শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অগ্নিগর্ভ খুলনার শিল্পাঞ্চল - সড়ক ও রেলপথ ৮ ঘণ্টা অবরোধ : জনভোগান্তি চরমে

প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : খুলনার শিল্পাঞ্চল এখন অগ্নিগর্ভ। দামাল শ্রমিকরা ফুঁসে উঠেছে ক্ষোভে-বিক্ষোভে। সরকার কথা রাখেনি ৭ বছরেও। এমপি-মন্ত্রীরাও তাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করেনি। তাই ৫ দফা দাবীতে গতকাল মঙ্গলবার শ্রমিকরা অচল করে দেয় খুলনার রাজপথ-রেলপথ। এসময় হাজার হাজার পথচারী যাত্রী ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়। খুলনা যশোর মহাসড়কের নতুন রাস্তার মোড়, আটরা শিল্পাঞ্চলের আলিম জুট মিলগেট এবং নওয়াপাড়া রাজঘাট শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে যে অবরোধ পালন করে তাতে জনমানুষের ভোগান্তির অন্ত ছিল না। দীর্ঘ পথ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে যায়। রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রেল যাত্রীদেরও পড়তে হয় নিদারুণ বিপাকে। ট্রেনের সিডিউলও পরিবর্তন হয়ে যায়। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পাটকল শ্রমিকদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী এ অবরোধ পালিত হয়। একই সময় প্রতিটি মিলগেটে শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা লাগাতার আন্দোলনে থাকবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে।
সূত্রমতে, পাটখাতে প্রয়োজনী অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশোধসহ ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে খুলনাঞ্চলের ৭ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ গোটা পাটকল সেক্টর আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কঠোর আন্দোলনের ডাকসহ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে আসছিল শ্রমিকরা। এছাড়া বকেয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, মিলের উপর প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, আবারো দৈনিক মজুরি কম হওয়া এবং বন্ধ মিল-কলকারখানা সত্বর চালু না হওয়ায় খুলনার শিল্পাঞ্চলে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে। বিভিন্ন জুট মিলের শ্রমিক নেতারা বলছেন, যেকোন মুহূর্তে দাবি আদায়ের ব্যাপারে আন্দোলনের আরো কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবরোধ চলায় খুলনা-যশোর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই সময় তারা রেলপথও অবরোধ করে। এসময় দাবী আদায়ের লক্ষ্যে খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দিঘলিয়ার ষ্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলিম, ইষ্টার্ণ, নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা কর্মস্থল ত্যাগ করে রাজপথে নেমে আসে। অবরোধ চলাকালে পথসভায় বক্তৃতা করেন সিবিএ’র সভাপতি কাওসার আলী মৃধা, মো: খলিলুর রহমান, মো: নুরুল হক, আবুল কালাম জিয়া, আশরাফ হোসেন, দ্বীন ইসলাম, মো: সোহরাব হোসেন, আবু হানিফ, মিজানুর রহমান, মো: বেল্লাল মল্লিক, আব্দুল সালাম, মো: আলাউদ্দিন, হাসানউল্লাহ, হারুনুর রশীদ মল্লিক প্রমুখ।
এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, ৬টি পণ্যের মোড়কীকরণে পাটজাত দ্রব্য বাধ্যতামূলক করলেও সরকারি মিলগুলোতে উৎপাদিত এক কোটিরও বেশি বস্তা অবিক্রীত থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের ২ মাসের মজুরী বকেয়া পড়েছে। সরকার সঠিক সময় কাঁচাপাট কেনার জন্য বরাদ্দ না দেওয়ায় অর্থের সংকটে সরকারি পাটকলগুলোর উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এতে শ্রমিক কর্মচারীর পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্ব স্ব মিলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ- নন সিবিএ ঐক্য পরিষদ ডাকে সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে শ্রমিকরা।
সূত্র বলছে, দিঘলিয়ার ষ্টার জুটমিল, খালিশপুরের ক্রিসেন্ট এবং প্লাটিনাম জুট মিল চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বেসরকারি খাতে লিজ দেয়া পিপলস জুট মিলটিরও একই অবস্থা। এই মিলটিতে শ্রমিক হয়রানী, নির্যাতন ও মজুরী কম দেয়ার অভিযোগ তুলেছে শ্রমিক পক্ষ। উত্তেজনা চলছে এজ্যাক্স জুট মিলেও। সপ্তাহের মজুরী দিতে এখানেও দেরি হচ্ছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে মিলটি বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে বলেই ধারণা করছেন মিলটির মালিক পক্ষ। খানজাহান আলী থানা এলাকার আলীম জুট মিল চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। পাট কেনার টাকা না থাকায় প্রায় মিলটি বন্ধ রাখা হচ্ছে। মিল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা তাদের দৈনিক হাজিরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছ্।ে
খালিশপুর দৌলতপুর এবং খানজাহান আলী এলাকার সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে খুলনা এসে প্রথমেই বলেছিলেন আর কোন মিল কারখান বন্ধ নয়। এবার বন্ধ মিল কারখানাও চালু করা হবে। সে কথা গত ৭ বছরে বাস্তবে কোন কাজে আসেনি। এরপর সাবেক পাট মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস, শিল্প মন্ত্রী দিলিপ বড়–য়াকে নিয়ে তিনি ফের খুলনায় আসেন বন্ধ মিলগুলো কিভাবে চালু করা যায় তার উপায় খুঁজতে। সরকারের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী একযোগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তারা এখানে এসেছেন। বন্ধ মিল চালু করার ব্যাপারে তিন মন্ত্রীর আশ্বাস খুলনাবাসীকে শুধু কষ্টই দিয়েছে। যে কারণে কর্তৃপক্ষ সজাগ না হলে যেকোন মুহূর্তে শিল্পাঞ্চল অতীতের মত অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন