\ এক \
জাহান্নাম আল কোরআন ও আল হাদিসে ব্যবহৃত একটি আরবি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হলো: অগ্নিকুন্ড , আগুনের গর্ত, শাস্তির স্থান, অতল গহব্বর ইত্যাদি। আল কোরআন ও আল হাদিসে একে আন নার বলেও বর্ণনা এসেছে। পারিভাষিকভাবে জাহান্নাম হলো, এমন আগুনের নাম যেখানে আল্লাহ তায়ালা কাফির ও পাপী তথা মন্দ লোকদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফলাফল হিসেবে নিরন্তর শাস্তি প্রদান করবেন। জাহান্নামের অধিকাংশ শাস্তিই আগুনের বা আগুন কেন্দ্রিক তাই জাহান্নামকে আন নার নামে নামকরণ করা হয়েছে। জাহান্নাম মানেই হলো শাস্তি আর শাস্তি। যেখানে অনবরত ও অফুরন্ত শাস্তি চলতেই থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: যারা তাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহে অবিশ্বাস করেছে তাদের জন্য রয়েছে অতিশয় যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। (সূরা জাছিয়া, আয়াত ১১) অন্যত্র আল্লাহ পাক আরো বলেন: আর তাদের বিষয়টি আপনাকে যেন চিন্তিত না করে যারা দ্রæত গতিতে কুফরীতে নিমজ্জিত হয়। নিশ্চয়ই তারা আল্লাহর কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আল্লাহ চান পরকালে যাতে তারা কল্যাণের কোন অংশ লাভ না করুক। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৭৬) জাহান্নামে সাতটি দরজা রয়েছে। নিজ নিজ পাপের পরিধি বা পরিমাণ অনুসারে জাহান্নামীরা নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: নিশ্চয়ই জাহান্নাম তাদের সকলের নির্ধারিত স্থান। তার সাতটি দরজা রয়েছে। প্রত্যেকটি দরজার জন্য তাদের মধ্য থেকে পৃথক পৃথক দল রয়েছে। (সূরা হিজর, আয়াত ৪৩,৪৪) জাহান্নামের সর্ব নি¤œস্তরে সর্বাধিক কঠিন আযাব হবে আর উপরের স্তরে হালকা আযাব হবে। আব্বাস ইবনে আবদুল মোত্তালিব (রা:) রাসূল (স:) কে বলেন: আবু তালিবকে তার কোন কাজ উপকার দিবে কী ? তিনি তো আপনাকে রক্ষণাবেক্ষণ করতেন, আপনার জন্য অন্যের উপর রাগান্বিত হতেন। রাসূল স: বললেন: হ্যাঁ। তিনি জাহান্নামের উপরের স্তরে থাকবেন। যদি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ না থাকতো তাহলে তিনি জাহান্নামের সর্ব নি¤œস্তরে থাকতেন। জাহান্নামের সাতটি স্তরের নাম হলো: জাহান্নাম, সাইর, হুতামাহ, লাযা, সাকার, জাহিম এবং হাবিয়াহ। জাহান্নামে একটি পাথর নিক্ষেপ করলে তা তার তলদেশে গিয়ে পৌঁছতে সত্তর বছর সময় লাগে। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমরা রাসূল (স:) এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ তিনি একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পেলেন। অতঃপর রাসূল (স:) বললেন, তোমরা কি জানো এটা কিসের আওয়াজ ? আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি (স:) বলেন, এটি একটি পাথর পতিত হবার আওয়াজ। যা জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পর সত্তর বছর ধরে পতিত হচ্ছিলো। এটি এইমাত্র জাহান্নামের অতল গহব্বরে পতিত হলো। (মুসলিম) জাহান্নামের প্রশস্ততা পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের চেয়েও অধিক। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (স:) কে বলতে শুনেছেন, নিশ্চয়ই বান্দা এমন অসংলগ্ন কথা বলে যার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। যার প্রশস্ততা পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের চেয়েও অধিক। (মুসলিম) জাহান্নামের বাউস্ডারির দুটি দেয়ালের মাঝে চল্লিশ বছরের দূরত্ব রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স:) বলেন, জাহান্নামের সীমা চারটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা। প্রতিটি দেয়ালের মধ্যে চল্লিশ বছরের দূরত্ব রয়েছে। (আবু ইয়ালা) হাশরের মাঠে জাহান্নামকে উপস্থিত করানো হবে। জাহান্নামকে নিয়ে আসতে চারশত নব্বই কোটি ফেরেশতা নিয়োগ করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স:) বলেছেন, হাশরের মাঠে জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে। সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামে সত্তর হাজার ফেরেশতা তাকে টেনে নিয়ে আসবে। (মুসলিম) জাহান্নামীদেরকে দূর থেকে আসতে দেখে জাহান্নাম রাগে ও ক্রোধে এমন আওয়াজ করবে যে তা শুনে কাফের ও পাপীরা অজ্ঞান হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন জাহান্নাম তাদেরকে দূর থেকে দেখতে পাবে তখন তারা জাহান্নামের গর্জন ও হুঙ্কার শুনতে পাবে। (সূরা ফুরকান, আয়াত ১২) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, যখন তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা জাহান্নামের গর্জন শুনতে পাবে যেন সে উৎক্ষিপ্ত হচ্ছে। জাহান্নাম ক্রোধে ফেটে পড়ার উপক্রম হবে। (সূরা মুলুক, আয়াত ৭,৮) জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্বলিত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা এমন ফেরেশতা নির্ধারণ করে রেখেছেন যারা অত্যন্ত রুক্ষ,নির্দয় ও কঠোর স্বভাব সম্পন্ন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, তাতে নিয়োজিত থাকবে এমন ফেরেশতা যারা অত্যন্ত কঠোর ও রুক্ষ, তারা আল্লাহ যা আদেশ করেছেন কখনো তা লংঘন করেন না আর আদিষ্ট বিষয় করাই তাদের একমাত্র কাজ। (সূরা আততাহরীম, আয়াত ০৬) জাহান্নামের আযাব দেখামাত্রই কাফের ও পাপীদের চেহারা কালো হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যারা পাপসমূহ উপার্জন করেছে তাদের জন্য সমপরিমাণ অকল্যাণ রয়েছে। অপমান তাদেরকে আবৃত করে ফেলবে, আল্লাহর হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করার মতো কেউ থাকবে না। যেনো তাদের চেহারাগুলোকে এক টুকরো মেঘের গাঢ় অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এরাই জাহান্নামের অধিবাসী, আর তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। (সূরা ইউনুছ, আয়াত ২৭) জাহান্নামীদের শরীরের চামড়া যখন পুড়ে যাবে তখন সাথে সাথে নতুন চামড়া লাগিয়ে দেয়া হবে যেনো আযাবের ধারাবাহিকতায় কোন বিরতি না ঘটে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে অচিরেই আমি তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো, যখনই তাদের চামড়া জ্বলে যাবে তাদেরকে ভিন্ন চামড়া দিয়ে পরিবর্তন করে দিবো যাতে করে তারা পরিপূর্ণভাবে আযাব অনুভব করতে পারে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা, আয়াত ৫৬) জাহান্নামের আযাবে অসহ্য হয়ে জাহান্নামীরা মৃত্যু কামনা করতে থাকবে কিন্তু তাদের আর কখনো মৃত্যু হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যখন তাদেরকে জাহান্নামের অতি সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে, তাদেরকে বলা হবে আজকে তোমরা এক মৃত্যুকে ডেকো না বরং অনেক মৃত্যুকে ডাকো। (সূরা ফুরকান, আয়াত ১৩, ১৪) হাদিসে এসেছে, আবু সাইদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স:) বলেন, কিয়ামাত দিবসে মূত্যুকে একটি লাবন্যময়ী দুম্বার আকৃতি দিয়ে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর এটাকে জান্নাত এবং জাহান্নামের মাঝখানে রেখে যবাই করা হবে। সবাই তা প্রত্যক্ষ করবে। (ফলে আর কারো কখনো মৃত্যু হবে না) অতঃপর যদি কেউ নিয়ামত পেয়ে আনন্দে মৃত্যুবরণ করতো তবে জান্নাতের অধিবাসীরা মৃত্যুবরণ করতো। আর যদি কেউ আযাবের দুঃচিন্তায় মৃত্যুবরণ করতো তবে জাহান্নামের অধিবাসীরাই মৃত্যুবরণ করতো। (ইমাম তিরমিযি হাদিসটি সংকলন করেছেন) জাহান্নামীদের উপর তাদের আযাবকে এক পলকের জন্যও হালকা করা হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যারা কুফুরি করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তাদের জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত দেয়া হবে না, ফলে তারা মৃত্যু বরণ করতে পারবে না। আর তাদের শাস্তিকেও হালকা করা হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন