মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এ বিজয় ইসলামের, এ গৌরব বাংলাদেশের

প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

উবায়দুর রহমান খান নদভী : রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আদালত বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে এবং জনগণের হৃদয়ের স্পন্দন বুঝতে পেরে যে দ্রুততার সাথে রিটটি খারিজ ও রুল ডিসচার্জ করেছেন তা অতুলনীয়। এতে শতভাগ ধর্মপ্রাণ মানুষের সংবিধানে ধর্ম যথার্থ গুরুত্ব ও সম্মান লাভ করল। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্্ আহমদ শফী ও মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ভাষায়, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত থাকায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যরাও ধর্ম পালনে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা পাবে। রিট খারিজের পর হাইকোর্টে মিডিয়ার সামনে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বিজয় ইসলামের। ৯৫ ভাগ মুসলমানের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত থাকবে এটাই কাম্য ও স্বাভাবিক। এ রায়ে বাংলাদেশ গৌরবান্বিত হয়েছে। অতীতের মতোই আমরা সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাস করতে পারব। চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এটি মুসলমানের সেন্টিমেন্টের বিজয়। ৯৫ ভাগ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার সপক্ষে রায় দিয়ে আদালত দেশকে একটি বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। ইত্তেহাদুল উলামা ওয়াল মাশায়েখের চেয়ারম্যান মুহিউসসন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান ভবিষ্যতেও যেকোনো ঈমানী ইস্যুতে সবাইকে এবারের মতোই ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দলমত নির্বিশেষে ৯৫ ভাগ মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে আওয়াজ তুললে কোনো অপশক্তিই ইসলামের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। ২৮ মার্চকে কেন্দ্র করে দেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, মসজিদ-মাদরাসা, খানকাহ-দরবার নির্বিশেষে প্রতিটি ইসলামী ব্যক্তিত্ব, সংস্থা, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার ইস্যুতে যেভাবে সচেতন, সম্পৃক্ত ও সোচ্চার হয়েছিলেন এটা ছিল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক, প্রশংসনীয় এবং গৌরবের। দ্বীনি ইস্যুতে এমন ঐক্যবদ্ধ জাগরণ বাংলাদেশের ভেতরের শক্তি ও অন্তর্গত আগুনকে কিছুটা হলেও দৃশ্যমান করে তুলেছে। এটি নিঃসন্দেহে দেশের স্বাধীনতা, সম্মান, স্বকীয়তা ও সুদৃঢ় অবস্থানের জন্য খুবই কার্যকর। রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্বশীলদের এ সম্পদ কাজে লাগাতে হবে। এ সংহতি ধরে রাখতে হবে। এ জ্বালানি জাতি গঠন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে হবে। এ মহা সম্পদের নাম ৯৫ ভাগ মানুষের ঈমান, আস্থা ও ধর্মীয় চেতনার শক্তি।
শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলন-সংগ্রামে যারা যেভাবে ভূমিকা ও অবদান রেখেছেন জাতির তরফ থেকে তাদের মোবারকবাদ পাওনা হয়ে গেছে। বিশেষ করে অগ্রণী ইসলামী সংগঠনগুলোর সম্মানিত নেতাকর্মীদের যারা রাজধানী, বিভাগ, জেলা, গুরুত্বপূর্ণ শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া-মহল্লা ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ইউনিটসমূহে ঈমানী ইস্যুর এ আন্দোলনে সমন্বয়ের গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ ঈমানী আন্দোলনের পক্ষ থেকে তাদের সশ্রদ্ধ সালাম ও অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা। ইসলাম ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপসহীন ও অনন্য সংবাদপত্র দৈনিক ইনকিলাবের পক্ষ থেকেও এ বিপ্লবী ঈমানী শক্তির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও আন্তরিক সালাম। এ শক্তির বিকাশ ও সংহতিই বাংলাদেশের মূল চালিকা এবং প্রেরণা।
উচ্চ আদালত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটটি খারিজ করে দেয়ায় ৯৯.০৯ ভাগ মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। যারা ধর্ম ও ধার্মিকতায় বিশ্বাসী তারা সবসময়ই ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। ধর্মহীনতা বা নাস্তিকতা এ দেশের ধাতে নেই। বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসী এক শ’ ভাগ মানুষই এদেশে ধার্মিক। বিশেষ করে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেয়ার বিষয় নিয়ে ছিলেন ভীষণ উদ্বিগ্ন। যদিও ধর্মহীনতা বা নাস্তিকতা সংবিধানে লিখে দিলেই দেশের মানুষ ধর্মহীন নাস্তিক হয়ে যায় না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না থাকলেও মানুষ ইসলাম ত্যাগ করত না। কিন্তু রাষ্ট্র ও সংবিধানের দর্পণে দেশ ও জনগণের পরিচয় এবং আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠার জন্যই প্রয়োজন এ ধরনের বাস্তবতার প্রতিফলন।  বিগত দু’টি আদমশুমারি থেকে ধর্মীয় পরিচয়ের ছক তুলে দেয়ার ফলে সঠিক হার জানা সম্ভব নয় বলে ধরে নেয়া হয় এদেশে বর্তমানে ৯২ থেকে ৯৫ শতাংশ মুসলমান ৯৫ ভাগ মানুষের ধর্মীয় স্বকীয়তা সংবিধানে ঘোষিত হওয়া অপরিহার্য। ২৮ মার্চের রায়ে এ সত্যটিই স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। এ গৌরব বাংলাদেশের। এ বিজয় ইসলামের। এ কৃতিত্ব যারা রাষ্ট্রধর্ম স্থাপন, সংরক্ষণ, বহাল ইত্যাদিতে নানা সময়ে ভূমিকা রেখেছেন তাদের সকলের। এ শক্তি বাংলাদেশের, এ গৌরব ৯৫ ভাগ নাগরিকের, শতভাগ ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের। ধর্মহীন নাস্তিকতার স্থান এখানে নেই।
২০১৩ সালে মহানবী (সা:)-এর শানে চরম কটূক্তি ও নজিরবিহীন ঔদ্ধত্যের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ময়দানে নেমেছিল, আল্লাহর হাবীব (সা:)-এর ভালোবাসায়ই মানুষ তখন ময়দানে হেফাজতের সাথে যোগ দিয়েছিল। নির্দলীয় ও ঈমানী আন্দোলনের প্রতি যারা নানা কারণে বিরূপ ছিলেন বা বিরোধী ভূমিকা নিয়েছিলেন তারাও এবারকার আন্দোলনে ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। শাসকদলীয় কোনো নেতা, মন্ত্রী বা সরকারের কোনো দায়িত্বশীল রাষ্ট্রধর্ম আন্দোলনে উসকানিমূলক বা বিরূপ কোনো মন্তব্য করেননি, যা খুবই শোভনীয় হয়েছে। আন্দোলন সহিংস হয়নি। তৌহিদী জনতা সরকারকে প্রতিপক্ষও ভাবেনি। এ জন্য দায়িত্বশীলরা ধন্যবাদের যোগ্য। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষও ছিলেন যৌক্তিক ও স্বাভাবিক ভূমিকায়। এটাও ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। তারাও ধন্যবাদার্হ। বিগত আন্দোলনে শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডিতে সরকার বাম নাস্তিকদের ফাঁদে পা দিয়ে যে গণধিক্কার কুড়িয়েছিল, বলা হতো আগামী ৫০ বছরেও সরকার এ অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। বিদেশী সাংবাদিকরা মন্তব্য করেছিলেন, হেফাজত ঢাকা ছেড়েছে বাংলাদেশ ছাড়েনি। এসব পারসেপশন অনেকাংশেই কেটে যাচ্ছে। যারা বলতেন, হেফাজত শেষ হয়ে গেছে, সরকার তাদের বশ মানিয়ে ফেলেছে। এসব ধারণা ও প্রচারণা সর্বশেষ আন্দোলনের ফলে একটি ব্র্যাকেটে বন্দী হয়ে গেছে। কারণ, হেফাজত কোনো বিষয় নয়, ঈমানী আন্দোলনের পথনির্দেশ কেউ না কেউ দিতেই থাকবেন। এদেশে ইসলামী চেতনা ও ঈমানী আন্দোলন অনেকাংশেই মুক্তিযুদ্ধের মতো, যা এক ব্যানারে হওয়াও জরুরি নয়। কার্যত এক নেতৃত্বাধীন হওয়ারও প্রয়োজন নেই। মুসলমানরা যে যেখানে আছেন নিজ নিজ ঈমানী তাগিদে তারা সোচ্চার হতে জানেন। রাষ্ট্রধর্মের জন্য তৌহিদী জনতা মিছিল-মিটিং-বিক্ষোভ করেছেন। এ জন্য মানুষ নফল নামাজ পড়েছেন, রোজা রেখেছেন, শেষ রাতে উঠে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন। সিজদায় লুটিয়ে পড়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলেছেন, দান-খয়রাত করেছেন। এমন ধর্মপ্রাণ, ইসলামপ্রিয়, নবীপ্রেমিক ও দেশপাগল মানুষ যে ভূখ-ে আছে সেখানে সংগঠন ও নেতাদের করণীয় খুব থাকেও না। ঈমানই তাদের সংগঠন, রাসূল (সা:)ই তাদের মহান নেতা ও পথপ্রদর্শক। হেফাজতের ঘটনার পর ধর্মপ্রাণ মানুষ যেমন চুপসে গিয়েছিল রাষ্ট্রধর্ম বহাল আন্দোলনে তারা এখন উজ্জীবিত, আনন্দিত ও অনেকটাই তৃপ্ত। এ উজ্জীবনকে দক্ষতার সাথে কাজে লাগালে এটি দেশ ও জাতি গঠনের অনন্য প্রেরণা হতে পারে। ধর্মপ্রাণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও হৃদয়ের স্পন্দন  বোঝার ক্ষমতা যাদের আছে, যারা গণমানুষের বিশ্বাস, আস্থা ও জীবনবোধের অনুকূলে কাজ করবেন তারাই ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশের মন জয় করতে পারবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন