রফিক মুহাম্মদ : আস্থাভাজন, সৎ এবং দেশপ্রেমিক নেতার সন্ধান করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। আদর্শবান-মেধাবী নেতার সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে একটি সুসংগঠিত আন্দোলনমুখী দল করতে চান তিনি। সে লক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন গত দু’সপ্তাহ যাবৎ সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন। এছাড়া এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আদর্শের বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নেতাদের সাথেও পরামর্শ করছেন। বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ সকল রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ত্যাগী, আদর্শবান এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করলে বিএনপিতে এক নবজাগরণ সৃষ্টি হবে। বিএনপির শুভানুধ্যায়ীসহ দেশের সাধারণ মানুষও এমন প্রত্যাশা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, সাংগঠনিকভাবে বিএনপিকে কার্যকর করতে হলে সৎ, যোগ্য, ত্যাগী নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দিতে হবে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপার্সন এ বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। মহাসচিব এবং অন্য দুটি পদে যাদের নির্বাচিত করেছেন তাতে তাই প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া বিগত সময়ের ব্যর্থতার কারণগুলো পর্যালোচনা করে তার আলোকে পদক্ষেপ নেবেন এমনটাই সবার প্রত্যাশা।
গত ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর গত ৩০ মার্চ দলের অপর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদের ঘোষণা দেয়া হয়। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপির মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং কোষাধ্যক্ষ পদে পুনরায় মিজানুর রহমান সিনহার নাম ঘোষণা করা হয়। কাউন্সিলের ১২ দিন পর যে তিনজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তারা আস্থাভাজন, সৎ এবং আদর্শবান নেতা হিসেবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য। তাদেরকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেয়ায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও প্রশংসা করেছেন এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ তিনজন আদর্শবান মেধাবী নেতার মতো দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতাদের দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত করা হলে বিএনপিতে নবজাগরণের সৃষ্টি হবে বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শরিফুল আলম বলেন, সৎ, যোগ্য এবং আদর্শবান নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব, রহুল কবীর রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং মিজানুর রহমান সিনহাকে দলের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা খুশি। এজন্য চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আন্তরিক অভিনন্দন। কমিটির অন্যান্য পদে সৎ, যোগ্য, ত্যাগী নেতাদের নির্বাচিত করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যারা দলের দুর্দিনে ছিলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, তাদের সঠিক মূল্যায়ন করলে দল পুনরায় চাঙ্গা হবে। আমাদের প্রত্যাশা এবার সৎ এবং ত্যাগী নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।
বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবার কয়েকটি ধাপে ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে দলের স্থায়ী কমিটি, দ্বিতীয় ধাপে উপদেষ্টা পরিষদ, এরপর পর্যায়ক্রমে ভাইস-চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অন্যান্য সম্পাদকীয় পদের ঘোষণা দেয়া হবে। এতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে মাস দেড়েক সময় লাগবে বলে নেতাদের ধারণা। একটি সুসংগঠিত আন্দোলনমুখী দল গঠন করতে দলের চেয়ারপার্সন নিজে পরীক্ষিত, ত্যাগী এবং সৎ নেতাদের বাছাই করে বিভিন্ন পদে নির্বাচিত করবেন। সে লক্ষ্যে তিনি সরাসরি এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছেন। দলের সিনিয়র নেতাসহ বিভিন্ন মহলের সাথে পরামর্শ করছেন। সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের সৎ এবং ত্যাগী নেতাদের খুঁজে বের করে এবার দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হবে। তাদের নেতৃত্বে আগামী দিনে একটি কার্যকর গণআন্দোলন গড়ে উঠবে নেতারা এমনটাই দাবি করছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দলের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলের সর্বস্তরে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে। আর সে বার্তা হচ্ছে সৎ যোগ্য এবং ত্যাগী নেতাদের এবার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। একটি আন্দোলনমুখী দল গঠন করতে দলের দুঃসময়ে যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, দলের প্রতি যাদের দৃঢ় আনুগত্য রয়েছে, তাদেরকে এবার অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে। আমাদের নেত্রী সে পথেই অগ্রসর হচ্ছেন। তিনি যাচাই বাছাই করে কয়েক ধাপে কমিটি ঘোষনা করবেন। তার প্রতি আমাদের আস্থা এবং বিশ্বাস রয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন জানান, নেতা নির্বাচনে সততা, দেশপ্রেম এবং দলের প্রতি আনুগত্যকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা কি ছিল সে বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। আন্দোলনের সময় অনেকে মিছিলে না গিয়েও মোবাইলে স্লোগান শুনিয়ে বলেছেন মিছিল করছেন। আবার অনেকে টিভি ক্যামেরা ডেকে তাদের সামনে কয়েকজন মিলে সামন্য মিছিল করেছেন। অনেকে আবার নিরাপদে থাকার জন্য এবং নেত্রীর নজরে পড়তে পুলিশকে টাকা দিয়ে নিজে গ্রেফতার হয়ে জেলে গেছেন। এসব বিষয়ও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া এর আগে বিএনপি ক্ষমতা থাকা কালে যে সব নেতারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অনেকে বহু প্লট, ফ্ল্যাট, গার্মেন্টস-ইন্ডাস্ট্রির মালিক হয়েছেন, যাদের কারণে দুর্নীতির তকমা নিতে হয়েছে সে সব নেতাদের বিষয়েও বিচার বিশ্লেষন হচ্ছে। অনেকে আছেন দলের বা দেশের স্বার্থে নয় নিজের স্বার্থে দলে আছেন, দল ক্ষমতায় গেলে লুটেপুটে টাকা কামাই করবেন। এসব নেতাদের ব্যাপারেও সতর্ক পদক্ষেপ থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন