স্টাফ রিপোর্টার : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদÐ, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারসহ নানা বিষয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মামলার সকল ডকুমেন্টও দেওয়া হয়েছে তাদের হাতে। কারাদÐ দেওয়ার পর প্রাপ্য ডিভিশন না দেওয়া, রায়ের কপি দিতে গরিমসি, জরাজীর্ণ-পরিত্যাক্ত ভবনে সুযোগ-সুবিধাবিহীন রাখাসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তাদের সামনে। সরকারের এমন আচরণে অনেক কূটনীতিক উস্মা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা। এছাড়া কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থারও খোঁজ-খবর নিয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল (মঙ্গলবার) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করে বিএনপি। বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এই বৈঠকের শুরুতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার লিখিত বক্তব্যের পর কূটনীতিকরা নানা বিষয়ে জানার জন্য প্রশ্ন করেন। সেখানে উপস্থিত নেতারা এসকল প্রশ্নের জবাব দেন। কূটনৈতিকদের প্রশ্নে বেশিরভাগই খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গ ও আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রীক ছিলো বলে জানা গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মামলাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে এটাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। মামলার রায়ের পর সরকার প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে বলেও জানানো হয়। এছাড়া মামলার রায়ের অনুলিপি প্রদান নিয়েও সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে কূটনীতিকদের অবহিত করেন দলের নেতারা। এসময় কূটনীতিকরা কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তার মর্যাদাপূর্ণ ডিভিশন প্রাপ্তির বিষয়েও নেতাদের কাছে জানতে চান। বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির একজন নেতা জানান, এবারের বৈঠকটিতে কূটনীতিকদের বেশি তৎপরতা দেখা গেছে। তারা অনেক বেশি জানতে চেয়েছেন এবং গভীরে জানার চেষ্টা করেছেন। তারা লিখিত বক্তব্যের উপস্থাপনসহ বিএনপির পক্ষ থেকে সরবরাহ করা সব ডকুমেন্টই মনযোগ দিয়ে শুনেছেন, দেখেছেন এবং নোট নিয়েছেন। আবার বিএনপির পক্ষ থেকেও তাদেরকে মামলার সকল ডকুমেন্টস সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
বিএনপির নেতারা কূটনীতিকদের জানান, এ বছরে জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার নানবিধ ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করছে। সরকার এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এ সময় সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলার একটি পরিসংখ্যন তুলে ধরা হয় এবং এর বিস্তারিত তথ্যও তাদেরকে দেওয়া হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। বিএনপি মহাসচিব তার লিখিত বক্তব্যে জানান, নির্বাচনকালীন সময়ে দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হয় না। এ কারণে বিএনপি তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চাইছে। বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের একজন সদস্য জানান, সরকারের এমন আচরণে অনেক কূটনীতিক উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তাদের বেশিরভাগ সদস্যই খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা, তার শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন। তাকে এখন ভিআইপি মর্যাদার ডিভিশন দেওয়া হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছেন একাধিক কূটনীতিক। এসময়ে কূটনৈতিকরা খালো জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রশংসা করেছেন। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণে আর নিরপেক্ষ দেখতে চান বলে জানিয়েছেন।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা রিয়াজ রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ড. এনামুল হক চৌধুরী, আসাদুজ্জামান রিপন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, এড. ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বেবী নাজনীন, তাবিথ আউয়াল। বাংলাদেশে অবস্থানরত ২২টি দেশের কূটনৈতিকরা এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত, পাকিস্তান, ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, সউদী আরব, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি দেশের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন