ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন চিকিৎসকরা বিশ্বের প্রথম এইচআইভি আক্রান্ত এক রোগীর লিভার আরেক এইচআইভি পজিটিভ রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। চিকিৎসকরা গত বুধবার এই সাফল্যের কথা ঘোষণা করেন। এ ধরনের অপারেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার তিন বছর পর এই অপারেশন পরিচালনা করা হলো।
এইডস রোগের কারণে এই ভাইরাসে ২০ বছরের বেশি আগে আক্রান্ত এক ব্যক্তির শরীরে এক মৃত দাতার লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা এ কথা জানিয়েছেন। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী একই দাতা তার কিডনিও আরেক রোগীকে প্রতিস্থাপনের জন্য দান করেছেন।
জন্স হপকিন্স মেডিসিনের সার্জারির অধ্যাপক ডোরি সেগেভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে আমরা বিশ্বের প্রথম এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর লিভার আরেক এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করেছি এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এইচআইভি রোগীর কিডনি আরেক এইচআইভি রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করেছি। এর আগে এইচআইভিতে আক্রান্ত দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপনের অপারেশন হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
ডক্টর সেগেভ বলেন, এই অপারেশন ছিল আমাদের জন্য খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। তবে এটাই বাস্তব এবং এই প্রক্রিয়া শুরু হলো।
যাদের শরীরে লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তাদের পরিচয় জানানো হয়নি। তবে চিকিৎসক দল বলছেন, তারা ভালোভাবে সেরে উঠছেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগী ইতিমধ্যে হাসপাতাল ত্যাগও করেছেন। দাতার নামও প্রকাশ করা হয়নি। তবে তার পরিবার এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে যাতে তাকে এক মহান হৃদয়ের বলে বর্ণনা করা হয়েছে যিনি ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছেন। এতে আরো বলা হয়, ‘তিনি একজন কন্যা, মা, বোন, আন্টি এবং ভালো বন্ধু।’ ‘তিনি জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া মানুষদের জন্য কঠিন লড়াই করেছেন এবং তাদের সাহায্য করার মধ্য দিয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এখনও হাজার হাজার মানুষ অপক্ষো করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে’ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
মার্কিন কংগ্রেস ‘হোপ’ আইনটি পাস করার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে এইচআইভি আক্রান্ত দাতার কোন অঙ্গ অন্যের শরীরে ব্যবহার বেআইনি ছিল। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৩ সালে কংগ্রেসের নতুন আইনটি স্বাক্ষর করেন। নতুন এই আইনের ফলে এইচআইভিতে আক্রান্তরা এইচআইভি দাতাদের অঙ্গ গ্রহণ করতে পারবেন। তবে অঙ্গ দাতার সংখ্যা দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেককে মৃত্যু বরণ করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে এমন লোকের সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার লোক প্রাণ হারায়।
সাগেভ বলেন, তার অনুসন্ধান, প্রতিবছর এইচআইভিতে আক্রান্ত যারা মারা যান তাদের মধ্যে ৫শ থেকে ৬শ জনের অঙ্গ দানের জন্য যথেষ্ট সুস্থ থাকে। এখন তাদের অঙ্গ অন্যান্য এইচআইভি রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা যাবে এবং এতে বছরে হাজার খানেক মানুষের প্রাণ রক্ষা করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন এন্ড অনকোলজির সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টিন ডুরান্ড বলেন, এই অপারেশন এখনও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, দাতার কাছ থেকে দ্বিতীয় বারের মতো এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। তিনি বলেন, দাতার ভাইরাসে প্রতিরোধমূলক স্ট্রেইন রয়েছে কি না চিকিৎসকদের এটাও অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
সাগেভ বলেন, জন্স হপকিন্স প্রথম এই অস্ত্রোপচার চালালেও যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েক ডজন হাসপাতাল রয়েছে যাদের পজিটিভ থেকে পজিটিভ রোগীদের অপারেশন চালানোর জটিলতা জানার ক্ষেত্রে নেগেটিভ থেকে পজিটিভ প্রতিস্থাপনের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এইচআইভি মেডিসিন অ্যাসোসিয়েশনসহ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার গ্রুপগুলো এই দুইটি অপারেশনের প্রশংসা করছেন।
এইচআইভিএমএ বোর্ডের চেয়ারপার্সন ক্যারোল ডেল রিও এক বিবৃতিতে বলেন, লিভার ও কিডনি বিকল হওয়া এইচআইভি রোগীরা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তারা অনুরূপ এইচআইভি রোগী যারা মারা গেছেন তাদের লিভার ও কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন অবশ্যই তা অনেক ভালো খবর। এর মাধ্যমে শত শত এইচআইভি রোগীর জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই সাফল্য মৃত দাতাদের অঙ্গদান এইচআইভি রোগীদের সামনে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। সূত্র : এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন