শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিবি’র রিজার্ভ চুরি হ্যাকিং নয় ডিজিটাল ডাকাতি- বিএনপি

প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮শ কোটি টাকার অর্থলোপাট ঘটনা কীভাবে সংঘটিত হয়েছে, এর একটি তথ্য-প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে বিএনপি। তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজশে এই ঘটনা ঘটেছে। এটা হ্যাকিং নয়, ডিজিটাল রোভারিং বা ডিজিটাল ডাকাতি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের সূচনাতে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজকোষের লুণ্ঠন আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর চরম আঘাতের শামিল। এই ভয়াবহ ঘটনায় দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি জনগণ আস্থা হারাবে। শুধু গভর্নরের পদত্যাগে এই সমস্যার সমাধান নয়, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উৎঘাটন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার কোনোভাবেই এই দায় এড়াতে পারে না। তারা (সরকার) এখন পর্যন্ত এই ঘটনার কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে গবেষণার ভিত্তিতে কিছু জরুরি তথ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতেই আমাদের এই উপস্থাপনা। এই সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণাত্মক পর্যালোচনা ভিডিও চিত্রের মাধমে পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
গত ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮শ কোটি টাকা লোপাটের একটি বিশ্লেষণাত্মক পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ শামা ওবায়েদ।
সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ইন্টার-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন নেটাওয়ার্ক-সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ফিলিপাইনে রিজাল ব্যাংক ও শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকে প্রায় ৮শ কোটি টাকা স্থানান্তরের পুরো বিষয়টি তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে বলা হয়, এটা স্পষ্ট যে, কেবল দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা এই কাজ করা সম্ভব। বাইরে থেকে অন্য কারো পক্ষে এই কাজ করা অসম্ভব।
শ্যামা তার বিশ্লেষণে বলেন, সুইফট বিশ্বপরিসরে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনসমূহের মাধ্যমে আর্থিক লেন-দেনের তথ্য পেয়ে থাকে। এর জন্য রয়েছে রুদ্ধ মানসম্পন্ন নেটওয়ার্ক। প্রত্যেক সদস্য ব্যাংক লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে একটি একক পরিচিত কোড, সফটওয়্যার এবং সেবা পায় যার দ্বারা সুইফটনেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এটি প্রতিদিন ২ কোটি আর্থিক বার্তা আদান-প্রদান করে এবং এর সঙ্গে বিশ্বের ১০ হাজারের বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান জড়িত।
শ্যামা বলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সুইফটের সিআইও মাইক ফিশ বলেছেন, ‘আমরা সেবা দিই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মানে। এর কারণ হলো আমরা গ্রাহকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং সদস্যদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে নেই। আমাদের কাছে এমন কোন সাক্ষ্য নেই, যা প্রমাণ করে যে আমাদের নেটওয়ার্কে অথবা আমাদের তথ্য ভান্ডারে আজ পর্যন্ত কখনও অননুমোদিত অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আমরা বিরতিহীনভাবে সাইবার নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার হুমকি পরিবীক্ষন করি। আমাদের সেবার নিরাপত্তার উপর ঝুকি সৃষ্টি হয়েছে, এমনটি বিশ্বাস করার কারণ থাকলে, আমরা অবশ্যই এগুলোর চুলচেরা তদন্তÍ করি এবং ঝুঁকি বিদূরিত করার জন্য যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করি।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনির্ভাসিটি অব ক্যালিফোনিয়া’র কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ম্যাট বিশপ স্কাইপে সরাসরি তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে, কোথাও না কোথাও খারাপ লোকদের দুরভিসন্ধি জড়িত। যে কোনো ব্যক্তি যার সুইফট সিষ্টেমটি ব্যবহারের অনুমতি আছে এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ এই সিষ্টেমে প্রবেশ করার অনুমতি নেই, এমন কেউ এতে জড়িত ছিলো। ম্যালওয়ার’র মাধ্যমে ওই অর্থলোপাটের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেন কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশ্লেষক শেইন শুকের বক্তব্য উদ্ধৃতি করে শ্যামা ওয়ায়েদ বলেন, আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেছেন, ভেতরকার মানুষ জড়িত না থাকলে এটি প্রায় অসম্ভব। যদি ভেতরকার লোকজন জড়িত না থাকে, তাহলে আক্রমনকারীদেরকে ভেতর থেকে সহায়তা করা হয়েছে। এই ধরনের অপরাধ করার জন্য যেকোনো ব্যক্তির ব্যাংকিং শিল্প সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে।
বিশ্লেষণ প্রতিবেদনের উপসংহারে শ্যামা ওবায়েদ বলেন, এই লুণ্ঠন বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীন কারো কাজ। যাদের কাছে সুইফট কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড, ফিজিক্যাল কীসহ ডংগল, বায়োমেট্রিকস সনাক্তকরনের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার রয়েছে। সকল প্রামানিক সাক্ষ্য, সুইফট নেট আর্কিটেচার ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে এটা পরিস্কার এই অর্থ লুণ্ঠন কোনো হ্যাংকি কিংবা ম্যালওয়ারের কারণে ঘটেনি। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি ডিজিটাল রাভারিং (ডিজিটাল ডাকাতি)।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন Ñ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, ড. আব্দুুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, ইনাম আহমেদে চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, অধ্যাপক আব্দুুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ ও সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Habibur Rahman ৩০ মার্চ, ২০১৬, ৯:৪০ এএম says : 0
Right
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন