন, তনুর হত্যাকারীদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। না হয় বিচারের বানী নিরবেই কাঁদবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন