অর্থনৈতিক রিপোর্টার : কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা, রাজস্ব আদায়ে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বিপাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান (এনবিআর) নজিবুর রহমান। গত কয়েকদিন ধরেই সচিবালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পর এবার এনবিআর চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও পরিবর্তন নিয়ে কানাঘুষা রয়েছে। এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অন্য সবার মতো আমি শুনছি, চেয়ারম্যান স্যারকে নাকি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এ ঘোষণা যে কোনো সময় আসতে পারে। এদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত থাকার নজির থাকলেও এনবিআরে ভিন্নতা রয়েছে। খোদ চেয়ারম্যান নিজেই নিয়োগ বাণিজ্য ও তদবির করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন কমিশনার স্বীকার করেন, পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে চেয়ারম্যান নিজে তাকে ডেকে তালিকা ধরিয়ে দেন, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ সুযোগে সংশ্লিষ্টরা আরও অনেক বেশি প্রার্থী নিয়োগে অনিয়মের সুযোগ নেন। একই সঙ্গে চেয়ারম্যানের তদবির উপেক্ষা করার নৈতিকতা বা সাহস রাজস্ব প্রশাসনের অনেকেরই নেই।
অপরদিকে কোথাও ভালো নেই এনবিআর চেয়ারম্যান। একদিকে কর্মকর্তাদের অনৈতিক চাপ দিচ্ছেন, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের বলছেন, হয়রানি বরদাশত করা হবে না। এ নিয়ে দু’দিকেই বিপাকে পড়েছেন তিনি।
যদিও এসবেই সীমাবদ্ধ নয়; এবার দক্ষতা ও কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে তিনি অবিলম্বে এনবিআর চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন চান। কিন্তু শক্তিশালী আমলাদের বাধায় তা হয়ে উঠছে না বলেও জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে নড়বড়ে অবস্থায় আছেন নজিবুর রহমান। কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিভিন্ন কারণে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা এই চেয়ারম্যান থেকে মুক্তি চাচ্ছেন। তাদের মতে, গত এক বছরে এনবিআরকে ধ্বংসের মুখে ফেলেছেন এই চেয়ারম্যান। রাজস্ব আদায়ে সঠিক কোন পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু বুলি আউড়িয়ে যাচ্ছেন। এনবিআরের কিছু কিছু কর্মকা- নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আরই এরই অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের গত ৮ মাসে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে এনবিআর চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের কথা শুধু মুখে বললেও সে অনুযায়ী কোনো কাজই করছেন না। একাধিক কর্মকর্তা জানান, আমরা অপেক্ষায় আছি কখন সরকারি অর্ডার আসবে ‘নতুন’ এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগের।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, দ্বিমুখী নীতির কারণে বিপর্যয়ে পড়েছেন চেয়ারম্যান। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে একদিকে কর্মকর্তাদের অনৈতিক চাপ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলির ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের বলছেন হয়রানি বরদাশত করা হবে না। এতে কারোরই কাছেই আস্থা অর্জন করতে পারেননি নজিবুর রহমান।
অথচ তিনি নিজেকে একজন সৎ কর্মকর্তা দাবি করে প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতের কথা জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে করদাতাদের কাছে এনবিআরকে ‘পরিবেশ বান্ধব’ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত বছরের ১১ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর করতাদাদের হয়রানী বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোরও আশ্বাস দেন। ব্যবসায়ীদের কাছে এনবিআরকে ‘নতুন’ এনবিআর হিসেবে পরিচয় করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অথচ এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তার ঘোষণা-প্রতিশ্রুতির সুফল পায়নি ব্যবসায়ীরা। বরং ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু এনবিআর কর্মকর্তাদের অনৈতিকতা, ঘুষ বাণিজ্য এবং হয়রানীতে অতিষ্ট। কেউ কেউ এনবিআরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার আচরণে ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনাও করছেন। আর তাই দেশের রাজস্ব আয়ের অন্যতম মাধ্যম এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে নিয়ে সম্প্রতি একটি দৈনিকে চাঞ্চল্যকর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। চেয়ারম্যানের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘এক বছর হয়ে গেছে অথচ এনবিআরের চেয়ারম্যান জানেনই না যে এনবিআর কীভাবে চলে।’ আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, ‘তাকে (নজিবুর) নিয়ে কাজ করা মুশকিল। কিন্তু তার সঙ্গে আছেন শক্তিশালী আমলারা। তিনি রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।’ অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি। কারণ এনবিআরের চেয়ারম্যান কোনো কাজকাম করেন না। হ্যাঁ, কিছুই করেন না তিনি। খালি বক্তৃতা দেন।’ এখনকার চেয়ারম্যান? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ। কিছুই করেন না তিনি। খালি বক্তৃতা দেন। তারও পুরো আচরণ হচ্ছে জনসংযোগ করা। করুক, আপত্তি নেই। কিন্তু নিজের কাজটা তো করতে হবে। এক বছর হয়ে গেছে, অথচ এনবিআরের চেয়ারম্যান জানেনই না যে এনবিআর কীভাবে চলে।
খোদ অর্থমন্ত্রীর মুখে নজিবুর রহমানের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রাজস্ব প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, এই অদক্ষ চেয়ারম্যান যত দ্রুত বিদায় হবে, ততই তা রাজস্ব আয়ের সহায়ক হবে। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ মনে করেন, এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। তাই এনবিআরকে চেইন অব কমান্ড ও সিস্টেম মেনে কাজ করা উচিত। নীতিনির্ধারণ বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে শুধু রাজস্বই নয়, কোনো খাতেই সুফল আসবে না। এনবিআরের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দূরত্ব থাকলে তা মিটিয়ে ফেলা উচিত বলে মনে করেন তিনি। ভালো গানের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটি গান ভালো হতে হলে বাদক, গীতিকার, সুরকারসহ সবার মধ্যে সমন্বয়ের দরকার রয়েছে। তেমনি নীতিনির্ধারণ বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে সব জায়গাতেই ছন্দপতন ঘটবে।
মাঠ পর্যায়ের রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে গেছে, রাজস্ব বোর্ডে মিটিংয়ের নামের ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় তাদেরকে। অযাচিত, অপ্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়। এসব করতে করতেই দিন পার হয়ে যাচ্ছে। সঠিকভাবে রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ দিতে পারছেন না। অপরদিকে সার্কেলভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চাপ দেয়া হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই ব্যবসায়ীদের চাপ দিতে হচ্ছে। আর এ কারণে ব্যবসায়ীদের কাছেও খারাপ হতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।
এনবিআর চেয়ারম্যানের এ সব অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা আঁচ করতে পেরে এর আগেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্রুপিং-ট্রুপিংয়ের কারণে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হয়নি। আগে রাজস্ব বোর্ড যেভাবে চলতো এখন হয়তো সেভাবে চলছে না। তবে আমি রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যানকে এসব ছোটখাটো বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে বলেছি এবং রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছি। অর্থমন্ত্রীর এ কথার সমাধানে না গিয়ে পাল্টা অর্থমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুরে দিয়ে বলেছিলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবাই আন্তরিক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোন কোন্দল নেই।
যদিও বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি পূরণে এডিআর ও বকেয়া কর মামলা থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন চেয়ারম্যান। অথচ এডিআর বিধিমালার কারণে ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন না। অপরদিকে মামলা থেকেই রাজস্ব আদায়ের যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন চেয়ারম্যান তা দীর্ঘমেয়াদী সুফল আনলেও বর্তমানে কোন সুফল পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এই দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় প্রকৃত রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় পড়েছে।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, চেয়ারম্যান হাতেগোনা কয়েকজন চামচা টাইপের কর্মকর্তাদের বলয়ে বন্দি। শতকরা ৯৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী তার কাজে ও আচরণে অসন্তুষ্ট। এই চেয়ারম্যান থেকে কবে মুক্তি পাবেন সেই দিনক্ষণ গণনা করছেন সবাই। তাদের প্রশ্ন, এনবিআরে বর্তমানে চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই নেই। সব ক্ষেত্রেই গুমোট পরিবেশ। প্রতিটি বিষয়েই চেয়ারম্যানের তদবির শুনতে হয়। না শুনলে বিভিন্ন অজুহাতে শাস্তি আর হয়রানির খড়গ নেমে আসে। বিশেষ করে নতুন নিয়োগ এবং বদলি বাণিজ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান নিজেই প্রভাব বিস্তার করেন। তার নির্দেশ অনৈতিক ও বেআইনি হলেও তা না মানার ক্ষমতা কারোরই নেই বলে তারা দাবি করেন। এজন্য কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের একাধিক কমিশনার তার বিরাগভাজন হয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু মুখে নতুন এনবিআরের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। কর জাল বাড়ানোর কথা বলা হলেও সেটা করতে না পেরে মন্দা ব্যবসার মধ্যে বিদ্যমান কর দাতাদের উপরই চাপ প্রদান করা হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীদের মধ্যে এনবিআরের ঝামেলা এড়াতে ব্যবসা বন্ধ রাখার মত অবস্থা হয়েছে।
রাজধানীর রমনা ভবনের কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা ভালো নেই। অথচ প্রতিদিনই বাড়ছে করের বোঝা। তারা জানান, আমরা ছোট ব্যবসায়ী, খুব সামান্য ব্যবসা। তারপরও কর দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কর্মকর্তারা প্রায়শই এসে আমাদের হয়রানি করেন। এভাবে অনেক ছোট ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানান তারা। ব্যবসায়ীদের মতে, শুধুমাত্র তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের জন্য চেষ্টা করা হয়। সরকারের বিভিন্ন লেভেলের কর্মকর্তা ও সব পেশার মানুষকে এর আওতায় আনতে না পারলে হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে একদিন ব্যবসায়ীরা কর প্রদান থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবে।
ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ বলেন, কর্মকর্তারা আকস্মিক অভিযান চালিয়ে খাতাপত্র জব্দ করছেন, মালামাল তল্লাশি শুরু করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেন। বলেন, আমাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার বা বিচারিক ক্ষমতা আছে। প্রয়োজনে গ্রেফতার করব। তিনি বলেন, এ ধরনের আচরণ করে ভ্যাট আদায় করা যাবে না। যে কোনো সময় আন্দোলন সৃষ্টি হয়ে যাবে। একই সঙ্গে যারা ভ্যাট দেয় বার বার তাদের হয়রানি আর অত্যাচার করা হয়। অথচ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা হচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ অংশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে প্রায় ৪৫ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ১শ প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের তালিকাভুক্ত। বাদবাকি প্রতিষ্ঠান কেন ভ্যাটের তালিকায় নেই যা রহস্যজনক।
ওবায়দুর রহমান নামে এলুমিনিয়াম খাতের ব্যবসায়ী নেতা জানান, কিছু দিন পূর্বে ১১টি কারখানায় আকস্মিক অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়। তিনি বলেন, এ সময় উদ্যোক্তাদের গ্রেফতারের হুমকি দেয়া হয়। রাজস্ব কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের বলছেন, প্রয়োজনে বেডরুমেও তল্লাশি চালানো হবে। ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা কি ব্যবসা, বিনিয়োগ বাদ দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাব? ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর এনবিআরকে মাত্রাতিরিক্ত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেয়ার সমালোচনা করে বলেন, প্রতি বছর গড়ে ১৫ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হলেও এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৩০ শতাংশ। ফলে কর্মকর্তারা তাদের উপর দেয়া ‘টার্গেটের’ চাপ ব্যবসায়ীদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ওবায়দুর রহমান বলেন, এনবিআর ‘কর্মকর্তারা আমাদের বলেন, টার্গেট দেয়া হয়েছে। কিছুই করার নেই। নইলে চাকরি চলে যাবে।’
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে চাই। সম্মানের সাথে ব্যবসা করতে চাই। হয়রানি চাই না; কিন্তু উপযুক্ত সম্মান না পেলে ব্যবসা করব কেন? আমাদের বাঁচতে দেন। আপনারাও বাঁচেন। ব্যবসায়ীদের অসম্মান করবেন না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে এনবিআরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজস্ব আদায় করার চাইতে তাদেরকে এনবিআরের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র পাঠাতেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বেশি। তাই সঠিকভাবে রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ দিতে পারছেন না। এছাড়া এনবিআরে অহেতুক মিটিং কর্মকর্তাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মিটিংয়ের সময় সকালে বললেও সারাদিন বসে থেকে সন্ধ্যায় মিটিং শুরু করার নিদর্শনও রয়েছে। এমনকি গভীর রাত পর্যন্তও এনবিআরে মিটিং চলে। তাই বাধ্য হয়েই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে করদাতাদের চাপ দিতে হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন