মুহাম্মদ আবুল বাশার
মানুষ চোখ মেলে দেখলে সর্বপ্রথম দেখে নিজকে ও নিকটবর্তী বস্তুসমূহ তার পরে উপরে দেখে আকাশ।
প্রথম আসমান : তারকা রাজিসজ্জিত প্রথম আসমান যার অতি সামান্য অংশই চোখে অথবা আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দেখা যায়।
দ্বিতীয় আসমান (অদৃশ্য), তৃতীয় আসমান (অদৃশ্য), চতুর্থ আসমান (অদৃশ্য), পঞ্চম আসমান (অদৃশ্য), ষষ্ঠ আসমান (অদৃশ্য), সপ্তম আসমান (অদৃশ্য)
বাইতুল মামুর (অদৃশ্য) : মালাইকাহ্ (আলাইহিমুস সালাম) গণের যিয়ারত ও সালাত আদায়ের মসজিদ। একেক জন ফেরেশতা সমগ্র হায়াতে একবার মাত্র এই মসজিদে সালাত আদায়ের সুযোগ পায়।
সিদরাতুল মুনতাহা (অদৃশ্য) : সিদ্রাতুল মুনতাহার ডান পাশে আলা ইল্লিয়্যীন। এখানে মানুষের ওফাতের পরে নেককার বান্দাদের আরওয়াহ রাখা হয়। আর বদকার লোকের আরওয়াহ রাখা হয় জাহান্নামের সর্বনি¤œ স্তরে তাহাতাস্সারার সিজ্জিন নামক স্থানে। নেককার বান্দার নফসে মুতমাইন্না বদকার লোকের নফস কবরেই থাকবে। যেহেতু আব (পানি) খাক (মাটি) বাদ (বায়ূ) এবং আতস (আগুন) এর সমন্বয়ে মানুষের দেহ গঠিত। (জীবাত্মাই নফ্স)
জান্নাত : জান্নাত ৮টি। ৮টি জান্নাতের পর থেকে ৭০ হাজার নূরের পর্দা বিরাজমান।
আরশে আজিম : আল্লাহ আরশে আজিমের রব। যেমনিভাবে অন্যান্য মহাসৃষ্টির রব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আল্লাহতাআলার হুকুম গুলো আরশে আজিমের মাধ্যমে নি¤œ জগতে জারি হয়। ইস্তিওয়া (আরশে সমাসীন হওয়া) আল্লাহতাআলার কালামে পাকের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি কিন্তু উহার প্রকৃত হাক্বিক্বত আল্লাহই ভালো জানেন।
লওহ্ েমাহফুজ : সৃস্টি জগতের সব কিছু তথ্য এখানে লিখা আছে।
আলমে আরওয়াহ্ : আল্লাহ্তাআলা আরওয়াহ্ এক সাথে সৃস্টি করে এখানে রেখেছেন। পর্য্যায়ক্রমে আল্লাহর হুকুমে রুহ্ গুলো মায়ের উদরে পাঠানো হয়।
আলমে মেছাল (প্রতিরুপ জগত) : দৃশ্য অদৃশ্য সৃস্টি সমূহের (বিশেষ করে জ্বীন ও মানুষের) কর্মকান্ডের একটি অদৃশ্য প্রতিরুপ ছুরত (প্রতিচ্ছবি) এখানে রক্ষিত হয়। উহা কখনো লয় ও ক্ষয় হবে না। হাশরের ময়দানে উহা বাস্তব রুপ ধারন করবে যেন আল্লাহতাআলার কুদরতী সি, সি, ক্যামেরা।
আলমে আমর : আল্লাহতাআলার কুদরতী হুকুমের জগত। ঐ জগতকে আলমে জাবারুত (আল্লাহর মহা শক্তির জগতও বলা হয়)।
ওয়াজেবুল অজুদের নূর : আল্লাহতাআলার সৃস্ট নূর। আল্লাহর সিফাতি নূরের জিল্লী নূর (নূর-ই- খালক)। আল্লাহতাআলার আলমে গায়েবও আলমে শাহাদতের অস্তিত্ব আল্লাহর কুদরত (মহাশক্তির) বাস্তব প্রমান। মহাসৃষ্টির অস্তিত্বদান, পয়দাকারী হিসাবে আল্লাহর জাত (সত্তা) ওয়াজেবুল অযুদ। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার রহস্যময় বাতেনী ও জাহেরী সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় শিরক মুক্ত আল্লাহর কুদরতী বিকাশের মধ্যে ভারসাম্য পূর্ণ সুশৃঙ্খল ঐক্য বিরাজ করছে। তৌহিদ রিসালত ও আখিরাতে ঈমান (ইয়াক্বীন) ইসলাম ধর্মের মৌলিক ভিত্তি। বাত্বিনী ও জাহিরী সৃষ্টি সমূহ আল্লাহর ওয়াহদানিয়ত (একত্বের) সাক্ষী। গুপ্ত ও ব্যক্ত সৃস্টি সমূহ আল্লাহর একত্বের সাক্ষী ও বাস্তব প্রমাণ। উপস্থাপিত আলোচনা ঈমান (ইয়াক্বীন) এর বিষয় সমূহের অর্ন্তভুক্ত।
(সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা) : ওয়াজেবুল অজুদের নূর আল্লাহর সিফাত সমুহের সম্মিলিত প্রতিবিন্ব (ছায়া) নূর। আরবিতে বলা হয় জিল্লিনের অজুদী নূর। আল্লাহ মাখলুকের মিছাল থেকে পবিত্র তারপরেও বলা যেতে পারে যেমন মানুষের হুবহু একটা ছায়া থাকে কিন্তু ছায়া ও মূল মানুষ এক নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাত্বেনী ও জাহেরী কুদরতী বিকাশ মহান আল্লাহর দয়া ও মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। বাত্বেনী জগত সম্পর্কে কিছুটা মেছালী অনুভব করা যেতে পারে অন্তর জগতের মাধ্যমে। (প্রকৃত অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন)। আল্লাহু আলামু।
আল্লাহতাআলার আসমা ও সিফাতের নূর : আল্লাহতাআলার আসমা ও সিফাত অসংখ্য। তবে ইসলামি শরীয়ত ও কোরআন হাদীসে কিছু আসমা ও সিফাতের বর্ননা আছে। আল্লাহতাআলার আসমা ও সিফাতের হাক্বিক্বত আল্লাহর জাতে পাকের সাথে মিশ্রিত (ইহা হক্কুল ইয়াক্বীন) যেমন সূর্যের আলো সূর্য নয় কিন্তু মূল সূর্য থেকে আলাদা নয়। আল্লাহ মাখলুকের মিছাল থেকে পবিত্র (আল্লাহু আলামু)।
আল্লাহতাআলার জাত (সত্তা) নূর : আল্লাহু (হুআল্লাহু) এর আসমা ও সিফাত জাত নয়। জাতে পাক থেকে আলাদা নয়। আল্লাহ তার পাক কালামের মাধ্যমে নিজেকে যেভাবে প্রকাশ করেছেন উহার উপর জিকির ও ফিকির ছাড়া আল্লাহর জাতে পাকের প্রকৃত মারেফত ও হাক্বিক্বত বুঝবার ও আয়ত্ব করার ক্ষমতা মানব জাতি, জ্বীন ও মালাইকাহ্ (ফেরেশতা) কূলের সাধ্যাতীত। খালেক মাখলুকের ব্যাবধান হামেশা বিরাজ করছে এবং মহাবিশ্ব লয় হওয়ার পরেও বিরাজ করবে। আল্লাহ নূরের সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহর জাত (সত্তা) এবং সৃষ্ট নূর এক নয়। মাখলুকের মধ্যে সরাসরি হুলুল (অনুপ্রবেশ করা) থেকে আল্লাহর জাত পবিত্র। দুর্বোধ্য ও জটিলতার অবকাশ এখানে নেই। আল্লাহু আলামু (প্রকৃত অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন)।
লা-জামান লা-মাকাম : ঐ রহস্যময় জগতের রহস্য আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
বিঃদ্রঃ আল্লাহ হাইয়্যুল কাইয়্যুম।আল্লাহতাআলার কুদরত (মহা-শক্তি) আফয়াল (কার্যাবলী) ইলম (মহাজ্ঞান) ইরাদা (ইচ্ছা) তথা সিফাতি নূরের মাধ্যমে মহা বিশ্বকে এহত্বা (বেষ্টন) করে আছেন। আর সৃষ্টিজগত হলো জাতি ও সিফাতী নূরের জিল্লিন।
জিল্লিনের ব্যাখ্যা : স্বচ্ছ পানির মধ্যে নারিকেলসহ নারিকেল গাছ দেখা যায়। প্রকৃত পক্ষে উহা নারিকেল গাছ ও নারিকেল নয়। উহার প্রতিবিম্ব ছায়া (জিল্লিন)। বলা যায় চন্দ্রের আলো। সুতরাং হাক্বিক্বত এই যে, আল্লাহ (আয্যা ও জাল্লা) বস্তুর সাথে শিরক থেকে পবিত্র। আমরা শিরক ও কুফর থেকে আল্লাহতাআলার কাছে পানাহ্ চাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জাত গুপ্ত। আল-কোরআন এর সূরা হাদীদ-৩ (তিন) আয়াত। মূল আয়াতের বাংলা উচ্চারণঃ হুওয়াল আওওয়্যালু ওয়াল আখিরু ওয়াজ্জাহিরু ওয়াল বাত্বিনু ওয়া হুওয়া বিকুল্লিশাইয়িন আলিম। সূরা হাদীদ-০৩ আয়াতের মর্মানুযায়ী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা গেল- বাংলা উচ্চারণ : লা- আওওয়্যালা ইল্লাল্লাহ লা-আখিরা ইল্লাল্লাহ, লা-ক্বাদিরা ইল্লাল্লাহ লা- বাতিনা ইল্লাল্লাহ লা- আলিমা ইল্লাল্লাহ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
প্রকৃত হাক্বিক্বত এই যে : আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর পূর্বে কিছুই নেই, আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর শেষে কিছ্ইু নেই, আল্লাহ ছাড়া মহাশক্তিশালী কেহ নেই (জাহিরী বাত্বিনী মহাজগৎ ও উহার মধ্যে যাহা কিছু আছে পয়দা করা আল্লাহর কুদরতের চাক্ষুস প্রমাণ বহন করে), আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত গুপ্ত কেহ নেই, আল্লাহ ছাড়া মহাজ্ঞানী কেহ নেই (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই)। শরীরধারী মানুষের সীমিত শক্তি, সীমিত জ্ঞান মহান আল্লাহর দান ও দয়ার বহিঃপ্রকাশ (আলহামদুলিল্লাহি আলা যালিকা)। বাত্বেনী জগতের আংশিক বাস্তব সত্য অবস্থা জারি হবে আলমে বরযখ (কবর জগৎ) থেকে। পরিপূর্ন বাস্তব অবস্থা জারি হবে কেয়ামতের পরে হাশরের ময়দানে। জাহেরী জগতের চাইতে বাত্বেনী জগতের বাস্তবতা সব চাইতে বেশী ও চিরস্থায়ী। উপস্থাপিত খালেক মাখলুক সম্পর্কিত বর্ননার প্রকৃত হাক্বিক্বত আল্লাহই ভালো জানেন। (আল্লাহু আলামু, আল্লাহু আলামু বিমুরাদিহী)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন