ফারুক হোসাইন : মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) নিয়ে গ্রাহকদের মতামত জানতে তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। সারাদেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকরা প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে এবং গ্রাহক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা সংগ্রহের জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়। জরিপের জন্য গতবছর আগস্টে দুই মাসের সময়সীমা দিয়ে ১৫টি জেলার সদর উপজেলাসহ মোট তিনটি করে ৪৫টি উপজেলায় তথ্য সংগ্রহ করার কথা বলা হয়। তবে এত দিনেও ওই জরিপ কাজ শেষ করতে পারেনি বিটিআরসি। এখনো একটি জেলার তথ্য সংগ্রহের কাজ বাকি রয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা যায়। জরিপের কাজ শেষে অপারেটরদের সেবা মানের ওপর ভিত্তি করে র্যাংকিং করার কথাও জানিয়েছিল কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সব জেলায় তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। আর একটি জেলার তথ্য সংগ্রহ বাকি রয়েছে। সেটি সম্পন্ন হলেই কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেবে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো। তবে এই প্রতিবেদন বিটিআরসি প্রকাশ করবে কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানানো হয়।
মোবাইল ফোন গ্রাহকগণ অপারেটরদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে কিনা সেটি জানতেই গত বছর আগস্টে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয় কমিশন। সে সময় জানানো হয়, গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার (প্রাপ্ত সেবার মান) ভিত্তিতে মোবাইল অপারেটরদের একটি র্যাংকিং তৈরি করবে কমিশন। নি¤œমানের সেবাদানকারী অপারেটরকে সতর্ক করা এবং মান বাড়ানোরও তাগিদ দেয়া হবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পক্ষ থেকে। এজন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স ও স্পেকট্রাম ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের সমন্বয়ে তিনটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। এসব কমিটিকে ১৫টি জেলার ৪৫ উপজেলায় মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়। তারা ইতোমধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে অপারেটরদের দুর্বল নেটওয়ার্ক কভারেজ, কল ড্রপের হার, কল সেট আপ সাকসেস হার, জ্যামিং, থ্রিজি থেকে টুজি বিটিএস-এ আপগ্রেটেশন, বেসিক ফোন থেকে স্মার্ট ফোনে কল ট্রান্সফার, কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস নিয়ে অসন্তুষ্টি, কাস্টমার কপ্লেইন ম্যানেজম্যান্ট ইত্যাদি বিষয়ে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার তথ্য সংগ্রহ করেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, জরিপের মাধ্যমে মোবাইল গ্রাহকদের তথ্যের ভিত্তিতে কমিটি বিটিআরসিতে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অপারেটরদের কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে একটি র্যাংকিং তৈরি করা হবে। যেসব অপারেটরের কোয়ালিটি অব সার্ভিস নি¤œমানের হবে তাদেরকে সতর্ক করা হবে এবং গ্রাহকদের ভালো সেবা প্রদানের জন্য তাগিদ দেয়া হবে। যেসব জেলায় গ্রাহক পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার মধ্যে রয়েছেÑ ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, সিলেট, বগুড়া, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, রংপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, খুলনা, কক্সবাজার ও ঢাকা। আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে বিটিআরসি’র গঠিত কমিটি এসব জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে শহর, গ্রাম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাধারণ মোবাইল গ্রাহকদের সাথে কথা বলে এবং মোবাইল ব্যবহার করতে গিয়ে তারা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা জানতে বলা হয়। যদিও তখনই ওই দুই মাসে এতো বড় একটি কাজ করা কঠিন বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন। কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এটি বিরাট বড় একটি কাজ। বিশেষ করে এতোগুলো স্থানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। তবে দেরিতে হলেও এটি সম্পন্ন করতে পারলে গ্রাহকদের সেবার মান আরও উন্নত ও নিশ্চিত করা যাবে বলে তিনি জানান। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, প্রথমে যে ১৫টি জেলায় তথ্য সংগ্রহ করার কথা বলা হয় তা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জরিপের প্রতিবেদনকে পরিপূর্ণ করার জন্যই এটি করা হচ্ছে বলে বিটিআরসি’র একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।
যদিও কমিশনের পক্ষ থেকে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি মোবাইল অপারেটরদের কোয়ালিটি অব সার্ভিস এর উপর একটি নির্দেশনা জারি করে উল্লেখ করা হয়, কল ড্রপের হার বৃদ্ধি, দুর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ও কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা। এছাড়া ওই বছরই মার্চে বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে কলড্রপ ও ইন্টারনেট সেবার মান নিয়ে একটি জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যেখানে ফোন কলের সাকসেসের দিক দিয়ে সবার নিচে ছিলো বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। এরপরে রবি ও বাংলালিংক। বিটিআরসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী কমিশন অপারেটরদের কল ড্রপের হার সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ শতাংশ করতে বলা হয়েছে। একইসাথে প্রতি মাসের পারফরমেন্সের একটি প্রতিবেদনও কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন