ফিরোজ আহমাদ
ঝগড়া বিবাদ সর্ম্পকে পবিত্র কালামুলাহ শরীফে সূরা হুজরাতের ৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “মু’মিনদের দুটো দল যদি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে বসে, তখন তোমরা উভয়ের মধ্যে ফয়সালা করে দেবে, অতঃপর তাদের এক দল যদি অন্য দলের ওপর অত্যাচার করে, তাহলে যে দলটি অত্যাচার করছে তার বিরুদ্ধেই লড়াই করবে- যতক্ষণ পর্যন্ত সে দলটি আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে না আসে, যদি দলটি ফিরে আসে তখন তোমরা দুটো দলের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে ফায়সালা করে দেবে এবং তোমরা ন্যায় বিচার করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহপাক ন্যায় বিচারকদের ভালোবাসেন”।
পরিবার সমাজ রাষ্ট্র সর্বত্রই বিবাদ অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে। দুনিয়াতে মানুষের বসবাসের শুরুতে হাবিলকে হত্যার মাধ্যমে কাবিল বিবাদের সূচনা করে। ইহার পূর্বেও আল্লাহ যখন আদম সৃষ্টির ইচ্ছা ফিরিশতাদের নিকট প্রকাশ করেছিলেন। তখন ফিরিশতারা প্রভুর নিকট অভিযোগ করেছিলেন মানুষ দুনিয়ার জমিনে পরস্পর খুন রাহাজানি করবে। ঝগড়া বিবাদ প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারকে কেন্দ্র করে কখনও ফায়দা লুটার জন্যে কখনও নিজের উদ্দেশ্য হাছিলের জন্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে। ঝগড়া বিবাদ ভাই-ভাইয়ে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, চাচা-ভাতিজা মধ্যে, এক গোত্র অন্য গোত্রের মধ্যে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে নিম্ন পদবীর চাকরিজীবীর সাথে, পরস্পর রাজনৈতিক দলের মধ্যে, ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের মধ্যে, পরস্পর ছাত্র সংগঠনের, এক গ্রামের সাথে অন্য গ্রামের, আত্মীয়ের সাথে আত্মীয়ের হয়ে থাকে। সূরা মায়েদার ৬৪ নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, “ আলাহ ফ্যাসাদকারীকে ভালোবাসেন না”।
বর্তমানে প্রায়শঃ দেখা যায় সামান্য একটু পারস্পরিক বিবাদকে কেন্দ্র করে আমাদের পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে। কেউ এক সাথে থাকতে চায় না। একটু-আধটু হতে না হতে বাবা মা থেকে ছেলেরা স্ত্রী সন্তান নিয়ে পৃথক হয়ে যাচ্ছে। মা বাবার কথা দূরে থাক নাম পর্যন্ত অনেক সন্তানেরা শুনতে পারে না। সামান্য বিষয় নিয়ে প্রতিবেশীরা কেউ কারো সাথে কথা বলে না। বড় ভাইয়ের সাথে ছোট ভাই কথা বলে না। সূরা আল ইমরানের ১০১-১০২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভয় কর আর মুসলমান হওয়া ব্যতীত কখনো মৃত্যুবরণ করো না। আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিছিন্ন হয়ো না।
ঝগড়া বিবাদ সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। পারস্পরিক বিবাদকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাস নৈরাজ্য খুন ধর্ষণ এসিড নিক্ষেপ অপহরণ হানাহানি রাহাজানি দখল বেদখলের ঘটনা ঘটে। এর ফলে সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। সমাজ পরিবার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা অস্থির হয়ে পড়ে। আল্লাহ সুবহানতায়ালা আমাদেরকে বিবাদ সৃষ্টি না করে বিবাদ মিটিয়ে দেয়ার জন্যে হুকুম করেছেন। ইনসাফের সাথে বিবাদ মীমাংসাকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন। আমরা অনেক সময় বিবাদ মিটিয়ে দেয়ার সময় একটু-আধটু এদিক-সেদিক করে ফেলি। আল্লাহ আমাদের সমতার ভিত্তিতে ইনসাফের সাথে বিবাদ মিটিয়ে দেয়ার জন্যে বলেছেন। সূরা মায়েদার ৪২ নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, “আল্লাহ ন্যায় নিষ্ঠদের ভালোবাসেন”।
ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দেয়ার ফজিলত সম্পর্কে সূরা হুজরাতের ১০ নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, “মু’মিনরা তো (একে অপরের) ভাই বেরাদর, অতত্রব তোমাদের ভাইদের মাঝে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহ পাককে ভয় কর আশা করা যায় তোমাদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করা হবে”। যারা ন্যায় বিচার করবে বিবাদ মিটিয়ে দিবেন। আল্লাহ তাদের ওপর দয়া করবেন। যারা আল্লাহর দয়া পাওয়ার জন্যে মনোনীত হবেন তারাই প্রকৃত ভাগ্যবান। আমরা যদি আল্লাহর দয়া পাওয়ার আশা করি তাহলে পরিবার সমাজ রাষ্ট্রের বিবাদগুলো মিটিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে চেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ছোটখাটো বিবাদগুলো মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। তাহলে পরিবার সমাজ সবই সুন্দর হবে। আমরা আল্লাহর দয়া পাব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন