বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

‘ওয়াক্বাবিলতু জামিয়া আহকামিহী ওয়া আরকানিহি’- এর দাবি

প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দিদার-উল আলম

শুধু নামাজ-রোজার নামই দ্বীন ইসলাম নয়, ইবাদত নয়। দ্বীন ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর আদেশ ও নিষেদের সমষ্টি। ইমাম গাযযালী (রহ.) স্বীয় গ্রন্থ আরবাঈনের (১০) দশ প্রকার ইবাদতের কথা লিখেছেন। আমরা এই প্রবন্ধে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের পরিবর্তে আংশিক দ্বীন পালন করার ও আংশিক দ্বীনের প্রচারের ব্যাপারে নজর দিব। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ১০ বিষয়ের মধ্যে কোন শিক্ষার্থী ৭, ৮ এমনকি ৯ বিষয়ে পাস করে ৩, ২ বা ১ বিষয়ে ফেল করলেও সে ফেল। কথাটি দুনিয়ার যে কোন ব্যাপারে যেমনি প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য ধর্মের ব্যাপারেও। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায় মিলে ইবাদত, আচার-আচরণ, করণীয়-বর্জনীয়, অর্থনীতি, বিচারনীতিসহ ইসলাম ধর্মের বিষয় ধরা যাক ১০টি (পবিত্র কুরআনে সফলকাম মুমিনদের গুণাবলী বর্ণনার আলোকে এটুকু বলা যায় যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০টি বিষয়ের ধারণা ইসলাম ধর্ম থেকেই নেয়া)। এর মধ্যে কেউ ৭, ৮ বা ৯ বিষয় বিশ্বাস ও পালন করেও যদি ৩, ২ বা ১ বিষয়কে উপেক্ষা করেন, অপ্রয়োজনীয় মনে করেন, এখন প্রয়োজন নয় মনে করেন, ৭, ৮ বা ৯ বিষয়ে পরিপূর্ণ দ্বীনদার হলেও তিনি ধর্মীয়ভাবে ফেল। কথাগুলো কি কথার কথা, বানানো কথা, প-িত বা বুদ্ধিজীবী সুলভ কথা, না ধর্মের কথা? মনে রাখতে হবে কথাগুলো ধর্মের আলোকেই, কুরআনে বর্ণিত বর্ণনার আলোকেই। বর্তমান মুসলিম সমাজের সাধারণ থেকে বিশেষ পর্যায়ের এমন অনেক আছেন যারা ধর্মের কিছু বিষয় পালন করে নিজেকে পাক্কা-সাচ্চা মুসলমান বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। ঈমানদারী জীবনযাপন করছেন বলে ভাবেন, ধার্মিক হওয়ার আমেজ অনুভব করেন। আবার ধর্মের কিছু বিষয়কে সমানে বর্জনও করেন, কিছু বিষয় অমান্য করাকে অপরাধও মনে করেন না, কিছু বিষয় মানুষের কাছে তুলে ধরেন, প্রচার করেন আর কিছু বিষয়ের ব্যাপারে থাকেন নিশ্চুপ, কিছু বিষয় বলার-প্রচারের প্রয়োজনই মনে করেন না, কোন কোন ক্ষেত্রে অন্য কেউ প্রচার করলে তার বিদ্ধাচরণ করতেও দ্বিধা করেন না কেউ কেউ। কিছু আমলকারী আর কিছু বর্জনকারীদের ব্যাপারে, কিছু প্রচারকারী আর কিছু প্রচারে যারা বিরত থাকেন তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান কর? তোমাদের মধ্যে (ঈমানাদার হয়েও) যারা এরূপ করে দুনিয়ার জীবনে তাদের দুর্গতি ছাড়া কোনই পথ নেই আর কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। তোমরা যা কর (কিছু বিশ্বাস করে আমল আর প্রচার কর এবং কিছু বিষয় বর্জন কর এবং প্রচারে বিরত থাক) সে সর্ম্পকে আল্লাহ বেখবর নন’ (সুরা বাকারা ৮৫ আয়াত)। ধর্মের কিছু অংশ পালন করা, গ্রহণ করা, কিছু অংশ প্রচার করা আর কিছু অংশ বর্জন করা, অনুসারীদের-ভক্তদের, সাধারণ মুসলমানদের নিকট তুলে না ধরার ব্যাপারে উক্ত আয়াতে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। উক্ত আয়াতে বর্ণিত বিষয়ের ব্যাপারে আমরা কি বিশ্বাসী? উক্ত আয়াতকে উপেক্ষা করার সুযোগ কি আছে কোন ঈমানদার মুসলমানের, আলেম-ওলামার? কুরআন-হাদিসের আলোকে ইসলামী শরিয়তের আলোকে একথা কি সুস্পষ্ট নয় যে, শরিয়াতের কিছু অংশগ্রহণ করা এবং কিছু অংশ বর্জন করা, কিছু অংশ প্রচার করা আর কিছু অংশ প্রচারে বিরত থাকা সমগ্র শরীয়াতের প্রতি অবিশ্বাসেরই নামান্তর? আমরা কি ‘ওয়াকাবিলতু জামিয়া আহকামিহী ওয়া আরকানিহী’ বলে ঈমান আনয়ন করিনি? কি স্বীকার করে নিয়েছি আমরা আংশিক, না পুরোপুরি? কুরআন-হাদিসের বর্ণিত সুস্পষ্ট আদেশ-নিষেধের মধ্যে এটুকু আমার জন্য- অনুসারীদের জন্য জরুরি আর ওটুকু এখন জরুরি নয়, এ জাতীয় চিন্তা করার-বলার, আমল করার মর্জিমত কাট-ছাট করার সুযোগ কি কোন ঈমানদার নর-নারীর আছে? আছে কোন আলেম-ওলামা-মাশায়েখের? ধর্ম-কর্ম করলেও কুরআনে কি আমরা প্রকৃতই বিশ্বাসী? শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামাগণের, বিশেষ ব্যক্তিবর্গের নিকট বিনীত প্রশ্ন, ইসবাড়ি’ বা ‘ছাড়াছাড়ির’ অথবা ‘ইফরাত’ বা ‘তফরীতের’ কোন সুযোগ আছে কি? কুরআন-হাদিসের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত, অলঙ্ঘনীয় আদেশগুলো কোন বাহানায় এড়িয়ে চলার, বর্জন করার, এড়িয়ে চলতে বা বর্জন করতে উৎসাহিত করার, এটা করলে ওটা আপনা আপনি এসে যাবে-হয়ে যাবে বলার-প্রচার করার কোন সুযোগ, অবকাশ বা অধিকার কি কারো আছে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন