ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিন্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেছেন, জঙ্গীদের মোকাবেলায় জাতির সংকল্প জোরালো হচ্ছে। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে সুসমন্বয়ের আহ্বান জানান। লাহোরে একটি পার্কে এক আত্মঘাতি বোমা হামলায় ৭০ জনের বেশী নিহত হওয়ার একদিন পর দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ নিহত শিশুদের তার পুত্র-কন্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তার পুত্রকন্যাদের হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের তিনি নির্মূল করে ছাড়বেন। তিনি বলেন, শুধু সন্ত্রাসের অবকাঠামো ধ্বংস করাই তার উদ্দেশ্য নয়, চরমপন্থীদের চিন্তাভাবনা পরিবর্তনের কাজও তিনি করে যাবেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টও এই হামলার নিন্দা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান। পরে তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। জাতি ও সরকার হিসেবে আমাদের সংকল্প আরো জোরালো হচ্ছে এবং কাপুরোষিত শত্রুরা এখন নিরপরাধ মানুষদের টার্গেট করছে। প্রধানমন্ত্রী শরীফ আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা আবারও হামলা চালানোর আগেই নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের উপর আক্রমণ চালাতে হবে। তিনি বলেন, আমি আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে আরো সক্রিয় সমন্বয় চাই। প্রদেশগুলোকেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান জোরদার করতে হবে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী ৫টি অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
তালিবান থেকে বেরিয়ে যাওয়া জামায়াত-উল- আহরার নামের একটি গ্রুপ দাবী করেছে, খ্রিষ্টানদের ইস্টার উৎসবের বিরুদ্ধে তারা এই হামলা চালিয়েছে।
এই হামলায় অন্তত ৩ শো জন আহত হয়েছে এবং কর্মকর্তারা বলছেন, হতাহতের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যাই বেশী। তাদের আশংকা মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
পার্কে ইস্টার উৎসব উদযাপনের জন্য লাহোরের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন সমবেত হওয়ায় সেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী লোকের সমাগম ছিল। অবশ্য এই হামলায় হতাহতদের বেশীর ভাগই মুসলমান।
লাহোরে বিনোদন পার্কে ইস্টার সানডে’তে এই বোমা হামলা ২০১৩ সালে পেশওয়ার চার্চে বোমা হামলার পর পাকিস্তানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী হামলা। পেশওয়ারে চার্চে হামলায় ৮০ জনের বেশী নিহত হয়েছিল।
তবে অনেকেই মনে করেন সর্বশেষ এই হামলায় একটি বড় প্রেক্ষাপট থাকতে পারে। কারণ ৩০ টিরও বেশী ধর্মীয় গ্রুপের একটি জোট পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারকে নতুন নারী অধিকার আইন প্রত্যাহারের জন্য ২৭ মার্চ শেষ সময়সীমা বেধে দিয়েছিল। এই সময়সীমায়ই লাহোর এই হামলার ঘটনা ঘটলো। ধর্মীয় গ্রুপগুলো নতুন নারী আইনের বিরোধীতা করছে।
এদিকে ২০১১ সালে প্রাদেশিক গভর্ণরকে হত্যার জন্য মমতাজ কাদরি নামের এক পুলিশ সদস্যকে দেয়া মৃত্যুদন্ড গত মাসমাসে কার্যকর করার প্রতিবাদে কাদরির সমর্থকরাও প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে। গভর্নর ব্লাসফেমি আইন সংশোধনের পক্ষে কথা বলেছিলেন এ কারণে তাকে হত্যা করা হয়। সমর্থকরা কাদরির জন্য ৪০ দিনের শোক পালন করছে। শোকের এই সময়ের ১৩ তম দিনটি হচ্ছে ২৭ মার্চ। শরীয়া আইন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবীতে কয়েক হাজার কাদরি সমর্থক এখন ইসলামাবাদে হাই-সিকিউরিটি জোন দখল করে রেখেছে।
রোববারের এই হামলার দায়িত্ব স্বীকারকারী এই উপদলটি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গত কয়েকমাসে তারা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পেশওয়ার উপত্যকা অঞ্চলে বেশ করেকটি হামলা চালিয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আসিম বাজওয়া এক টুইট বার্তায় বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী লাহোর, মুলতান ও ফয়সালাবাদে অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়েছে।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকার রাজধানী লাহোরে জরুরী অবস্থা এবং তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে। অন্যান্য অঞ্চলেও একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়। প্রদেশে গতকাল সকল বিদ্যালয় ও মার্কেট বন্ধ রাখা হয়।
লাহোর পাকিস্তানের সবচেয়ে উদার ও সম্পদশালী শহরগুলোর অন্যতম। এটা নওয়াজ শরীফের রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবেও বিবেচিত এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাহোরে তুলনামূলক কম সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা দেখা গেছে।
জামায়াত-উল-আহরারের মুখপাত্র এহসানউল্লাহ এহসান বলেছেন, তাদের গ্রুপ নওয়াজ শরীফের কাছে এই বার্তা পাঠাতে চায় যে তারা লাহোরে প্রবেশ করেছে। গ্রুপটি আরো হামলার হুমকিও দিয়েছে।
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়া গ্রুপ জামায়াত-উল-আহরার। তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেসামরিক লোকজন ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে।
শিশুদের খেলার মাঠের কাছেই লাহোরের গুলশান-ই-ইকবাল পার্কের মূল ফটকে রাতের প্রথমদিকে এক আত্মঘাতি বোমা হামলাকারী বিস্ফোরণ ঘটায় বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। মুহৃর্তের মধ্যে পার্কটি রক্তে ভেসে যায়। আহতদের আর্ত চিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
পাকিস্তান তালিবান সংশ্লিষ্ট সহিংসতা, ধর্মীয় গোষ্ঠি সংঘাত ও সংগঠিত অপরাধী চক্রগুলোর সন্ত্রাসের নিয়মিত শিকার হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন