স্টাফ রিপোর্টার : মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসানলয়ে হামলায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মসজিদের ঈমাম, রংপুরের কাউনিয়া মসজিদের ঈমাম, ময়মনসিংহের ভালুকায় মসজিদের মুয়াজ্জিন, পঞ্জগড়ের গৌরী মাঠের পুরহিত, রাজধানী ঢাকার রমনায় মসজিদের ঈমাম, বাড্ডার খানকায়ে পীরসহ কয়েকটি হত্যাকা-ের রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুরে মসজিদের ভেতরেই মুয়াজ্জিন হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত মুয়াজ্জিমের নাম হাজী মাওলানা বেলাল হোসেন (৫২)। সোমবার ভোরে ইসলামপুরের ঝব্বু খানম জামে মসজিদের দোতলা ও তিনতলার মাঝের সিঁড়ি থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারকালে নিহতের দুই হাত কাপড় দিয়ে বাধা এবং বুকে ও পিঠে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহৃ দেখা গেছে। বেলাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলা সদরের পূর্ব ধাসোরায়। দীর্ঘ ২৮ বছরেরও বেশি সময় তিনি ওই মসিজদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। স্থানীয়রা বলছেন, ব্যক্তি হিসেবে বেলাল হোসেন ছিলেন ধার্মিক ও সৎ ও মানুষ। কারো সাথে তার বিরোধ নেই। এদিকে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, মসজিদের অর্থনৈতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনার পর মসজিদের খতিব, ইমাম, ক্যাশিয়ারসহ কয়েকজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেনের নৃশংস হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বেলায়েত হোসেনসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ঝব্বু খানম মসজিদ। ভবনের নীচতলায় (আন্ডার গ্রাউন্ডে) ১৭টি এবং একতলায় ১৩টি দোকান ও গুদাম রয়েছে। যা ঝব্বু খানম মার্কেট নামেই পরিচিত। শুধু মসজিদে ঢোকার জন্য পূর্বপাশে একটি কলাপসিবল গেইট রয়েছে। মসজিদের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতেন মুয়াজ্জিন বেলাল।
মসজিদটির ইমাম তাইজুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত রোববার সন্ধ্যায় জিন্দাবাহার জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত তাফসিরে অংশ নেন বেলাল হোসেন। রাত সোয়া ১০টার দিকে তাফসির শেষে সেখান থেকে বের হন। পরে পাশের একটি মার্কেটে কিছু সময় টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখেন। এরপর আর তাকে দেখা যায়নি। এদিকে গতকাল ফজরের নামাজ পড়াতে যান ঝব্বু মসজিদে যান ইমাম তাইজুল ইসলাম। এ সময় তিনি মসজিদের মেইন গেট খোলা দেখতে পান। উপরে উঠতেই মসজিদের দোতালা এবং তিন তলার মাঝামাঝি সিড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় বেলাল হোসেনকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য তা মিটফোর্ড মর্গে পাঠায়।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মওদুত আহমেদ বলেন, তার বুকে তিনটি এবং পিঠ ও হাতে একটি করে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার ধারণা, মধ্য রাতে ঘরে ঢোকার আগেই মোয়াজ্জিনকে খুন করা হয়। হত্যাকা-টি সিঁড়িতেই হয়েছে, কারণ ঘটনাস্থলে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। তাছাড়া মোয়াজ্জিনের রুমটিও তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। নিহতের চোখ, গাল ও গলায় আঘাতের চিহৃ রয়েছে। লাশ দেখে স্পষ্ট ধারণা করা যায়, ছুরিকাঘাতের আগে আতœরক্ষায় ঘাতকদের সঙ্গে বেলাল হোসেনের ধস্তাধস্তি হয়েছে। পরে তার হাত কাপড় দিয়ে বেধে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। হত্যাকা-ে একাধিক ঘাতক অংশ নেয়। ঘটনাস্থল ঘুরে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মসজিদের নামে যে দোকানগুলো রয়েছে, সেগুলোর ভাড়ার টাকায় মসজিদ উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হতো। অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রীম নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক লাখ টাকা ভাড়া হিসেবে তোলা হতো। দোকানের ভাড়ার টাকা ও হিসেব-নিকেশ রাখতেন বেলাল। ওই টাকা নিয়ে কোন দ্বন্দ্বের জের ধরে বেলাল হোসেন খুন হতে পারেন।
মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল আউয়াল জানান, তিনিসহ মোট ১০ জন মার্কেটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বলেন, মার্কেট সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আমরা শুধু একতলা ও গ্রাউন্ডের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কাজ করি। মসজিদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই।
এদিকে এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ইয়াসিন বাদী হয়ে গতকাল কোতয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন (নং-২)। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ খুনিদের গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন