শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে দেশ অচল হয়ে যাবে -ওলামা লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ

সভা সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল

প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী ওলামা লীগসহ বিভিন্ন ইসলামী দল ‘সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা’, ‘সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন’ এবং ‘কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না’ Ñ সংসদে এ বিষয়ে বিল পাসের দাবিতে মানববন্ধন, মিছিল ও সভা করেছে। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিরাট মানববন্ধন কর্মসূচি পালনশেষে বিশাল মিছিল বের করে তারা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। ওলামা লীগ ও সমমনা ১৩ দলের পৃথক পৃথক সভা ও মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিলে দেশ অচল হয়ে যাবে।
ওলামা লীগের মানববন্ধনে উত্থাপিত অন্যান্য দাবিসমূহ হচ্ছে : ‘৭২ সাল থেকেই হিন্দুদের ওপর আওয়ামী নির্যাতন চলছে,’ ‘বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক,’ ‘৯৮ ভাগ মুসলমানের এদেশে গরু কুরবানি করা যাবে না’Ñএরকম চরম উস্কানিদাতা কট্টর সাম্প্রদায়িক সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে এদেশে নিষিদ্ধ করা। রাষ্ট্র্রীয় সম্পত্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমানদের সম্পত্তি রক্ষায় অর্পিত সম্পত্তি ও দেবোত্তর সম্পত্তি আইন বাতিল। মহান ২৬ মার্চকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদিন, ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে জাতিসংঘ কর্তৃক অবিলম্বে বিশ্বনেতা ঘোষণা করা। মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যের নিরসনে অধিকহারে সংখ্যালঘুদের নিয়োগ বন্ধ করা। শিশুহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ বন্ধে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা। ভারতে মুসলিম স্বার্থ সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখা। মানববন্ধনে আলহাজ লায়ন মাওলানা মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক্বের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেনÑআলহাজ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, শায়েখ আলহাজ মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী, মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, মাওলানা মুহম্মদ আহমাদুর রহমান, মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল্লাহ, ডা. এম সাইফুদ্দীন মিয়াজি, মাওলানা মুহম্মদ নূরুদ্দীন (মোহাদ্দেস) প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এদেশের ৯৫ ভাগ জনগোষ্ঠীই মুসলমান। বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টিরও অধিক দেশে সংখাগরিষ্ঠদের ধর্মই রাষ্ট্রধর্ম। এর মধ্যে ২৭টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম হলো পবিত্র দ্বীন ইসলাম। ২৬টি দেশে খ্রিষ্টান এবং ৫টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধসহ অন্যান্য। তাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ হওয়াই স্বাভাবিক, তেমনি রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ বহাল থাকাও স্বাভাবিক।
বক্তারা বলেন, যারা বলেন রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম নেই, ধর্ম হলো ব্যক্তির এবং রাষ্ট্রে একাধিক ধর্মাবলম্বীরা থাকায় কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। তাহলে একইভাবে রাষ্ট্রেরও কোনো ভাষা থাকতে পারে না। কারণ রাষ্ট্র কখনো কথা বলে না। কথা বলে ব্যক্তি। তাহলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা কি বাদ দেয়া হবে? যদি না দেয়া হয় তাহলে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবেও ‘ইসলাম’ বাদ দেয়া যেতে পারে না।
বক্তারা আরো বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে শুধু পবিত্র দ্বীন ইসলামকেই রাষ্ট্রধর্ম করা হয়নি, বরং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মকেও রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য ধর্মকেও যেখানে সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে, সেখানে পবিত্র দ্বীন ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম থেকে বাদ দেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ও বরদাস্তযোগ্য নয়। এ অবস্থায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার রিট কোনোভাবেই চলতে পারে না।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি ঢাবির উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ‘ধর্ম শিক্ষা থেকে দূরে সরে আসায় শিশু ও নারী নির্যাতন এবং হত্যা বেড়েছে। এজন্য নীতি-নৈতিকতা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব। আমরা মনে করি আরেফিন সিদ্দিক সাহেব সঠিক কথা বলেছেন। কারণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাসহ কোনো ক্ষেত্রেই ইসলামী শিক্ষা নেই। ইসলামী মূল্যবোধ তুলে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ‘সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাকের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ এটাও সংবিধান থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে মুসলমানরা ইসলামী আক্বীদা বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এ কারণেই শিশুহত্যা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এবং পরকীয়ার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটছে। এগুলো অবসানে সর্বত্র ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ‘পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফবিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’ এটা সংসদে বিল পাস করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, অর্পিত সম্পত্তি মূলত ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ের শত্রু সম্পত্তি আইন থেকে এসেছে। পাক-ভারত যুদ্ধের সময় যারা দেশ ত্যাগ ভারতের পক্ষাবলম্বন করেছিল, তাদের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ গণ্য করা হয়। এ যুদ্ধের সময় ভারত কর্তৃক ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষিত মুসলমানদের সম্পত্তি এখনো ভারতীয় মুসলমানদের ফেরত দেয়া হয়নি। বর্তমানে শুধু মুম্বাইতে ১৬ হাজার শত্রু সম্পত্তি হিসেবে গণ্য মুসলমানদের সম্পত্তি রয়েছে, যা ফেরত পেতে ৫৫০টি মামলা হলেও মুসলমানদেরকে তাদের ভূমি ফেরত দেয়া হয়নি। তাই ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য সম্পত্তিকে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করা ঠিক হবে না। এটা এখন সরকারী সম্পত্তি। সরকারকে তা রক্ষা করতে হবে।
বক্তারা বলেন, চাকরির ক্ষেত্রে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের নিয়োগ জনসংখ্যার আনুপাতিকহারে করতে হবে। কারণ সংখ্যালঘুরা আনুপাতিক হারের চেয়ে অকল্পনীয় বেশি হারে সুবিধা পাচ্ছে। প্রশাসনকে সংখ্যালঘুকরণ করা বন্ধ করতে হবে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিমকোর্টে নিয়োগকৃত ৫৮ জন মুদ্রাক্ষরিক তথা অফিস সহকারীর মধ্যে প্রধান বিচারপতির নিজ জেলা মৌলভীবাজারে ১১ জনের মধ্যে ১০ জন হিন্দু নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালের অক্টোবরে পুলিশের এসআই পদে নিয়োগে ১৫২০ জনের মধ্যে হিন্দু নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৩৪ জন যা মোটের ওপর ২১.৯৭ শতাংশ। ২০১১ সালে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইতে নিয়োগের ৯৩ জনের মধ্যে হিন্দু নিয়োগ করা হয়েছে ২৩ জন, যা মোটের ওপর ২৪.৭৩ শতাংশ। সম্প্রতি ষষ্ঠ ব্যাচে সহকারী জজ পদে নিয়োগ দেয়া ১২৪ জনকে। এর মধ্যে ২২ জনই হিন্দু। শতকরা হিসেবে ১৭ শতাংশ। এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মুসলিম দেশে মুসলমানদের প্রতি ব্যাপক বৈষম্যের দাবিই দৃঢ় হচ্ছে। যাতে হেফাযতসহ বিরোধীরা সুযোগ পাচ্ছে।
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের পর এক বিরাট মিছিল জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম উত্তর গেটে জমায়েত হয়। মিছিল শেষে শহীদ বঙ্গবন্ধু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহের মাগফিরাত কামনা করে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হায়াতে তৈয়বার জন্য দোয়া মোনাজাত করেন- কাজী মাওলানা আহমাদুর রহমান।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইসমাইল নানুপুরী বলেছেন, সরকার যদি ইসলামবিরোধী শক্তির চক্রান্তের সাথে মিশে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিতে চায় তা হলে এদেশের মুসলমানরা কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নেমে এ চক্রান্ত প্রতিহত করবে। তিনি আরো বলেন, বাংলা ভাষা যেমনি এদেশে রাষ্ট্রভাষা, তেমনি ৯৫ ভাগ মুসলিমের দেশ বাংলাদেশে ইসলামই রাষ্ট্রধর্ম। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিলে রাষ্ট্রভাষা এবং রাষ্ট্রের ৩ নীতিও চলবে পবিত্র কুরআনের আইনের ভিত্তিতে। আর এটা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল দিনব্যাপী বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বশীলদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক-সহ মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ ও মাওলানা কোরবান আলী ও মাওলানা জি এস মেহেরুল্লাহ প্রমুখ।
আজকের কর্মসূচি : রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা মুহাম্মদপুরের উদ্যোগে আজ সকাল ১১টায় মুহাম্মদপুর টাউন হলে এক সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল হবে। বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, প্রি: মাওলানা আবুল কালাম ও মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাহুদ্দীনসহ ওলামায় কেরাম ও নেতৃবৃন্দ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
২৭ মার্চ, ২০১৬, ৩:৫৩ পিএম says : 0
Arsad sahab kicu balanakeno!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন