শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সিআইডির তদন্ত শুরু - তনু হত্যা নিয়ে নানা প্রশ্ন জনমনে

প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকা-ের তদন্ত কাজ শুরু করেছে সিআইডি। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় ঘটনাস্থল কুমিল্লা সেনানিবাস অভ্যন্তরের পাহাড় হাউজ এলাকার যে ঝোপ-জঙ্গলে তনুর লাশ পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকেই বহুল আলোচিত এ হত্যাকা-ের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির একটি দল। তদন্তকারি দলটি নিহত তনুর মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ সেনা কর্মকর্তাদের সাথেও ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন। এদিকে তনু হত্যাকা- নিয়ে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে জনমনে। এসব প্রশ্নের সূত্র ধরেও এগুবে সিআইডি। আর এমন আভাসও মিলেছে তদন্ত দলের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।

দেশব্যাপী আলোচিত তনু হত্যাকা-ের ১২দিন অতিবাহিত হলেও অপরাধী সনাক্তের ঘরটি খালিই রয়েছে। থানা পুলিশের পর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি হয়ে মামলাটি এখন তদন্ত করছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি থেকে মামলার সকল নথিপত্র সিআইডিতে হস্তান্তরের পর সবশেষে দায়িত্ব নেয়া এ সংস্থাটি গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে চাঞ্চল্যকর তনু হত্যা মামলাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত সিআইডির তদন্ত দল মামলাটি নিয়ে আশাবাদী। সিআইডির সিনিয়র অফিসাররা এ হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে সব্বোর্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় সিআইডির গঠিত তদন্ত দলের ছয় সদস্যের মধ্যে কুমিল্লা-নোয়াখালি অঞ্চলের সিআইডির সহকারি পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সহকারি পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, পরিদর্শক খন্দকার গোলাম শাহনেওয়াজ ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম কুমিল্লা সেনানিবাসের পাহাড় হাউজ এলাকায় যান। তনুদের কোয়ার্টারের কাছাকাছি যে স্থানটিতে লাশের সন্ধান মিলেছিল সেখানকার পরিবেশসহ সবকিছু ঘুরে দেখেন সিআইডির তদন্ত দল। জানা গেছে তদন্ত দলের সদস্যগণ সেনানিবাস এলাকায় তনুদের কোয়ার্টারের অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সিআইডির তদন্ত দল ঘটনাস্থল, তনু ওইদিন সাজেন্ট জাহিদের বাসা থেকে টিউশনি সেরে বেরিয়েছিল সেখানকার পরিবেশ, সন্ধ্যার পর ওই বাসা থেকে তনুদের কোয়ার্টার পর্যন্ত জায়গাটির পরিবেশ কেমন থাকে এসব গুরুত্বপূর্ণ খুটিনাটি বিষয়গুলো খোঁজখবর ও পর্যবেক্ষণ করেছেন।
জানা গেছে, সিআইডির তদন্ত দল ও তদন্তকারি কর্মকর্তা নিহত তনুর বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে মামলা তদন্তে অগ্রগতি দেখা দেবে এমনসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তদন্ত দল সেনানিবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তদন্ত দলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, তদন্তের শুরুতেই তারা ঘটনাস্থল ও পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই বুঝা যাবে মৃত্যুর কারণ কি। আর লাশ উদ্ধারের কতোক্ষণ আগে তনুকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে রিপোর্ট কখন আসবে এ আশায় তদন্ত দল বসে নেই। কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন অপরাধী সনাক্তসহ হত্যার মোটিভ উদঘাটনে তৎপরতা বেড়েছে। আগামী রবিবার বা সোমবার ঢাকা থেকে তদন্ত দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা (মেট্্েরা দক্ষিণ) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ আসবেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার তদন্ত করেছিলেন।
এদিকে তনু হত্যাকা- নিয়ে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে জনমনে। দুই দফা ময়নাতদন্ত, সুরতহাল রির্পোটে গরমিল, আলামত নষ্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন কি তনুর খোঁজে বের হবার পর ওই রাতে লাশ পাবার কাছাকাছি স্থান দিয়ে তিন যুবককে পালিয়ে সৈনিক ক্লাবের দিকে চলে যেতে দেখেছেন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন। তিনি শুরু থেকে গণমাধ্যমসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে বিষয়টি বলেছেন। কিন্তু ওই তিন যুবক কে ছিল, কেনই বা ঘটনাস্থল থেকে তনুর বাবাসহ অন্যদের দেখে পালিয়েছে এসব বিষয় এখনো অন্ধকারে থাকায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ঘাতকরা কী আড়ালে চলে যাচ্ছে? ঘটনার দিন ২০মার্চ তনু বিকেল সোয়া ৫টায় সেনানিবাসের কোয়র্টারের বাসা থেকে বের হয়ে প্রায় ৭/৮শ’ গজ দূরে ১২ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টারে সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনিতে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই বাসা থেকে টিউশনি সেরে তনু বের হয়ে ওই এলাকাতেই তনুর অবস্থান ছিল প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত। তনুর মোবাইল ফোনের কললিস্ট অনুযায়ি জানা যায়, ওই ১৫ মিনিট সে কাউসার নামে এক কলারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছে। পৌনে ৭টার পর থেকে তনুর মোবাইলে ইনকামিং ও আউটগোয়িং কোন কলের তালিকা ছিল না। তনুর মোবাইল ফোনের সূত্র বলছে তার অবস্থান ওই এলাকাতেই ছিল। তাহলে মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও তার অবস্থান নির্ণয় করে ওই সময়ে আশপাশের বাসার লোকজন, সন্ধ্যার পর আলোক ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন ছিল এসব নিয়ে আগের দুইটি সংস্থার তদন্তে দুবর্লতা ছিল বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। আর দুর্বলতার পেছনে কোন কারণ ছিল কিনা তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সোহাগী জাহান তনুর পরিবার, স্বজন থেকে শুরু করে হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসা সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সিআইডির তদন্তে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে, অপরাধীরা সনাক্ত হবে, বিচারের আওতায় আসবে এমন প্রত্যাশার পাশাপাশি শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সাগর-রুনির মতো তনু হত্যা মামলাটি যাতে হিমাগারে স্থান না পায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন