অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নামে তার কাছে টাকা পাঠানো হয়েছিল বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে সংশ্লিষ্ট শ্রীলঙ্কান প্রতিষ্ঠান শালিকা ফাউন্ডেশনের মালিক শালিকা পেরেরা নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। শালিকা বলেছেন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি থেকে তার ফাউন্ডেশনে বিশাল অঙ্কের অর্থ আসবে বলে তাকে জানিয়েছিল তার এক সহযোগী। সেই টাকা যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া টাকা তা জানতেন না তিনি। ৩৬ বছর বয়সী শালিকা পেরেরাকে একজন উঠতি উদ্যোক্তা হিসেবে তুলে ধরে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে কথা বলার সুযোগ পেয়ে শালিকা পেরেরা জানান, জাইকা থেকে তার ফাউন্ডেশনের নামে টাকা আসার কথা ছিল। তবে সংস্থাটির সঙ্গে তিনি নিজে সরাসরি কোনো যোগাযোগ করেননি। এই দায়িত্বে ছিলেন তারই এক সহযোগী। সেই সহযোগীই জাপানে সকল যোগাযোগ রাখতো তার হয়ে। সে অনুযায়ী তার ফাউন্ডেশনে ব্যাংক ম্যাসেজিং সিস্টেম সুইফটের মাধ্যমে ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়। তবে শালিকার ফাউন্ডেশনে কোনো টাকা পাঠানো হয়নি বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান জাইকা।
জাইকা অস্বীকার করায় নিজের দাবির সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে সেই লেনদেনের রসিদও দেখিয়েছেন শালিকা। তাতে দেখা যায় আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। রসিদ অনুযায়ী জাইকা’র হয়ে শালিকার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশের পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নামে!
তাতে উল্লেখ ছিল এই টাকা ২০১০ সালে জাইকা থেকে ঋণ নিয়েছিল বোর্ড। এই তথ্যের ভিত্তিতে বোর্ডের বক্তব্য চায় রয়টার্স। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাটিকে বোর্ডের চেয়ারম্যান জেনারেল মইন উদ্দীন বলেন, হয়তো তারা পুরো বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছে। ইতোমধ্যে শালিকা পেরেরা, তার স্বামী ও সহযোগীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শ্রীলঙ্কা। শালিকার সেই কথিত পরিচিতজনকেও আটক করা হয়েছে। তবে তার নাম প্রকাশিত হয়নি। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সেই ব্যক্তির দাবি, সে নিজে নয় বরং এক জাপানির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের সেই ‘অনুদান’ এসেছিল। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শালিকা পেরেরা তার দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাকে অন্যায় বলে মন্তব্য করেন। তদন্ত চলছে জানিয়ে তার বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি শ্রীলঙ্কা পুলিশ।
ফেব্রুয়ারিতে লোপাট হওয়া প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২০ মিলিয়নের খোঁজ মেলে শ্রীলঙ্কায়। রিজার্ভ চুরিতে জড়িতরা শালিকা ফাউন্ডেশন বানান লিখতে গিয়ে ভুলে ‘ফানন্ডেশন’ লেখায় লেনদেন আটকে যায়। বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ ব্যাপারে নড়েচড়ে বসে শ্রীলঙ্কা প্রশাসন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চুরি যাওয়া টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে জড়িতদের ব্যাপারে এখনো কোনো কঠোর আইনী পদক্ষেপ নেয়নি দেশটি।
লোপাট হওয়া টাকার একটি বড় অংশ ফিলিপিন্সে চলে যাওয়ার তথ্যে দেশটির সিনেট কঠোর পদক্ষেপ নেয়। ইতিহাসের অন্যতম বড় এই অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে ফিলিপিন্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন