সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় স্ট্যাটিন

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : স্বাস্থ্যবান মানুষ তাদের হৃদরোগ সমস্যার ঝুঁকি কমাতে পারে। যদি তারা আগে থেকেই স্ট্যাটিন নামে পরিচিত কোলেসটেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া শুরু করে, তাহলে তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে বলে গবেষাণায় বলা হয়েছে। ২১টি দেশের ১৩ হাজারের বেশি লোকের ওপর পরিচালিত এই ব্যাপকভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল থেকে এ তথ্য মিলেছে। শিকাগোতে আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি কনফারেন্সে শনিবার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা লোকজনদের জন্য এখন পর্যন্ত মূলত স্ট্যাটিনস ওষুধটি সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। হৃদরোগে প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ লোক মারা যায় এবং প্রায় ৫ কোটি লোকের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণ হৃদরোগ।
ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের সিনিয়র গবেষক অধ্যাপক সেলিম ইউসুফ বলেন, এই ওষুধটি ব্যবহারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমরা আগে যেভাবে ব্যবহার করেছি এখন তার চেয়ে অনেক বিস্তৃতভাবে স্ট্যাটিনস ওষুধটি ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
‘হার্ট আউটকামস প্রিভেনশান ইভাল্যুশান-থ্রি (এইচওপিই-থ্রি)’ নামে পরিচালিত এই গবেষণায় যেসব বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয় সেগুলো হচ্ছে, স্ট্যাটিনস ব্যবহারের প্রভাব পরীক্ষা, পৃথিবীব্যাপী বৈচিত্র্যপূর্ণ লোকজনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধের সঙ্গে কখনো কখনো রোগীর মন রাখার জন্য দেয়া ওষুধের (প্ল্যাসবো পিল) সঙ্গে স্ট্যটিনের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়গুলোর মূল্যায়ন।
এই গবেষণায় যাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাদের ধূমপান অভ্যাস, হিপের তুলনায় বৃহৎ কোমর বা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস Ñ এ ধরনের অন্তত একটি রিস্ক ফ্যাক্টর আগে থেকেই থাকার জন্য তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্তর্বর্তী ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।
অবশ্য এই গবেষণার শুরুতে কারোই হৃদরোগ আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়নি। গবেষণার জন্য লোকজনকে প্রতিদিন ক্রিস্টোর নামে পরিচিত কোলেসটেরল কমানোর ওষুধ রোসারভাস্টেইন অথবা প্ল্যাসবো পিল দেয়া হয়। অনেককে অ্যাটাস্যান্ড এবং মাইক্রোজাইড অথবা প্ল্যাসবো পিলের মিশ্রণে রক্তচাপ কমানোর যৌগ ওষুধও দেয়া হয়। এরপর তাদের সাড়ে ৫ বছর পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে কতজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অথবা স্ট্রোকে মারা গেছে তা নোট করা হয়।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, স্ট্যাটিন থেরাপি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ হ্রাস করতে সক্ষম এবং এই থেরাপি নিরাপদও।
রক্তচাপ কমানোর ওষুধ সার্বিকভাবে লোকজনের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো বড় ধরনের হৃদরোগ কমায় না। এমনকি যাদের রক্তচাপ তেমন ঊর্ধ্বমুখী নয় তাদের ক্ষেত্রেও এমনটাই দেখা গেছে। ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজির অধ্যাপক ইভা লোন বলেন, যাদের নি¤œ রক্তচাপ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কোনো সুফল নেই। এমনকি রক্তচাপ বিতরণের তৃতীয় সর্বনি¤œ স্তরে অবস্থানকারী যাদের বিপদের একটা প্রবণতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও কোনো সুফল দেখা যায় না।
গবেষণার এসব তথ্য এটাই প্রমাণ করে যে রক্তচাপ কমানোর ওষুধসমূহ তাদের ক্ষেত্রেই কার্যকর যাদের হাইপারটেনশন রয়েছে। তবে যাদের রক্তচাপ কম তাদের রক্তচাপ কমানোর ওষুধ ব্যবহারের কোনো কারণ নেই। তাদের উচিত এসব ওষুধ পরিহার করা।
অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের সাহায্য করে এবং যারা অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ওষুধ ছাড়াও স্ট্যাটিনস গ্রহণ করেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্তের হার ৪০ শতাংশ হ্রাস করে। ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির রিহ্যাবিলিটেশন সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক জ্যাকি বুশচ বলেন, এখান থেকে এই বার্তাই নিয়ে যান যে স্ট্যাটিনস নিরাপদ ও কার্যকর। কারণ কোলেসটেরল লেভেল প্রাক-চিকিৎসা অথবা প্রদাহের লেভেল চিহ্নিতকরণ নির্বিশেষে সুফল একই রকম। তিনি আরো বলেন, এই চিকিৎসা থেকে কারা সুফল পাবে সেইসব রোগীকে চিহ্নিত করতে বেসলাইন ব্লাড টেস্টেরও কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের ফলাফল সকল উপগ্রুপের জন্যই সঙ্গতিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক এই গবেষণা পরিচালনায় তহবিলের জোগান দিয়েছে কানাডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হেলথ রিসার্চ এবং পরীক্ষিত ওষুধটির প্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রা জিনিকা। স্বাধীনভাবে এই গবেষণার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছে ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির পপুলেশন হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং কানাডার হ্যামিলটন হেলথ সার্ভিসেস।
গবেষকরা বলছেন, এ ব্যাপারে আরো উন্নতির জন্য চিকিৎসার প্রভাব নিয়ে অতিরিক্ত বিশ্লেষণের জন্য তারা এই গবেষণার বিষয়গুলো নিয়ে আরো তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন। সূত্র : এএফপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন