শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রিট খারিজে দেশে স্বস্তি শোকরানা মাহফিল

প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৭ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০১৬

রফিকুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম ব্যুরো : সংবিধানে ইসলামই রাষ্ট্রধর্ম থাকছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রিট খারিজে বন্দরনগরীসহ সারা দেশে বইছে খুশির বন্যা। আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ থেকে শুরু করে ধর্মপ্রাণ মানুষ সবাই এ খবরে খুশি। বিভিন্ন এলাকায় তাৎক্ষণিক শোকরানা মাহফিল হয়েছে। আদালতের এ সিদ্ধান্তে জনমনেও ফিরে এসেছে স্বস্তি। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে বলবৎ রাখার আন্দোলনে শামিল সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আলেম-মাশায়েখগণ অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রামের সর্বত্র এ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তির সাথে আলোচনা-পর্যালোচনা জমে ওঠে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন সরকারের সঠিক সময়ে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। সংবিধান থেকে ইসলামের শেষ চিহ্নটুকু মুছে যায়নি এটা দেশের ৯২ শতাংশ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার বিষয় ছিল। এখন তা অটুট থাকায় জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
২৮ বছরের পুরনো বস্তাপচা একটি রিট হঠাৎ করে সচল করা হয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবে না এ বিষয়ে শুনানির দিনও ধার্য হয়। এসব তৎপরতায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ধর্মপ্রাণ মানুষ। বার আউলিয়ার পুণ্য স্মৃতিধন্য চাটগাঁর মাটিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভের দাবানল জ্বলে ওঠে। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের পাশাপাশি এ অঞ্চলের পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। রাজপথ, মসজিদ-মাদরাসা এবং খানকা থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠে।
হাজারও মানুষ রাজপথে নেমে প্রতিবাদ মিছিল-সমাবেশ করে। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করতে যারা তৎপর তাদের অপতৎপরতা বন্ধ না হলে চট্টগ্রামসহ সারাদেশ অচলের হুঁশিয়ারি আসে। নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী আন্দোলনে বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হওয়ার মুহূর্ত থেকে দেশ অচল করে দেয়াসহ সর্বাত্মক কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনের হুমকি দেয়।
একই দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী ছাত্রসেনাসহ ছোট-বড় সব ইসলামী দল ও সংগঠন। এ অঞ্চলের হাক্কানী আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ বিশেষ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতে বিশ্বাসী সংগঠনগুলোও রাজপথে সোচ্চার হয়ে ওঠে। তারা সবাই হুঁশিয়ারি দেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছেÑ থাকবে। বাতিল করা হলে ধর্মপ্রাণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ আর ইসলামী সংগঠনগুলোর এ আন্দোলনে একাত্ম হয় এ অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে সমগ্র চট্টগ্রাম। আদালতে অন্যরকম কোনো সিদ্ধান্ত এলে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ প্রদর্শনেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখে ইসলামী সংগঠনগুলো।
অবশেষে গতকাল সকাল থেকেই এখানকার ইসলামী সংগঠনের নেতারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন। তারা ক্ষণে ক্ষণে রিটের শুনানির বিষয়ে তথ্য জানতে ঢাকায় যোগাযোগ করেন। রিট খারিজ হওয়ার খবর আসার সাথে সাথে চট্টগ্রামে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত নস্যাৎ হয়েছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল আছে এমন খবরে মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন সবাই। তাৎক্ষণিক অনেক এলাকায় শোকরিয়া সমাবেশ, বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এ খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
হেফাজতের মোবারকবাদ
সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের জন্য দায়ের করা রিট হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়ায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শোকরিয়া এবং আন্দোলনকারী সাধারণ তৌহিদী জনতার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। এছাড়া বিজ্ঞ বিচারকগণ, আইনজীবী, সাংবাদিক, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, দেশের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা, ওলামা-মাশায়েখ, মাদারিসে দীনিয়া, হেফাজত নেতা-কর্মীসহ সকলের শুকরিয়া আদায় ও আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী।
হেফাজতে ইসলাম নেতৃদ্বয় বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রাখায় দেশ এক মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে। ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার পাবে।’ এ দেশের ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তি কোনোভাবেই সফল হবে না। ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধানে বহাল থাকায় আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা আরো বৃদ্ধি লাভ করবে। তারা বলেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে, এ দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কেউ সফল হবে না। আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কামিয়াবি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
শোকরানা মাহফিল
ইসলামিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে বিকেলে নগরীর দামপাড়া ইমাম ম্যানসনস্থ কার্যালয়ে এক শোকরানা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইসলামিক ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবিধানে সন্নিবেশিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন দায়ের করে নাস্তিক্যবাদী অপশক্তি এ দেশে সুদীর্ঘ দিনের প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার যে হীন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছিল, তা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সম্মিলিতভাবে রুখে দিয়েছে। এ দেশের ৯২ শতাংশ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এ রিট আবেদন মাহামান্য সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়ে যে বিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তারা আরো বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা অধিকতর বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মুসলমানদের পক্ষে সর্বাত্মকভাবে ঈমানী ভূমিকা পালন করায় বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র দৈনিক ইনকিলাবের ভূয়সী প্রশংসা করে পত্রিকা কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুর। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবদুর রহমান মান্না, মাওলানা জাকের আহমদ সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ মাওলানা সেলিম উদ্দিন আনোয়ারী, এস এম আবদুল করিম তারেক, এম মহিউল আলম চৌধুরী, এম আলম রাজু, অধ্যক্ষ সৈয়দ মাওলানা আবু ছালেহ, মাওলানা নাসির উদ্দিন আনোয়ারী, মাওলানা রিয়াজ মাহমুদ, এম ওয়াহেদ মুরাদ, এ এম মঈনউদ্দিন চৌধুরী হালিম, এম নাসির উদ্দিন, ডা: হাসমত আলী তাহেরী, এম মফিজুর রহমান, হাফেজ নাসির উদ্দিন, ইলিয়াছ খান ইমু, মুহাম্মদ ছাদেক, মাওলানা মহিউদ্দিন তাহেরী প্রমুখ।
যারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চায়নি তারা দেশদ্রোহী
নগরীর পাহাড়তলী রেলগেট আল আমিন বারীয়া ইসলামী পাঠাগার আয়োজিত মাহফিলে চান্দগাঁও বাহির সিগন্যাল দরবারের সাজ্জাদানশীন পীরে ত্বরিকত আল্লামা সৈয়দ সামসুদ্দোহা বারীর বড় শাহজাদা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোকাররম বারী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় শোকরিয়া আদায় করেছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নাস্তিক প্রভুদের খুশি ও জঙ্গিদের উস্কিয়ে দেয়ার জন্যই মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে যারা জাতিকে উত্তেজিত করে দেশের ক্ষতিসাধন করতে চেয়েছিল তারা কখনো দেশের সুনাগরিক হতে পারে না। দেশে বিতর্ক সৃষ্টি করে কোটি কোটি মানুষের অন্তরে আঘাত দেয়ার অধিকার কারো নেই। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যারা চায়নি তারা মূলত দেশদ্রোহী। পীর আউলিয়াদের এই দেশে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমান বসবাস করে। এ দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ছিল, ইসলাম আছে এবং ইসলাম থাকবে। যারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দিতে চেয়েছিল তারাই একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবী মুহাম্মদ আবেদুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ আবেদ, মুহাম্মদ রোমন, মুহাম্মদ দুলাল, মুহাম্মদ রুবেল প্রমুখ। মাহফিল শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মুনাজাত করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন