শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উজ্জীবিত বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা রাজনীতিকদের দৃষ্টিতে মহাসচিব ফখরুল

॥ রেজাউর রহমান সোহাগ ॥ | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত থাকার পর বিএনপির জনপ্রিয় ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারমুক্ত হয়ে দলের পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হওয়ায় দারুণভাবে উজ্জীবিত বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। বুধবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিএনপির পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হওয়ার খবরটিই ছিল সারাদেশের মানুষের কাছে প্রধান আলোচিত বিষয়। বিএনপির একটি ক্ষুদ্র অংশ দীর্ঘদিন থেকেই মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব করার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের চেষ্টা-তদবির করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। বিএনপির হাইকমান্ডও এই ইস্যুতে দীর্ঘদিন নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিভিন্ন মতামত-অভিমত যাচাই-বাছাই করে শেষ পর্যন্ত একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, দলের সর্বস্তরের অধিকাংশ নেতাকর্মী ও দলের সমর্থকসহ দেশের সচেতন সাধারণ মানুষও বিএনপির মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ ও সজ্জন ব্যক্তিকেই দেখতে চায়। একজন উচ্চশিক্ষিত, ত্যাগী, সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিক এবং অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্রলোক হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যাপক সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। ঠাকুরগাঁওয়ের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান মির্জা ফখরুলের রয়েছে বিরাট পারিবারিক ঐতিহ্য। তার পিতা মির্জা রুহুল আমিন ছিলেন এরশাদ সরকারের কৃষিমন্ত্রী। সকলেই আশা করেছিলেন বিএনপির সদ্য সমাপ্ত জাতীয় কাউন্সিলেই হয়তো মির্জা ফখরুলকে দলের পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হবে। কিন্তু কাউন্সিলে সেটা না করায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বেশ হতাশা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরাও ছিলেন এটা নিয়ে চরম বিভ্রান্তিতে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও বিএনপির মহাসচিব কে হচ্ছেন এই ব্যাপারে খুবই উৎসুক ছিলেন। অবশেষে বুধবার মির্জা ফখরুলকে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার ঘোষণায় সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে। মূলত বিগত কয়েক যুগ ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন, পেশিশক্তির প্রভাব, অরাজনৈতিক অর্থলোভী মানুষের অতিমাত্রায় সম্পৃক্ততা, কোনো কোনো শীর্ষ নেতার বাসার চাকরদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, দেশ ও জনগণের  স্বার্থ ভুলে ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতাসীন হওয়ার মোহর মতো বিষয়গুলো অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে থাকায় রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও ভক্তি-শ্রদ্ধা আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন কমে যাচ্ছে। এরকম একটি জটিল ও কঠিন সংকটময় রাজনৈতিক পরিবেশেও দেশের সাধারণ মানুষ চায় বড় বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদে সৎ, আদর্শবান, দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতাদের দেখতে। এইদিক থেকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনেক জটিল, কঠিন ও সমস্যাবহুল হওয়ার পরেও অন্তত একটি জায়গায় সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। সেটা হচ্ছে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুজনই অত্যন্ত ভদ্রলোক, সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিক এবং দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছেই এই দুই নেতার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত করায় ইনকিলাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতিক্রিয়া নেয়া হয়েছে। ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

(হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ)
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ বিষয়ে ইনকিলাবকে দেয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব হবেন এটা সকলের কাছেই বহু প্রতীক্ষিত ছিল। ফখরুল একজন অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্র মানুষ এবং তার মার্জিত কথাবার্তা সাধারণ মানুষ খুব পছন্দ করে এবং সকলেই তাকে সম্মান করে। এ ধরনের মানুষ মহাসচিব হলে সেই দলের ভাবমর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পায়। ফখরুলের পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং তার পিতা মির্জা রুহুল আমিন আমার ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন। আমি বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হওয়ায় মির্জা ফখরুলকে অভিনন্দন জানাই এবং তার সাফল্য কামনা করছি।’

(বদরুদ্দোজা চৌধুরী)
বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মির্জা ফখরুল বিএনপির মহাসচিব হওয়ায় ইনকিলাবকে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ভেরি ভেরি ভেরি ভেরি লেট। মির্জা ফখরুল যে বিএনপির মহাসচিব হওয়ার জন্য যোগ্য এবং উপযুক্ত সেটা বুঝতে বিএনপির ঊর্ধ্বতন মহলের ৬ বছর লাগাটা মোটেও ভালো কাজ হয়নি। অনেক বিলম্বে হলেও বিএনপি এই ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব হিসেবে অত্যন্ত সফল হবেন।’

(তোফায়েল আহমেদ)
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল একজন অত্যন্ত মার্জিত নেতা ও ভদ্র মানুষ। এই ধরনের মানুষের রাজনীতিতে খুবই প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বিএনপির মহাসচিব হওয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি এবং তার সাফল্য কামনা করছি।’

(ওবায়দুল কাদের)
ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই ব্যাপারে ইনকিলাবকে দেয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব একজন অত্যন্ত ভদ্র মানুষ। অনেক বিলম্ব হলেও তিনি ভারমুক্ত হয়েছেন এ জন্য তাকে শুভেচ্ছা জানাই। আশা করি তিনি এবং তার দল ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরে আসবে।’

(কাদের সিদ্দিকী)
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় ইনকিলাবকে বলেন, ‘অনেক বিলম্ব হলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব করে বিএনপি একটি ভালো ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মির্জা ফখরুল মহাসচিব হওয়ায় তার দল বিএনপি এখন কিছুটা হলেও গতি পাবে। তবে এটা আরো ভালো হতো যদি কাউন্সিলে এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হতো। তাতে উনার এবং দলের মর্যাদা আরো বাড়ত। বিএনপির মতো একটি দলের মহাসচিবকে এভাবে বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত রাখায় তাদের দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। রাজনৈতিক দলের এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত রাখা যায় সর্বোচ্চ দুই থেকে ছয় মাস। মির্জা ফখরুলের মতো একজন মৃদুভাষী ভদ্র সজ্জন মানুষ বিএনপির মহাসচিব হওয়ায় আমি আনন্দিত এবং তার সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি।’

(আবদুল্লাহ আল নোমান)
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ইনকিলাবকে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের দলের মধ্যেও যে রকম জনপ্রিয় ঠিক তেমনি দলের বাইরে সাধারণ মানুষের কাছেও জনপ্রিয়। যে কারণে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মতো সাধারণ মানুষের মনেও এই প্রশ্নটি সবসময় ছিল কবে মির্জা ফখরুল বিএনপির মহাসচিব হবেন? আমি মনে করি মির্জা ফখরুলকে দলের মহাসচিব করায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হবে এবং তার নিজেরও এই দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত আন্তরিক সদিচ্ছা রয়েছে।’

(রুহুল আমিন হাওলাদার)
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এই বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ভয়কে জয় করে কষ্টিপাথরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সময়ের চাহিদায় অনেক রাজনীতিবিদের কাছেই অনুকরণীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তার বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হওয়ার এই বিশাল অর্জন জাতীয় রাজনীতিতে অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।’

(মোস্তফা জামাল হায়দার)
জাতীয় পার্টির একাংশের (কাজী জাফর) মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার তার অভিমত প্রকাশ করে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং আমি মনে করি এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০ দল তার লক্ষ্যপথে এগিয়ে যেতে আরো শক্তিশালী হবে। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানাই এবং সেই সঙ্গে মির্জা ফখরুলের সাফল্য কামনা করছি। মির্জা ফখরুলের মতো একজন সৎ, আদর্শবান ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে এভাবে সম্মানীত করায় রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আস্থা আরো বেড়ে যাবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন