শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভ্যাপসা গরম ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন দুর্বিষহ

প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : বৃষ্টির অভাবের সাথে তাপমাত্রার পারদ ওঠানামায় ভ্যাপসা গরমের পাশাপাশি লাগামহীন বিদ্যুৎ সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন ক্রমে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। গত মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩৫% কম বৃষ্টিপাতের মধ্যে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করলেও চলতি মাসেও আবহাওয়া বিভাগ দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। কিন্তু এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেও দক্ষিণাঞ্চলে কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা না মিললেও প্রায় প্রতিদিনই মেঘের গর্জনের সাথে আকাশে মেঘের আনাগোনা আছে। তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের ওপরে রয়েছে। মার্চ মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ৩২.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেখানে তা ৩৫ ডিগ্রী অতিক্রম করে। ফলে বরিশাল অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পরিমাণ ৩৩.৪ ডিগ্রীতে থাকার কথা থাকলেও গতকাল তা ছিল প্রায় ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে।
এমনকি গত ১ এপ্রিল বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে থাকলেও গতকাল তা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে পীঠে ওঠানামা করে। এর সাথে লাগামহীন বিদ্যুৎ সংকটে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রায় দেড়শ’ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে সরবরাহ ১শ’ মেগাওয়াটেরও কম। চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে। কিন্তু প্রথম সপ্তাহ জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে ৩২ মিলিমিটারের মত। তবে চলতি মাসে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অন্যত্র ৪-৫ দিন হালকা থেকে মাঝারী কালবৈশাখী বা বজ্রঝড়ের আশংকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
গত ১ এপ্রিল উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার প্রভাবে সাগরের ঐ এলাকাসহ সংলগ্ন দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং পায়রাসহ সবক’টি সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার আশংকার কথা জানায় আবহাওয়া বিভাগ। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবক’টি নদী বন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেতের আওতায় আনার ফলে নদ-নদীসমূহে অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। পায়রাসহ দেশের সবক’টি সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতেও বলা হয়। এমনকি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলেও পরামর্শ দেয় আবহাওয়া বিভাগ।
কিন্তু ১ এপ্রিল দশমিক ৭ মিলিমিটার ও ২ এপ্রিল ৩১.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে দক্ষিণাঞ্চলে আর কোন বৃষ্টির দেখা নেই। তবে ঘাটতির মধ্যেও ১ ও ২ এপ্রিল যথাক্রমে ২৫ কিলোমিটার ও ১০ কিলোমিটার বেগের দমকা হাওয়াতেই বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকাতেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ল-ভ- হয়ে যায়।
১৫ মিনিট থেকে আধ ঘণ্টার দমকা হাওয়াতে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা পুনর্বাসনে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগছে।
সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। বৃষ্টির অভাবে এবছর রবি ফসলের উৎপাদনে সংকট বাড়ছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে গম ও তরমুজের আবাদ হলেও বৃষ্টির অভাবে এ দু’টি ফসলের উৎপাদন কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছেনি। আবহাওয়া বিভাগের মতে মার্চ মাসে দেশের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা যথাক্রমে ১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও ১.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী ছিল। আজ সকালের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দিনের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধিসহ চলতি মাসে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩৬-৩৮ সেলসিয়াসের মৃদু অথবা ৩৮-৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মাঝারী তাপপ্রবাহ বয়ে যাবার সম্ভবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া বিভাগের গতকালের বুলেটিনে ‘পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে’ বলে জানিয়ে ‘তার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে’ বলে বলা হয়েছে। ‘মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে’ বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনার কথা বলতে পারেনি আবহাওয়া বিভাগ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন