বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চরম ভরাডুবি লজ্জায় বিএনপি ইউপি নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাচ্ছে মাহবুব-উল আলম হানিফ

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে চলতি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভোট বর্জনের বিএনপির হুমকিকে ‘চরম ভরাডুবির ও ব্যর্থতার লজ্জায়’ সরে যাওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। ইউপি নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে বিএনপির ইঙ্গিতের সমালোচনা করে দলটির যুুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, নির্বাচনে বিএনপি জনগণের কাছে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে তাদের চরম ভরাডুবি হয়েছে। তাই লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে তারা এখন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চিন্তা করছে। এ সময় চলতি ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিই ক্ষোভ ঝাড়েন হানিফ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশীরাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশকে টেনে আনছে। আমাদের দেশের মানুষের একটা মারাত্মক প্রবণতা আছে। সেটা হলো বিদেশী কোনো মানুষ দেখলেই আমরা মনে করি, সে সাক্ষাৎ ‘ভগবান’। আমাদের দেশের ছোটখাটো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের কাছে জিজ্ঞেস করার কোনো যৌক্তিকতা আছে? গতকাল শনিবার ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক সভার পর ইউপি নির্বাচনের ভোট নিয়ে বিএনপির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন হানিফ। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, কেউ যদি ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন বর্জন করতে চায় তাহলে তো অন্য কারও কিছু বলার থাকে না। তবে বিএনপিকে সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসতে হলে এ ব্যর্থতা তাদের মেনে নিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এখানে প্রতিটি জনগণ ও রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বর্জনের। সে হিসেবে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কেউই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, হঠাৎ করে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের কথা ভাবছে কেন? কারণ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনগণ তাদের দুঃশাসনে তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে যে ভুল করেছিল, তার জন্য জনগণের ওপর খড়গ চালিয়েছিল। সেজন্য জ্বালাও-পোড়াও করেছিল, মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল। সে কারণে জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, উন্নয়নের কারণে বর্তমানে জনগণ আমাদের প্রতি আস্থাশীল। যুক্তরাষ্ট্রের একটি জরিপেও দেখা গেছে যে ৮০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনার সরকারের সুশাসনের প্রতি আস্থাশীল। ভোটে তো তার প্রতিফলন ঘটবে। এটাই স্বাভাবিক।
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়ে হানিফ বলেন, বাংলাদেশীরাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশকে টেনে আনছে।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের মানুষের একটা মারাত্মক প্রবণতা আছে, সেটা হলো বিদেশী কোনো মানুষ দেখলেই আমরা মনে করি, ‘সে সাক্ষাৎ ভগবান।’ আমাদের দেশের ছোটখাটো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের কাছে জিজ্ঞেস করার কোনো যৌক্তিকতা আছে?
হানিফ বলেন, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আছেন। ওইসব দেশের কেউ কি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করে? আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতের কোনো সাংবাদিক কি প্রভাবশালী কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে? আমার জানামতে কেউ এটা করে না। কিন্তু আমাদের মধ্যে এ প্রবণতাটা বেশি। কোনো কিছু হলেই আমরা বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের কাছে দৌড়ে চলে যাই। কেন? এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচনের সহিসংতা নিয়ে হানিফ বলেন, আজকে গোটা বিশ্বে রাজনৈতিক-সামাজিক নানা ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত হত্যার ঘটনা ঘটছে। এর মানে কি সেদেশের সরকার ব্যর্থ? আসলে বিভিন্ন স্থানে একাধিক মেম্বার প্রার্থী থাকার কারণে দেখা যায় সামাজিক, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে কিছু সহিংসতা হচ্ছে। এসব কীভাবে এড়ানো যায়, সে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।
হানিফ আরও বলেন, আমরা এ ধরনের সহিংসতা চাই না। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
এর আগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক যৌথ সভা হয়।
সভা শেষে হানিফ সাংবাদিকদের কাছে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ৭টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এছাড়া মুজিবনগরে ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সাড়ে ১০টায় মুজিবনগরের আ¤্রকাননে শেখ হাসিনা মঞ্চে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন