স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে যাত্রী হত্যা মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে খালেদা জিয়াসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন। একইসঙ্গে বিচারক আগামী ২৭ এপ্রিল গ্রেফতারি পরোয়ানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
এদিকে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বুধবার বিকালে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিন সন্ধ্যায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের নবনির্বাচিত সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, বিএনপিকে দুর্বল করতেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদল দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ২ এপ্রিল শনিবার দেশের সকল জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ৩ এপ্রিল রোববার দেশের সকল থানা, পৌর ও কলেজসমূহে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরী পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে বাসের ২৯ জন যাত্রী দগ্ধ হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলে ১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় নূর আলম (৬০) নামের এক যাত্রী মারা যান। ঘটনার পর দিন ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন উপ-পরিদর্শক কেএম নুরুজ্জামান। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫/২৫ (ঘ) ধারায় মামলাটি করা হয়। মামলায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিএনপির ১৮ নেতা ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে যাত্রাবাড়ী বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
২০১৫ সালের ৬ মে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক বশির উদ্দিন ঢাকা মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে খালেদা জিয়াসহ ৩১ জনকে পলাতক দেখানো হয়। এ মামলায় ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে আসামির তালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম.কে আনোয়ার, রুহুল কবির রিজভী, সালাউদ্দিন আহমেদ, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও শওকত মাহমুদ, চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ ৩৮ জন।
বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে পৌঁছলে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। একই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশের সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে আবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
ছাত্রদলের নিন্দা
এদিকে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, কোথায় যাচ্ছে দেশ? এই অবৈধ আর স্বৈরশাসক সরকার বিনা কারণে বিনা উস্কানিতে বিএনপির পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁধাতে চাচ্ছে। তারা বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে এর অপব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অপশক্তি যতই শক্তিশালী হোক না কেন শেষ পর্যন্ত তার পরাজয় নিশ্চিত। তেমনি করে দেশনেত্রীর জনপ্রিয়তা আর ভাবমূর্তির কাছেও এই সরকার হারতে বাধ্য। আর দেশনেত্রীর পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রদল তো আছেই।
বিবৃতিতে ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সরকার অবিলম্বে দেশনেত্রীর সাথে রাজনীতির এমন কূটখেলা বন্ধ করবেন এবং অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিলেরও দাবি জানান। অন্যথায় দেশের ছাত্র-জনতা এর সমুচিত জবাব দিবে।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
বুধবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তাকে (খালেদা জিয়া) মানসিকভাবে হয়রানি ও দুর্বল করতেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় খালেদা জিয়া তার নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন। আর তখন দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলমান ছিল। ওই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বাসে অগ্নিসংযোগ ও সারা দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সুতরাং আমার প্রশ্ন তিনি (খালেদা জিয়া) কীভাবে বাসে অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিলেন। আর কেন তাকে হুকুমের আসামি করা হলো? সরকার তাদের বাছাইকৃত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, গাজী মাযহারুল আনোয়ার, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন