মিযানুর রহমান জামীল
বিচিত্র এই দুনিয়ায় মানুষ আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি। আর অন্যান্য জীব-জন্তু কীপ-পতঙ্গ মানুষের জন্য সৃষ্টি। মানুষের চেয়ে পৃথিবীতে সুন্দর কিছু নেই। মানুষ যতো বেশি আল্লাহর হুকুম আহকামের সামনে শির অবনত করবে অন্যান্য জীবও ততোবেশি মানুষের কল্যাণ সাধনে নিযুক্ত হবে। পক্ষান্তরে সৃষ্টিকর্তার হুকুম লঙ্ঘিত হলে সৃষ্টি জীব বা অন্য কিছু ধারা তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে। রাসূলের যুগে যখন আল্লাহর নাফরমানরা হস্তিবাহিনী নিয়ে বাইতুল্লাহ ধ্বংসের ধার-প্রান্তে উপনীত হয় তখন ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট পাখির ঠোঁটের ক্ষুদ্র পাথর দ্বারা শত্রুদের জমীনের সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। এটা গুনাহ ও নাফমানির বিষফল।
মহান আল্লাহ তা’আলা একজন মানুষের গুনার কারণেও পৃথিবীর জমিনে ভয়ানক আজাবের কিঞ্চিত প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকেন। ফলে বিপর্যস্ত হয় মানুষ ও পক্ষিকুল। শুধু এ দুয়ের মধ্যেই সিমাবদ্ধ না থেকে গোটা জাতি সম্প্রদায় এমনকি গাছপালা ছাড়িয়ে নদীনালায় গিয়েও এর ভয়াবহ বিস্তৃতি লাভ করে। ফলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় জাতি-বৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়। এ কারণে কেয়ামতের দিন উত্তম ইনসাফকারী হিসেবে আল্লাহ প্রত্যেক অপরাধী থেকে কড়ায়গ-ায় হিসাব নিয়ে ইনসাফের ফায়সালা করবেন। তাই পাপকে ঘৃণা করে পাপীকে তা থেকে বারণ করা উচিত।
“মানুষের কৃত কর্মের দরুণ সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যস্ত ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে উহাদিগকে উহাদিগের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে” সূরা রূমের ৪১ নং আয়াতে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সেই নির্দেশনাই প্রদান করে। আধুনিকতার আকাশচুম্বি অগ্রযাত্রায় টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদির অপব্যবহারের ফলে প্রতিয়মান হয় মানুষের গুনাহ কতো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি মানুষের গুনাহ বন্ধ না হয়, যতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক না কেন পরিবেশ প্রকৃতি ও মানুষের উপর অর্পিত এ আজাব ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আজ আমাদের বিশ্বাসের রূপ-রেখায় ফাটল ধরেছে বিধায় মানুষে-মানুষে এবং শ্রেণী-সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটলের মাধ্যমে তার প্রভাব জমিনে সংক্রমিত হয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মানুষ আধুনিক উপায়ে এর মুক্তি কামনা করলেও আল্লাহর নির্দেশিত জীবন ব্যবস্থা ও তার উপায়-উপকরণ অবলম্বনের তেমন ধার ধারে না। কারণ পাপ জমিনে এতই ছড়িয়ে পড়েছে যে মনিব তার মালিকের আসল পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে।
বিজ্ঞান বিশ্বাসী মানুষগুলো কি একটু ভাবে না যে হাজার বছর আগের কুরআনের বাণী তাদের প্রযুক্তির সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। আকাশ চুম্বি আবিষ্কারের সফলতার কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর সাথে আরও আগেই সংপৃক্ত হয়েছে। বিজ্ঞান যা এখন আবিষ্কার করেছে তার কথা কোরআনে হাজার বছর আগেই বলা হয়েছে। ফলে কোরানের শক্তিশালী বাণী বিজ্ঞানের গবেষণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শক্তিশালী ক্ষমতাসম্পন্ন এ পাওয়ার গ্রন্থ মানুষের সুখ-শান্তি-সফলতা ও হেদায়েতের মাধ্যম। এ কথা বোকা নির্বোধরা অবিশ্বাস করলেও কোরানের একটি হরফেও কোনো বিবর্তন ঘটাতে পারবে না। দুনিয়ার যেখানে যা হওয়ার কথা তা অবশ্যই হবে। তবে সেটার ভিন্নতা মানুষের সভ্যতা ও ঈমানের উপর নির্ভর করে আল্লাহ হুকুমে বিবেচিত হবে। এর প্রতিরোধের ব্যবস্থা বা ক্ষমতা কারও হাতে নেই। কতো আশ্চার্য এবং চিন্তার কথা, যে হাত এতো দুর্বল সে হাতের কারণেই মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়। হাতের পাপ কামাই করে নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে আনে। একে অন্যের উপর মিথ্যাসাক্ষীর বোঝা চাপিয়ে দেয়ার ফলসরূপ নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কৃত্রিম আজাবের পথ তরান্বিত হয়। কারণ পবিত্র কোরানের সুস্পষ্ট বাণীকে অস্বীকার করে নিস্তার পেয়েছে এমন কোনো ঘটনা দুনিয়ার জমিনে নেই।
এজন্য গুম, খুন, নির্যাতন, হত্যা, জুলুম, মিথ্যা, ধর্ষণ, হিংসা, গীবত, সুদ, ঘুস, জবর-দখল, অন্যায়, অত্যাচার, হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি এবং ধর্মীয় আইন-কানুন লঙ্ঘনসহ আল্লাহ রাসূলের প্রকাশ্য বিরোধিতা ও মজলুমের উপর অযথা হামলা, নিরপরাধির বিরুদ্ধে অহেতুক মামলা ইত্যাদিই আমাদের জন্য নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন