বেশ কয়েকটি স্কুলে বখাটে যুবকদের নিয়ে গড়ে উঠছে একাধিক গ্রুপ।
আইনি দুর্বলতা, পরিবারের নজরদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের উদাসীনতাই মূল কারণ।
কিশোর সন্ত্রাসীদের উত্থানে অশান্ত হয়ে উঠছে খুলনাঞ্চল। সম্প্রতি স্কুল কলেজ পড়–য়া ছাত্র একের পর এক খুন, ইভটিজিং ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে ছাত্রীদের আত্মহত্যায় বাধ্য করা, মাদক চোরাচালান ও টেন্ডারবাজিতে কিশোররা হটকেক। রীতিমত ভীতিকর অবস্থা সর্বত্র। এরই কারণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষাঙ্গন। পর পর কয়েকজন স্কুল ছাত্র খুন হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে অভিভাবকরা।
খুলনা মহানগরীসহ বিভাগের চরমপন্থীপ্রবন জেলাগুলোতে তালিকা করা হয়েছে সহস্রাধিক কিশোর সন্ত্রাসীদের। এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য দ্রুত র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা অভিযানে নামবে। ইতোমধ্যে তালিকাভ্ক্তু এসব উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের ওপর র্যাব পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কড়া নজরদারি শুরু করেছে। তবে র্যাব পুলিশ এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এদেরকে এতদিন বিশেষ কোন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। অথচ সা¤প্রতিক সময়ে বড় ধরনের কিলিং মিশনে কিশোর ও যুবক বয়সী টেররদের অংশগ্রহণ উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এই কিশোর সন্ত্রাসীরাই এখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছে বিষ ফোঁড়ার মত।
সূত্রমতে, খোদ খুলনা মহানগরীর কিশোররা ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ইভটিজিং, মাদক ব্যবসা ও খুনের মতো বড় অপরাধ ঘটছে তাদের দ্বারা। স¤প্রতি নগরীর উঠতি বয়সী যুবকদের বখাটেপনা ছাপিয়ে এসব অপরাধের জন্ম নিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। যে বয়সে এসব শিশু-কিশোদের লেখাপড়া আর খেলাধুলায় মনোনিবেশ করার কথা সেই বয়সে তারা ফৌজদারী অপরাধের আসামি। সামাজিক অবক্ষয় এর জন্য দায়ী হলেও আইনী দুর্বলতা, পরিবারের নজরদারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের উদাসীনতাই মূল কারণ হিসেবে মনে করেন অভিজ্ঞজনেরা।
সূত্রমতে, গত ২০ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় খুলনা পাবলিক কলেজ ক্যাম্পাসে কনসার্ট চলাকালে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় ফাহমিদ তানভীর রাজিনকে। এ ঘটনায় রাজিনের পিতা শেখ জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। যাদের নামে মামলা করা হয়েছে তারা সকলই কিশোর ও স্কুল ছাত্র।
গত ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে রূপসা বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী খলিলুর রহমান সিয়ামকে (১৫) সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত সিয়ামের বন্ধুরা জানায়, ‘সিয়ামের বন্ধু রায়হানের সাথে স্থানীয় ‘কাদের’ কাকার ছেলের সাথে তর্কাতর্কি হয়। পরবর্তীতে সিয়ামকে এলাকায় একা পেয়ে তারা ধরে নিয়ে যায়। রনি ও জনিসহ এলাকার ছোট গ্রুপের সাথে রায়হানের গন্ডগোল হয়। এর জের ধরেই সিয়ামকে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।
অপরদিকে, নগরীর সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজে অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী মনিরা আক্তার মুন্নী (২০)কে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এ সময় সে জীবন বাঁচাতে ঠেকাতে গেলে তার ডান হাতে ছুরিকাঘাত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া খুলনার ভৈরব নদে নিখোঁজ হওয়ার সাতদিন পর মিঠুন কুমার দাস (২৩) নামে এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফুলবাড়ী গেট সংলগ্ন ওই নদের ফেরির পন্টুনের পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, টেন্ডারবাজি, স্মাগলিং, মাদক চোরাচালানসহ সকল কর্মকান্ডে প্রভাব বিস্তারে কিশোর ক্যাডাররা এখন হটকেক। আন্ডারওয়ার্ল্ডে এদের পজিশন ও ডিমান্ড চোখে পড়ার মত। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে এনকাউন্টারে বাঘা বাঘা সন্ত্রাসীরা নিহত হওয়ায় পর দল পরিচালনার দায়িত্ব এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রন চলে যাচ্ছে কিশোর সন্ত্রাসীদের হাতে। উঠতি বয়সী এসব কিশোর সন্ত্রাসীরা এ অঞ্চলে হত্যা, অপহরণসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে। র্যাব পুলিশের অভিযান সত্তে¡ও কিশোর সন্ত্রাসীরা মাদক দ্রব্য পাচার, বিক্রি, অস্ত্র বেচা কেনা, মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি ও চরমপন্থী পরিচয়ে বেনামে চিঠি দিয়ে তটস্থ করছে সাধারণ মানুষকে।
অপরদিকে, নগরীরর বেশ কয়েকটি স্কুল ও বখাটে যুবকদের নিয়ে গড়ে উঠছে একাধিক গ্রুপ বা গ্যাং। সাধারণত ব্যক্তি ও বিশেষ নামে করা এসব গ্রুপের সদস্যরা এক এক এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। এ সব গ্রুপে বেশির ভাগ সদস্যরা ১৮ বছরের নিচে। এ সকল গ্রুপের কোন সদস্যের কারো সাথে ঝগড়া ও তর্ক করলে বাকিরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
র্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, এসকল গ্রুপের ছেলেরা খুবই বেপরোয়া। ইভটিজিং, অস্ত্র, মাদকসহ নানা অপরাধে এরা জড়িত।
খুলনা জর্জ কোর্টের আইনজীবী জি এম কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে মাদক বহন ও বিক্রিতে এসব কিশোরদের ব্যবহার করা হয়। কারণ আইনে তাদের কঠোর শাস্তির বিধান নেই। ১৮ বছরের নিচে কেউ আসামি হলে তাকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। এখানে জেলের তুলনায় তারা ভালই থাকে। এমনকি খুনের মত মামলায় তাদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা হতে পারে। এর আগেই এদের জামিনে বের করা সম্ভব। এজন্য গডফাদাররা এসব শিশুদের নানা অপরাধে ব্যবহার করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন