সেলিম আহমেদ, সাভার : স্বাধীনতার ৪৫তম বার্ষিকীতে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো জনতার ঢল নেমেছিল। বেলা যতই বেড়ে চলছে ততই ফুলে ফুলে ভরে ওঠতে শুরু করে শহীদ বেদি। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী।
শনিবার ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি। সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হয়ে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। তিন বাহিনীর সু-সজ্জিত একটি চৌকসদল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় মন্ত্রী পরিষদবর্গ, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনৈতিকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদদের বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর দমন অভিযানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। বরাবরের মতোই রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটিকে পালন করা হচ্ছে জাতীয় দিবস হিসাবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়।
সকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ বলতে কিছু নেই। যা ঘটছে তা সবই সন্ত্রাসী কর্মকা-। এর সঙ্গে রং লাগিয়ে জঙ্গিবাদ বলা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও এখনো দেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। রাজনৈতিক দলাদলির কারণে দেশ পিছিয়ে পড়েছে। জঙ্গিবাদ শব্দটা আমি বেশি বুঝি না। যা ঘটছে তা সবই সন্ত্রাসী কর্মকা-। এসবের কারণেই দেশ পিছিয়ে পড়ছে।
এসময় এরশাদের সাথে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারসহ জাতীয় পাটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া বিএনপির সম্মেলনে গণতন্ত্র নিয়ে নানা গলাবাজি করলেও তাদের দোষর জামায়াত-শিবির ও রাজাকারদের ত্যাগ করার ব্যপারে রহস্যজনক নিরবতা পালন করেছেন। এই নিরবতা পালনের মাধ্যমে তিনি জামায়াত-শিবিরের জঙ্গীবাদ ও আগুন সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। অতীতে আমরা দেখেছি- তিনি (খালেদা) জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ছিলেন, এখনও আছেন। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীবাদকে না ছেড়ে তিনি যে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন সেটিও একটি চক্রান্ত।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় নেতাদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় খালেদা জিয়ার সাথে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দলসহ সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়া হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী একটি দল। আজকে আমাদের স্বাধীনতার ৪৫ বছর হতে চলেছে। এখন সময় এসেছে নতুন সমাজ ও নতুন দেশ গড়ার। এ জন্য বেগম জিয়া যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন দেশ গড়া। গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের যে কাজ আমরা করে যাচ্ছি, স্বাধীনতা দিবস সেই কাজকে আরও বেগবান করবে।
এর আগে বিএনপি’র চেয়ারপারসনের আগমন উপলক্ষে সাভার-আশুলিয়ার স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অপেক্ষা করেন। পরে চেয়ারপারসনের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলের সদস্যসহ নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন ও ফুল নিয়ে সৌধ প্রাঙ্গণের বাহিরে অপেক্ষমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকেন।
পরে পর্যায়ক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদ্যালয়, আশুলিয়া প্রেস ক্লাব, সাভার প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, জাতীয় পার্টি, যুবলীগ, যুবদল, যুব ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, কৃষক লীগ, জাসাস, মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় বসানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন