সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইসলাম নিয়ে নির্মিত মুভি : বিতর্কের কারণ

বশির ইবনে জাফর | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:০৮ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

কিছু দিন পর পরই মুভি বা সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে ইসলাম ধর্ম নিয়ে। যার প্রত্যেকটিতেই মূলত রাসূল সা. এবং তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের জীবনীকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। মুভিগুলোর প্রত্যেকটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। এর মধ্যে অনেক মুভি মুক্তির পূর্বেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারণে। ১৯৭৩ সালে নির্মিত ‘দি এক্সরসিস্ট’ যার অন্যতম। ইসলামে অশ্লীল বা বানোয়াট কোন কিছুর স্থান নেই বিধায় এসব মুভি ইতিহাস ভিত্তিক রেখে অশ্লীলতা মুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। তারপরও সমালোচনার রেশ থেকে যায় কোন না কোন কারণে। কেন সেসব মুভি আলোচিত বা সমালোচিত তা নিয়ে আজ দুটি মুভির কাহিনী না বললেই নয়।

১৯৭৬ সালে নির্মিত ‘আর-রিসালাহ’ তথা ‘দ্য ম্যাসেজ’ ছবিটি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত। চলচ্চিত্রটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনীভিত্তিক এক ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র। ৩ ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন সিরীয়-মার্কিন পরিচালক মুস্তফা আক্কাদ। ছবিটির আলোচনা সমালোচনা দুটি দিকই রয়েছে। এ চলচ্চিত্রটিতে রাসুলের সা. নবুয়্যত প্রাপ্তির পর থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাস উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইসলামের ইতিহাস অবিকৃতভাবে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে যে অল্প সংখ্যক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চলুন জানা যাক কীভাবে বিভিন্ন সমালোচনার ঝড় পেরিয়ে এই চলচ্চিত্রটি অবশেষে মুক্তির মুখ দেখেছিল।
সিনেমাটির পরিচালক তৎকালিন একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম নিয়ে যে ভুল ধারণা আছে সেগুলো দূর করার লক্ষেই তিনি সঠিক ইতিহাস নির্ভর একটি সিনেমা তৈরি করেছেন এবং তার সবকটি ইতিহাস সঠিক ও ইসলাম বহিঃর্ভূত কোন কিছু তাতে ছিলো কিনা সেজন্য মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছবিটিকে সেন্সর করিয়ে তবেই মুক্তির দিকে এগিয়েছিলেন। যার কারণে পরবর্তিতে সিনেমাটি সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। তবে আরব বিশ্বে শুরুর দিকে সমালোচনা ছিলো এ কারণেই যে ছবিটিতে রাসুল সা. সহ তাঁর বিশ্বস্ত প্রধান চার খলিফার ছবি প্রদর্শন না করলেও তাঁর আপন চাচা হামজা রা. সহ অন্যান্য সাহাবাদের ভূমিকায় অনেকেই অভিনয় করেছেন যা মুসলমানদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
ইতিহাস অবিকৃত থাকলেও সিনেমাটি মূলত সাহাবাদের বানোয়াট চরিত্র উপস্থাপনের কারণেই সমালোনার মুখে পড়ে। ছবিটি নির্মাণ হয়েছিলো আরবি এবং ইংলিশ এই দুটি ভাষাতেই। একই শ্যুটিং সেটে দুবার করে আরবি এবং ইংলিশে অভিনয় করিয়েছিলেন পরিচালক মুস্তফা আক্কাদ। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ছবিটির ডাবিং হয়েছে।
সমালোচনার তুঙ্গে থাকা স¤প্রতি আরো একটি সিনেমা হচ্ছে ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া- দ্যা মেসেঞ্জার অব গড।
ছবিটি আলোচিত হবার বিপরিতে সমালোচিতই হয়েছে বেশ। নির্মাণকালীন সময় থেকেই চলচ্চিত্রটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ ‘দ্য ম্যাসেজ’ সহ অন্যান্য ইসলামি চলচ্চিত্র এবং ধারাবাহিকে যেরকম রাসুলের নিকটাত্মীয়দের না দেখানোর প্রথা প্রচলিত আছে, সেটি ভঙ্গ করে এই চলচ্চিত্রে রাসুল সা. এর মা আমিনা, দুধ-মা হালিমা, চাচা আবু তালেবসহ ঘনিষ্ঠ প্রায় সবাইকেই দেখানো হয়েছে। এমনকি, বালক রাসুল সা. এর শুধুমাত্র চেহারা ছাড়া পুরো অবয়ব দেখানো হয়েছে ছবিটিতে।
সিনেমাটির কাহিনী নবীজি স. এর বাল্যকালেই শেষ হয়ে যাওয়ায় এতে শিয়া-সুন্নীদের মধ্যে যেসব ব্যাপারে অধিকাংশ মতবিরোধ রয়েছে, সেগুলো উঠে আসেনি। তারপরেও সিনেমাটিতে প্রদর্শিত কাহিনী বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাসুল সা. এর বাল্যকালের জীবনী সম্পর্কে বিভিন্ন ইতিহাসবিদের যত রকম বর্ণনা পাওয়া যায়, কাহিনীকার সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু মনগড়া ঘটনা সংযুক্ত করে সমালোচনার মাত্রা বাড়িয়েছেন। উদাহরণস্বরুপ, সিনেমায় দেখানো হয়, হালিমার উট দড়ি ছিঁড়ে মক্কার হাট-বাজারের ভেতর দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আমিনার ঘরের সামনে গিয়ে হাজির হয়। উটটিকে ধরার জন্য পিছু পিছু হালিমাও সেখানে উপস্থিত হলে তাদের পরিচয় হয় এবং মা হালিমা শিশু নবীজিকে দেখতে পেয়ে তাকে আদর করে কোলে নিতে গেলে নবীজি দুধ পান করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু ইবনে হিশাম, রাহিকুল মাখতুমসহ সর্বজনগ্রাহ্য রাসুলের জীবনী গ্রন্থগুলোতে এ ধরনের কোন অলৌকিক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় না। সিনেমাটির কাহিনী এরকম বিতর্কিত হওয়ায় এটি অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রেই প্রদর্শনের অনুমতি পায়নি। মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সৌদি আরবের গ্র্যাÐ মুফতি, সৌদি আরবের মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ কর্তৃপক্ষ সিনেমাটির কঠোর সমালোচনা করেছে এবং সিনেমাটিকে নিষিদ্ধ করার আহŸান জানিয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইরান ছাড়া তুরস্ক এবং আরো দুই-একটি রাষ্ট্র সিনেমাটি প্রচার করেছে, যদিও তুরস্ক বালক মুহাম্মদ সা. এর কণ্ঠস্বরগুলো কেটে দিয়ে তার পরিবর্তে সাবটাইটেলের মাধ্যমে বক্তব্যগুলো প্রকাশ করেছে। যদিও এসব সিনেমা নির্মাতাদের প্রত্যেকেরই বক্তব্য থাকে ইসলামকে যথাযথভাবে অমুসলিমদের কাছে উপস্থাপন করাই তাদের মূল লক্ষ্য তবু ইতিহাস বিকৃতি ও নবি রাসুল, সাহাবাসহ এরকম সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষদের চরিত্র স্ব-চিত্রক উপস্থাপনের ফলে মানুষের মনের ভেতর সবসময় একটি আবয়ব গেঁথে যায়। ফলে ওই সাহাবি বা ওই ব্যক্তিটির নাম শুনামাত্রই স্মৃতিপটে ভেসে উঠে চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সেই ব্যক্তিটির মুখচ্ছবি। ব্যপারটি মোটেও ভালো দিক নয়।
তাছাড়া অনেকেই ‘ইতিহাস ভালো করে মনে রাখার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম এই চলচ্চিত্রগুলো’ এ কথা দাঁড় করিয়ে সিনেমাগুলোকে বৈধতা দানের চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু ছোট ছোট বিকৃতিগুলো সঠিক ইতিহাসকে জানার বদলে খানিকটা কলুষিত করেই বৈকি। তাছাড়া ইসলামে অনুমোদিত নয় বা সংশয়পূর্ণ এমন ছবি, চলচ্চিত্র, গান ও দৃশ্য ব্যবহার ইসলামের জন্য কখোনই শোভনীয় বা উপকারী হতে পারে না।
তাই ইতিহাস জানার মাধ্যম হিসেবে এসব চলচ্চিত্র নিষিদ্ধকরণের পাশাপাশি সিরাত গ্রন্থগুলো বেশি বেশি পাঠ ও পাঠ্যসূচীতে সীরাত ও মুসলিম মনিষী জীবন অন্তর্ভূক্ত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে থাকেন পৃথিবীর সব আলেমগণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
ফাহাদ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:৪৩ এএম says : 2
এই বিষয়গুলো নিয়ে সকলের সতর্ক হওয়া উচিত।
Total Reply(1)
বশির ইবনে জাফর ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:০৯ এএম says : 4
হ্যাঁ, খুব গভীরভাবে আমরা মুভির মানুষগুলোর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছি।
Nurul ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:২৪ পিএম says : 0
Dorme agat je korbe tate tare koti hobe obossoe.
Total Reply(0)
miraz ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৪৫ এএম says : 0
This is very bad habit so all muslim umah action please in this time ....day by day incries this situation
Total Reply(0)
মোঃ আব্দুল গাফফার ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:০৩ পিএম says : 0
মুভি, সিনেমাকে প্রশয় দেওয়া একদম ঠিক নয় এবং এটা গ্রহণ করা মুসলিমদে উচিৎই নয়।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন