শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

মসুলে নিহত বেসামরিক মানুষের সংখ্যা আজো নিরূপণ করা হয়নি

জোট বাহিনী ও ইরাকি সেনাদের নির্মমতা

দি আটলান্টিক | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আঠারো মাস আগে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর ভারি অস্ত্রের সমর্থনে মসুলে পৌঁছেছিল ইরাকি সেনাবাহিনী। মসুল ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ন্ত্রিত সর্ববৃহৎ শহর। সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে বিতাড়িত করে মসুল দখলে ইরাকি বাহিনীর সময় লেগেছিল নয় মাস। ধারণার চেয়ে অনেক বেশি সময়। সে সময় কৌশল পরিবর্তন করা হয়েছিল। ওবামা প্রশাসনের সময় মার্কিন জোটের সাথে জড়িত অধিক সংখ্যক কমান্ডারকে মসুলে বিমান হামলার অক্ষাংশ দেয়া হয়েছিল। যখন ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেন তিনি এ ধারা আরো জোরদার করলেন। তিনি নিলেন নির্মূল কৌশল। মসুল যুদ্ধের প্রথম দিকে ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর এলিট ইউনিট মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার হয়। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তারা মসুল পুনর্দখল করে। জাতিসংঘের মতে, এ সময় নগরীতে ৮০ লাখ টনের মত ধ্বংসস্ত‚প ছড়িয়ে ছিল যা আকারে মিসরের গিজার সর্ববৃহৎ পিরামিডের চেয়ে ৩ গুণ বেশি। মসুলে নয় মাসের যুদ্ধে কত সংখ্যক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে তা আজ পর্যন্ত নিরূপণ করা হয়নি।
২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর মসুলে যে নগর যুদ্ধ শুরু হয় মার্কিন কর্মকর্তারা তাকে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর প্রচন্ডতম নগর যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সরকারী তথ্য অনুযায়ী ইরাকি বাহিনীকে মসুল অভিযানে সমর্থন দিতে ডজনখানেক অংশীদার নিয়ে গঠিত মার্কিন নেতৃত¦াধীন জোট বাহিনী নগরীতে ১২৫০ বারেরও বেশি বিমান হামলা চালায়। তারা হাজার হাজার লক্ষ্যবস্তুতে ২৯ হাজারেরও বেশি গোলাবর্ষণ করে। কিন্তু মসুল পুনর্দখলের ৯ মাস পরও অভিযানের সাথে সংশ্লিষ্টরা হিসাব করে দেখেননি যে কত সংখ্যক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এপির হিসাবে বলা হয়, মসুলে ৯ থেকে ১১ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়। এটি সরকারী হিসাবের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ নিহত হয় জোট বাহিনী ও ইরাকি বিমান হামলায়। এক পৃথক তদন্তে এন পি আর বলে যে অক্টোবর ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের জুলাইয়ের মধ্যে নগরীর মর্গ ৪৮৬৫ জনের নামে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে। ৫ হাজারেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
এ রিপোর্ট সম্পর্কে পশ্চিমা কর্তৃপক্ষ অল্পই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ওয়াশিংটন বা তাদের স্থানীয় মিত্র বা আন্তর্জাতিক মিত্ররা এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি যে তারা মসুলে জীবনহানির একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ করবে। কিংবা তারা তাদের বাহিনীর হাতে নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার মত কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নেয়নি। ইরাক যুদ্ধের সময় পেন্টাগন তা করলেও আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইতে মাত্র দু’বার তারা তা করেছে।
সঠিক ভাবে কেউ বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা নির্ধারণ করছে কিনা তা বলা মুশকিল। পেন্টাগন ও বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস বেসামরিক মৃত্যুর প্রশ্নটি আইএস দমন জোটের দিকে চালিত করেছে যা আইএসের বিরুদ্ধে ইরাকি বাহিনীর লড়াইয়ে ইরাক সরকারকে সমর্থনকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিত¦ করে। জোট শুধু তাদের নিজেদের বলে চিহ্নিত হামলাগুলোর তদন্ত করেছে এবং পুনর্মূল্যায়নের কারণ পেয়েছে। এর অর্থ মসুলে শুধু মার্কিন ও ফরাসি গোলাবর্ষণ এবং মার্কিন, ব্রিটিশ, ফরাসি ও অস্ট্রেলীয় বিমান হামলাই পর্যালোচনার আওতায় এসেছে। এর ফলে এ প্রক্রিয়ায় বেসামরিক লোকদের মৃত্য্রুর সংখ্যা অনেক কম দেখানো হয়েছে যার ভিত্তি ছিল স্থানীয় রিপোর্ট ও জোটের নিজস্ব হামলার তথ্য। কিন্তু জোটের হিসাব মসুলে সার্বিক মৃত্যুর মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশকে প্রকাশ করে।
আজ পর্যন্ত জোট বাহিনী তাদের বিমান হামলায় মাত্র ৩৫২ জন বেসামরিক লোকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে। জোট বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, মসুলের নাগরিকদের উপর আইএসের দখল ও পরবর্তীতে জোট বাহিনীর সমর্থনে তাদের মুক্ত করার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির মূল্যায়ন ইরাক সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে। কিন্তু ইরাকি কর্মকর্তারা এগিয়ে আসছেন না এবং এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলা হলেও তারা জবাব দেননি। এপির সাথে এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল এবাদি এমনও বলেছেন যে মসুলের লড়াইয়ে মাত্র ১২৬০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
এয়ারওয়ারস-এর গবেষকগণ হাজার হাজার স্থানীয় রিপোর্ট ও নগরীতে যুদ্ধের সময়কার দাবিসমূহ মনিটর করেছেন। এ সময় মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা রিপোর্টার ও গবেষকদের সাথে তাদের অনুসন্ধান নিয়ে কথা বলেছেন। এ সবের ভিত্তিতে ধারণা করা হয় যে মসুলে নয় মাসের লড়াইয়ে জোট বাহিনীর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ১০৬৬ থেকে ১৫৭৯ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে মোট নিহতের সংখ্যা ৬ হাজার থেকে ৯ হাজার বলা হয়েছে।
মসুলের ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিক ও সাহায্য কর্মীর সাক্ষাতকার নেয়া হলে তারা জোরের সাথে বহু হাজার লোক নিহত হওয়ার কথা সমর্থন করেন। তাদের রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে জোট ও আমেরিকান কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সাথে নীতিগত কারণে কথা বলেনি। একই কাজ করেছে ইরাকি কর্তৃপক্ষ। তা করা হলে বহু মারাত্মক ঘটনার কথা প্রকাশ পেত।
২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি ইরাকি কর্মকর্তারা পূর্ব মসুল মুক্ত করার কথা ঘোষণা করেন। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইরাকি সৈন্যরা ঘনবসতি সম্পন্ন পশ্চিম মসুলে অনুপ্রবেশের বিপজ্জনক কাজ শুরু করে। পাঁচ মাস পর তারা পশ্চিম মসুল দখল করে। মসুল দখলে স্বল্প প্রশিক্ষিত ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী অংশ নেয়। াদের মধ্যে ছিল নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাত ইরাকি ফেডারেল পুলিশ। কিছু সাংবাদিক ও ত্রাণ কর্মী বলেন, লড়াইয়ের শেষদিকে ইরাকি বাহিনী বেসামরিক লোকজন পূর্ণ এলাকায় বিস্ফোরক নিক্ষেপ করত। কিছু ইউনিট গাড়ির পিছন থেকে উন্নয়নকৃত রকেট ছুঁড়ত।
স্কটল্যান্ডের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জন বেক বলেন, বহু রোককে আমি বলতে শুনেছি যে তাদের আত্মীয়-স্বজন ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অনেকে বলেছে, তাদের গোটা পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। (অসমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন