বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

থমকে গেছে উন্নয়ন কাজ

সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল বিভাগে ধীরগতি

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার ও তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হবে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। এ প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। চলতি মাসে কাজ শুরুর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিদের্শ দেয়ার পরেও এখন পর্যন্ত কোন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অন্যদিকে প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ নিয়েও বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নতুন চেয়ারম্যান যোগদানের পর সকোরের নিদের্শ মোতাবেক সকল কাজ ই-টেন্টারের মাধ্যমে করার জন্য চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান সিভিল এডিভয়েশনের প্রকৌশল বিভাগকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে গত ৬ বছরে এলটি এম পদ্ধতিতে শত শত কোটি টাকা লুটপাটের কারণে এ পদ্ধতি বন্ধ করে দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। এ কারণে সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল বিভাগ নাখোশ হয়ে সকল ধরনের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় ওই সব দুর্নীতিবাজ চক্র ভেতরে ভেতরে বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ফলে প্রকৌশল বিভাগ সিভিল এভিয়েশনের সকল কাজ প্রায় বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বসেছে।
তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি থার্ট টার্মিনাল ও হাঙ্গর নির্মাণসহ সকল কাজে গতি আসার জন্য তাগিদ দিয়েছে। কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেছেন, সব ধরনের আইনি জটিলতা ও কারিগরি সমস্যা কাটিয়ে দ্রæততার সঙ্গে প্রকল্প দুটির কাজ শেষ করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
তিনি আরও বলেন,বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের অনেক কাজ শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। কমিটি তাদের সতর্ক হতে বলেছে।
পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই প্রকল্পে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ না দিয়ে সিএএবির প্রধান প্রকৌশলী নিজেই পিডির দায়িত্বে রয়ে গেছেন। তবে ২০২২ সালের জুনের আগেই প্রধান প্রকৌশলীর চাকরি মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে । অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের জন্য শুরুতেই নানা অনিয়মের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়। প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দ বিকাশ গেস্বোমীর বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দুদকে। দুদক তা তদন্ত করছে। এছাড়া ইতোপূর্বে দুদক প্রধান প্রকৌশলীর দুর্নীতি অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতে বিরুদ্ধে কয়েক দফায় তদন্তে নামলেও রহস্যজনক কারণে তা বার বার থেমে যায়। ফলে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে তাকে পরিচালক নিয়োগ দেয়াতেও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা তদন্তাধীন রয়েছে তাকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি রহস্যজনক। এছাড়া ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই বছর আগে যার চাকরীর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তাকে দিয়ে ওই প্রকল্পটি সুষ্টভাবে সম্পন্ন হবে কিভাবে এমন প্রশ্ন তোলেছেন সিভিল এভিয়েশনের একাধিত কর্মকর্তা।
্ও ব্যপারে প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ সংসদী কমিটি সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্শাণ কাজ কবে শেষ হবে তা বলা মুসকিল। কারণ এখন পর্যন্ত সিভিল এভিয়েশন প্রকৌশল বিভাগ প্রকল্পের কাজে গতি আনতে পারেনি। অত্যান্ত ধীরগতিতে কাজ চলছে। এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একাধিক বার সর্তক দাগিদ দেয়া গয়েছে।
সিভিল এভিয়েশনের একটি সুত্র জানায়, নতুন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান যোগদানের পর তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি ও কাজের স্বচ্চতার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। দ্রæত গতিতে কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
শাহজালালের তৃতীয় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। তৃতীয় টার্মিনাল ছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় রানওয়ে ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পে জাইকার নমনীয় ঋণ ১১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ইট, বালু, সিমেন্ট ও শ্রমিক মজুরিসহ অন্যান্য ব্যয়ের হিসাব ধরা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য অনুযায়ী বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে বড় ধরনের অর্থ লুটপাটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) বলছে, জাইকার নমনীয় ঋণের অর্থায়নে অন্যান্য দেশে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ব্যয় বিবেচনা করে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির অঙ্গভিত্তিক ব্যয় হিসাব করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে নির্মাণসামগ্রী ও শ্রমিক মজুরি অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক কম।
পরিকল্পনা কমিশন, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সিএএবিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য দেশে বাস্তবায়িত প্রকল্পের নির্মাণব্যয়ের সঙ্গে তুলনা না করে বাংলাদেশের প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা করে ব্যয় নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পাবলিক ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি), সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কিংবা ঢাকা ওয়াসার নির্মাণ রেটের যাছাই করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্ত সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল বিভাগ বিষয়টি আজো আমলে নেয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাাবিত ডিপিপি তৈরির আগে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এরপরও প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরামর্শ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭১ কোটি টাকা। অযৌক্তিক এই প্রস্তাবে আপত্তি জানানো হলেও কোনো কিছুই মানতে নারাজ সিএএবি এর প্রখৌশল বিভাগ। এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল সন্ধ্যায় সিএএবির প্রধান প্রকৌশলী সুদেন্দু বিকাশ গোস্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
সিএএবি সূত্র জানায়, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করে নতুন তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামোর নকশা তৈরি করা হয়েছে। বিমানের পরিবহনে বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় শাহজালালের বর্তমান টার্মিনালটি ২০১৮ সালের মধ্যে ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে এবং ২০২৫ সালের ১ কোটি ৪০ লাখ যাত্রী, ২০৩৫ সালে ২ কোটি ৪৮ লাখ যাত্রী বৃদ্ধি পাবে। এ কারণে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন