কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকা-ের কিছু কিছু আলামত বা প্রমাণ নষ্ট করা হয়ে থাকতে পারে। আর এটা হয়ে থাকলে বিচার প্রক্রিয়াকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তের কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (জামাক) চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।
গতকাল সকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লা সেনানিবাসে পৌঁছে তনু হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে দুপুরে কুমিল্লা সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের একপর্যায়ে আলোচিত ওই হত্যাকা- প্রসঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন। এদিকে ডিবি থেকে দুইদিন আগে সিআইডির উপর তনু হত্যা মামলার তদন্ত ন্যস্ত হলেও সংস্থাটি গতকাল পর্যন্ত মামলার তদন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি।
তনু হত্যাকা-, ঘটনাস্থল ও মামলা প্রসঙ্গে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি সেনানিবাসে গিয়ে ঘটনাস্থল দেখেছি। যে জায়গাটিতে তনুর নিথর দেহ পড়েছিল জায়গাটি বেশ পরিষ্কার মনে হয়েছে। যেখানে তনুর লাশ মিলেছে সেখানকার মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন এ জায়গায় যদি নতুন মাটি ভরাট করা হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু অপরাধের অনেক সাক্ষ্য বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি সাক্ষ্যপ্রমাণ বা আলামত নষ্টের বিষয়টি মামলা তদন্তের কাজকে জটিল করে দিতে পারে। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা মনে করি যে বা যারা সাক্ষ্যপ্রমাণ কোন না কোনভাবে পরিবর্তন করেছে তাদেরকেই আগে বিচারের আওতায় আনা উচিত। কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, তনু হত্যাকা-ের বিষয় নিয়ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা মামলার তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন এবং করে যাবেন বলে জানিয়েছেন। মামলার বিষয়ে ডিসি এসপি সাহেবের সাথেও কথা হয়েছে। সেনানিবাস এলাকার বাসায় তনুর মা-বাবার সাথেও কথা বলেছি। দশ বারদিন হয়ে গেছে অপরাধী ধরা পড়ছে না। তারা কান্নাকাটি করেছেন। এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, তনু হত্যাকা- একটি মর্মান্তিক ঘটনা। গোটা দেশবাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছে। হত্যার প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তাই এ ঘটনাকে সর্Ÿোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আর এ হত্যার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে সিআইডির কাছে চাঞ্চল্যকর তনু মামলার তদন্ত ন্যস্ত হলেও অপরাধ তদন্তের এই সংস্থাটি এখনো পর্যন্ত মামলাটি নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেনি। গতকাল রাত আটটা পর্যন্তও আগের তদন্ত সংস্থা ডিবির কাছ থেকে তনু হত্যা মামলার যাবতীয় কাগজপত্র সিআইডির হাতে এসে পৌঁছে নি। আর এ কারণেই তদন্ত প্রাপ্তির দুইদিন অতিবাহিত হলেও সিআইডি কাজ শুরু করতে পারেনি। চাঞ্চল্যকর তনু হত্যা মামলা তদন্তে সহায়তায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হিমায়েত হোসেন। কমিটিতে রয়েছেন ঢাকা (মেট্্েরা দক্ষিণ) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ, কুমিল্লা-নোয়াখালি অঞ্চলের সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করীম খান, কুমিল্লা পুলিশ সুপার বা তার প্রতিনিধি, সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক ও পরিদর্শক খন্দকার গোলাম শাহনেওয়াজ। এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় তনুর লাশের পুনঃময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহার নেতেৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম। ময়নাতদন্ত শেষে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সিআইডির ক্রাইম সিন টিম তনুর মাথার চুল, হাতের নখসহ কিছু অংশ নিয়ে যায়। এছাড়াও ডিএনএ টেস্টের জন্য তনুর শরীরের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করা হয়।
এদিকে সোহাগী জাহান তনু হত্যাকা- প্রসঙ্গে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করীম শাম্মি স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোহাগী জাহান তনু হত্যাকা-ের ব্যাপারে সেনাবাহিনী শুরু থেকেই সকল তদন্তকারী সংস্থাকে আন্তরিকভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী সম্পর্কে অনুমান নির্ভর বক্তব্য প্রদান ও প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। যা মোটেই কাম্য নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন